জয়চন্ডী ইউপিতে নির্বাচনী হাওয়া

জয়চন্ডী ইউপিতে নির্বাচনী হাওয়া
আব্দুল আহাদঃ কুলাউড়া উপজেলার বৃহৎ জয়চন্ডী ইউনিয়নের আগ্রহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সরকারী সিদ্ধান্ত শোনার পর কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাথে তাল মিলিয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন  । রঙ্গিন রঙ্গিন বিলবোর্ড শুভা পাচ্ছে ইউনিয়নের হাঁট-বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা উঠান বৈঠকসহ নানা কলাকৌশলে কুশল বিনিময় করে নজর কাড়ছেন ভোটারদের। প্রায় ৩ মাস পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ঘরে বসে নেই জয়চন্ডী ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৯টি ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে হাঁট-বাজার ও গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানগুলোতে চায়ের চুমুকের সাথে সাথে চলছে নানা ধরনের বাক-বিতন্ডা। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কেউ বলছেন অমুক পাবে তো কেউ বলছেন না হমুক। 1এভাবেই কাঁক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত সরগরম থাকে গ্রামীণ চা-স্টলগুলো। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্টলে বসা লোকদের সাথে চা-পান করে কুশল বিনিময় ও দোয়া চেয়ে নিচ্ছেন। তাতে বেজায় খুশি স্টল মালিকেরাও। একদিকে বেড়েছে চা-স্টলের বেঁচাকেনা অন্যদিকে বাড়তে শুরু করেছে ভোটারদের কদর। জানা যায়, জয়চন্ডী ইউপিতে আওয়ামী লীগে সমর্থিত একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় জোর গ্রুপিং লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। মসজিদ মাদ্রাসায় দান করার পাশাপাশি বিচার বৈঠকেও উপস্থিত হচ্ছেন নিয়মিত। হরেক রকমের খেলাধুলায় প্রাইজ ও প্রাইজমানীসহ শরিক হচ্ছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। ছাড়ছেন কথার ফুলঝুড়ি। জানাযা, শিরনি, বিবাহনুষ্ঠানসহ যে কোন ঘরোয়া উৎসবেও প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষনীয়। এবারের নির্বাচনে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্র নেতা কমর উদ্দিন আহমদ কমরু। তিনি গত দু’টি নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এবারও তিনি নির্বাচন করবেন এবং বিজয়ী হবেন বলে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, যেহেতু জয়চন্ডী ইউনিয়ন বাগান অধ্যুশিত এলাকা, আমি দু’বার দায়িত্বে থাকাবস্থায় এলাকার বাগান-বস্তি সর্বস্থরের মানুষকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জানিনা আমি কতটুকু পেরেছি, যদি আমি আসলেই মানুষের জন্য কিছু করে থাকি তাহলে এলাকার জনগন আমাকে নিরাশ করবেন না। কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফারুক আহমদ। তিনি গত নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন। এবার তিনি আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনীত প্রার্থী হবেন বলে আশাবাদি। ১৯৯৭ হতে ২০০৩ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি জয়চন্ডী ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় জয়চন্ডীর ইউপির সর্বাধিক উন্নয়ন হয়েছিল। তাই আমি এবার দলীয় মনোনীত প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হব, ইনশাআল্লাহ। জয়চন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাজী মো. আব্দুল মতলিব। আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন-প্রত্যাশী। তিনি বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় আমি সুখে দু:খে সকলের পাশে ছিলাম এবং একইভাবে এখনও এলাকার সর্বস্থরের মানুষের পাশে আছি। আগামীতে যতদিন বাচবো সবার পাশে থেকেই কাজ করে যাবো। ঢাকা মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের পরিচালক, জয়চন্ডীর ইউপির কামারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রব মাহবুব। হেভিয়েট প্রার্থী হিসাবে এলাকায় যার নাম ডাক। তিনি গত নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার তিনি আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, জনগনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জয়চন্ডীকে একটি মডেল ইউনিয়ন হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সদস্য, সফল ব্যবসায়ী আবু মোহাম্মদ। জয়চন্ডী ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনিত প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, দল আমাকে মনোনিত করলে আমি প্রতিদ্বন্ধিতা করব। দলের সিন্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু করব না। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি যার প্রচারনার বোর্ড চোখে ভাসে তিনি হচ্ছেন রংগীরকুল গ্রামের বাসিন্দা কাতার প্রবাসী হাজী আব্দুল জলিল। তারুন্যের অহংকার এই স্লোগান নিয়ে তিনি এবার জয়চন্ডী ইউপি থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রথম নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, জনসেবাকে ইবাদত মনে করে সমাজের দু:স্থ, গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে সুন্দর সমাজ বিনির্মান করতে চাই। গত নির্বাচনে বাঘ প্রতীক নিয়ে যিনি ছিলেন মানুষের মুখে মুখে তিনি হচ্ছেন অরবিন্দু ঘোষ বিন্দু। তিনি বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির রয়েছেন। তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল থেকে মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করবেন বলে তিনি জানান। এদিকে তরুন ব্যবসায়ী মামুন আহমদ প্রথম বারের মতো জয়চন্ডী ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, তরুণ সমাজকে নিয়ে জয়চন্ডীকে একটি ডিজিটাল ইউনিয়ন হিসাবে গড়ে তুলতে চান। কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির (একাংশ) দপ্তর সম্পাদক মো. মইনুল হক বকুল আগামী ইউপি নির্বাচনে প্রথম বারের মত প্রার্থী হচ্ছেন । তিনি বিএনপির (একাংশের) প্রার্থী হিসাবে ইতিমধ্যে প্রচারপ্রচারনা শুরু করেছেন। তিনি আশাবাদী ইউপি নির্বাচনে দল (বিএনপি) তাকেই মনোনয়ন দিবে। এদিকে একই অংশের জয়চন্ডী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ তিনিও বিএনপির মনোনিত প্রার্থী হিসাবে ইতিমধ্যে প্রচারনা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, দলের বাইরে গিয়ে কিছু করব না। দল আমাকে মনোনয়ন না দিলে আমি প্রার্থী হব না। অন্যদিকে প্রচার প্রচারনায় পিছিয়ে নেই ওয়ার্ড সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যগন। মেম্বার পদে অর্ধশতাধিক ও মহিলা মেম্বার পদে ১০ থেকে ১২জন সক্রিয় প্রচার চালাচ্ছেন। তারাও নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠকসহ হেঁটে হেটে কুশল বিনিময় করে জনগনের খোজখবর নিচ্ছেন। 

জয়চন্ডীর ৯টি সাধারণ (মেম্বার পদে)ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন-
  • ১নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য হাজী মো. ছখাওয়াত আলী, আজিজ উদ্দিন লবিক, সেভেজ আলী, আলিম আহমদ, হানিফা মিয়া, বিপুল দাস, নন্দু দাস, মাতাব মিয়া, নজরুল ইসলাম ও বিমেলেন্দু রায় চৌধুরী শিবু।
  • ২নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য আমির আলী কালাই, সাবেক সদস্য চেরাগ আলী, আলাল আহমদ, জাহাঙ্গির আলম, দুলাল আহমদ রাজু, সম্ভু লাল চন্দ, আব্দুল আহাদ ও ছুটই মিয়া।
  • ৩নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য বিমলেন্দু শেখর দাস ও অজয় বিশ্বাস।
  • ৪নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য হোসেন রাজা তালুকদার, সাবেক সদস্য আব্দুস ছালাম চৌধুরী মাসুক, আব্দুস সালাম, মো. তজমুল আলী, শামীম আহমদ ও শুধাংশু।
  • ৫নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য সুভাষ গোয়ালা, তরুন ব্যবসায়ী মনির আহমদ, অজিত গোয়ালা, শংকর উরাং ও মুকুল বুনার্জী।
  • ৬নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য মনু মিয়া, সাবেক সদস্য দুদু মিয়া ও সত্যবান উরাং।
  • ