স্টাফ রিপোর্টার : উদ্বেগ-আতঙ্ক নিয়ে শেষ হচ্ছে পৌর নির্বাচনের প্রচারণা। আজ রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে ভোটের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন। এই প্রথম দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায়ও ছিল ভিন্ন মাত্রা। নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষও হয়েছে ব্যাপকহারে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতিনিয়তই সংঘর্ষ হচ্ছে। এ ছাড়া দল সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। যদিও এ দাবি আগেই নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আজ সকাল থেকে বিজিবি মোতায়েন করছে ইসি। এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় দুই এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তিন থানার ওসি ও একজন রিটার্নিং অফিসারকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
২২৯ পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েনঃ পৌরসভা নির্বাচনে ২২৯টি পৌরসভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব সামশুল আমল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানের কাছে পাঠানো হয়েছে। ২৮শে ডিসেম্বর থেকে ৩১শে ডিসেম্বর এসব পৌরসভায় চার দিনের জন্য মোট ১০২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে উপকূলীয় ছয়টি পৌরসভায় কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ ও র্যাব সদস্যও মোতায়েন থাকবে। এদিকে নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ফোর্স রেখে রোববার পরিপত্র জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে পাঁচজন (অস্ত্রসহ) ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কমপক্ষে ছয়জন (অস্ত্রসহ) পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, উপকূলীয় ছয়টি পৌরসভা (মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, পাথরঘাটা, রামগতি, সন্দ্বীপ ও হাতিয়া) ছাড়া বাকি ২২৯টি পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হযেছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ভোটার সংখ্যা ১ লাখের অধিক হলে ২ প্লাটুন এবং যেসব এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৫০ হাজারের অধিক সেখানে এক প্লাটুনের বেশি মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া ১০ হাজার ভোটার হলে এক প্লাটুনের কম বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহসীন রেজা। আগামী ৩০শে ডিসেম্বর ২৩৩টি পৌরসভায় একযোগে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ শেষ হবে বিকাল ৪টায়।
দুই এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ, তিন ওসি প্রত্যাহারঃ আসন্ন পৌর নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় আচরণবিধি প্রতিপালন না করায় দুই এমপিকে সতর্ক করে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা হলেন বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও বরগুনা-১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভু। রোববার বিকালে ইসির ব্যবস্থাপনা শাখা ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম জানান, দুই এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগেও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে শোকজ করে ইসি। এদিকে পুলিশের মহা পরিদর্শককে (আইজিপি) পাঠানো অপর এক চিঠিতে তিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম জানান, ৩০শে ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান, নোয়াখালীর হাতিয়া থানার ওসি মো. নুরুল হুদা ও ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি বোরহানউদ্দিনকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে ২৫শে ডিসেম্বর সাতকানিয়া থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকারকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া মাদারীপুরের কালকিনি, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ওসিকেও প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয় ইসি।
হঠাৎ পুলিশে বদলি: এদিকে সারা দেশে পুলিশের ৩৫৮ জন এএসআই ও ২৫জন কনস্টেবলকে পদোন্নতি দিয়ে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল এ সংক্রান্ত্র একটি চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচন কমিশনের সম্মতি চাওয়া হয়। কমিশন সম্মতি দিলেও তা নিয়ে আপত্তি তোলে ইসি কর্মকর্তারা। ইসি সূত্র বলছে, বদলির জন্য সম্মতি চাওয়া তালিকার মধ্যে অনেকেই রয়েছেন পৌরসভা নির্বাচনী এলকায়।
রিটার্নিং অফিসারদের বিশেষ নির্দেশনা: পৌর নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে রিটার্নিং অফিসারদের বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নির্বাচনে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে বিষয়টি কড়া নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে যাতে সহিংসতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কঠোর হস্তে দমন করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
উত্তরবঙ্গে বিশেষ সতর্কতা: ভোটের পূর্বমুহূর্তে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিশেষ দৃষ্টি রেখে প্রয়োজনে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে ইসি। গোয়েন্দা সংস্থার আশঙ্কার ভিত্তিতে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ভোটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছে কমিশন। নির্বাচনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালও বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে বলে ইসির উপসচিব সামসুল আলম জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় রয়েছে, সামপ্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়টি বিবেচনা করে বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিভিন্ন সমাবেশ, পথসভা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। জঙ্গি তৎপরতা রোধে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও তৎপরত হতে হবে। সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট প্রদান ও নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে বহিরাগতদের সমাগম বন্ধে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয় ইসির সমন্বয় সভায় পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি জঙ্গি হামলার বিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থি ভালও থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে- এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য থ্রেট হলো সামপ্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে জঙ্গি হামলার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ কর্মকর্তা জানান, ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে স্থানীয় পর্যায়ে ততই উত্তেজনা বাড়বে ও কিছু ক্ষেত্রে সমস্যারও সৃষ্টি হবে।
আগের রাতে কেন্দ্র দখলের বিষয়ে সতর্কতা: ভোটের আগের রাতে আগের মতো যাতে কেন্দ্র দখল না হয় সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি আইনশৃঙ্খলা সভার কার্যবিবরণীতে বলেছেন, অতীতে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। এতে সময় ও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি আমাদের ব্যর্থতা। এবার যাতে ভোটের আগের রাতে কেন্দ্র দখল না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন তিনি।
বহিরাগতদের অবস্থান ও বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ: ২৮শে ডিসেম্বর সোমবার রাত ১২টার আগেই বহিরাগতদের (যারা ভোটার বা বাসিন্দা নন) নির্বাচনী এলাকা ত্যাগে নির্দেশ দেয়া হয়েছে একটি পরিপত্রে। এ ছাড়া ভোটের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী আরও চার দিন পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা যাতে অস্ত্রসহ চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বৈধ লাইসেন্সধারীদের সবধরনের অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের গ্রেপ্তার ও ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও পুলিশকে বলা হয়েছে।
৪৮ ঘণ্টা যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা: নির্বাচনী এলাকায় ভোটের আগের রাত থেকে শুরু করে মোট ৪৮ ঘণ্টা যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে ২৯শে ডিসেম্বর রাত ১২টা (দিবাগত মধ্যরাত) থেকে ৩০শে ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ইতিমধ্যে এ নির্দেশনা জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এসব পৌরসভায় বেবি ট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, ্পিক আপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পোতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় ২৭শে ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ভোর ছয়টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইসি ও রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারী, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরি পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে।
২২৯ পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েনঃ পৌরসভা নির্বাচনে ২২৯টি পৌরসভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব সামশুল আমল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানের কাছে পাঠানো হয়েছে। ২৮শে ডিসেম্বর থেকে ৩১শে ডিসেম্বর এসব পৌরসভায় চার দিনের জন্য মোট ১০২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে উপকূলীয় ছয়টি পৌরসভায় কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ ও র্যাব সদস্যও মোতায়েন থাকবে। এদিকে নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ফোর্স রেখে রোববার পরিপত্র জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে পাঁচজন (অস্ত্রসহ) ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কমপক্ষে ছয়জন (অস্ত্রসহ) পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, উপকূলীয় ছয়টি পৌরসভা (মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, পাথরঘাটা, রামগতি, সন্দ্বীপ ও হাতিয়া) ছাড়া বাকি ২২৯টি পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হযেছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ভোটার সংখ্যা ১ লাখের অধিক হলে ২ প্লাটুন এবং যেসব এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৫০ হাজারের অধিক সেখানে এক প্লাটুনের বেশি মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া ১০ হাজার ভোটার হলে এক প্লাটুনের কম বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহসীন রেজা। আগামী ৩০শে ডিসেম্বর ২৩৩টি পৌরসভায় একযোগে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ শেষ হবে বিকাল ৪টায়।
দুই এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ, তিন ওসি প্রত্যাহারঃ আসন্ন পৌর নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় আচরণবিধি প্রতিপালন না করায় দুই এমপিকে সতর্ক করে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা হলেন বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও বরগুনা-১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভু। রোববার বিকালে ইসির ব্যবস্থাপনা শাখা ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম জানান, দুই এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগেও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে শোকজ করে ইসি। এদিকে পুলিশের মহা পরিদর্শককে (আইজিপি) পাঠানো অপর এক চিঠিতে তিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম জানান, ৩০শে ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান, নোয়াখালীর হাতিয়া থানার ওসি মো. নুরুল হুদা ও ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি বোরহানউদ্দিনকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে ২৫শে ডিসেম্বর সাতকানিয়া থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকারকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া মাদারীপুরের কালকিনি, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ওসিকেও প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয় ইসি।
হঠাৎ পুলিশে বদলি: এদিকে সারা দেশে পুলিশের ৩৫৮ জন এএসআই ও ২৫জন কনস্টেবলকে পদোন্নতি দিয়ে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল এ সংক্রান্ত্র একটি চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচন কমিশনের সম্মতি চাওয়া হয়। কমিশন সম্মতি দিলেও তা নিয়ে আপত্তি তোলে ইসি কর্মকর্তারা। ইসি সূত্র বলছে, বদলির জন্য সম্মতি চাওয়া তালিকার মধ্যে অনেকেই রয়েছেন পৌরসভা নির্বাচনী এলকায়।
রিটার্নিং অফিসারদের বিশেষ নির্দেশনা: পৌর নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে রিটার্নিং অফিসারদের বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নির্বাচনে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে বিষয়টি কড়া নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে যাতে সহিংসতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কঠোর হস্তে দমন করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
উত্তরবঙ্গে বিশেষ সতর্কতা: ভোটের পূর্বমুহূর্তে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিশেষ দৃষ্টি রেখে প্রয়োজনে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে ইসি। গোয়েন্দা সংস্থার আশঙ্কার ভিত্তিতে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ভোটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছে কমিশন। নির্বাচনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালও বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে বলে ইসির উপসচিব সামসুল আলম জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় রয়েছে, সামপ্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়টি বিবেচনা করে বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিভিন্ন সমাবেশ, পথসভা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। জঙ্গি তৎপরতা রোধে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও তৎপরত হতে হবে। সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট প্রদান ও নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে বহিরাগতদের সমাগম বন্ধে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয় ইসির সমন্বয় সভায় পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি জঙ্গি হামলার বিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থি ভালও থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে- এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য থ্রেট হলো সামপ্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে জঙ্গি হামলার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ কর্মকর্তা জানান, ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে স্থানীয় পর্যায়ে ততই উত্তেজনা বাড়বে ও কিছু ক্ষেত্রে সমস্যারও সৃষ্টি হবে।
আগের রাতে কেন্দ্র দখলের বিষয়ে সতর্কতা: ভোটের আগের রাতে আগের মতো যাতে কেন্দ্র দখল না হয় সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি আইনশৃঙ্খলা সভার কার্যবিবরণীতে বলেছেন, অতীতে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। এতে সময় ও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি আমাদের ব্যর্থতা। এবার যাতে ভোটের আগের রাতে কেন্দ্র দখল না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন তিনি।
বহিরাগতদের অবস্থান ও বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ: ২৮শে ডিসেম্বর সোমবার রাত ১২টার আগেই বহিরাগতদের (যারা ভোটার বা বাসিন্দা নন) নির্বাচনী এলাকা ত্যাগে নির্দেশ দেয়া হয়েছে একটি পরিপত্রে। এ ছাড়া ভোটের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী আরও চার দিন পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা যাতে অস্ত্রসহ চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বৈধ লাইসেন্সধারীদের সবধরনের অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের গ্রেপ্তার ও ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও পুলিশকে বলা হয়েছে।
৪৮ ঘণ্টা যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা: নির্বাচনী এলাকায় ভোটের আগের রাত থেকে শুরু করে মোট ৪৮ ঘণ্টা যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে ২৯শে ডিসেম্বর রাত ১২টা (দিবাগত মধ্যরাত) থেকে ৩০শে ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ইতিমধ্যে এ নির্দেশনা জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এসব পৌরসভায় বেবি ট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, ্পিক আপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পোতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় ২৭শে ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ভোর ছয়টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইসি ও রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারী, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরি পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে।
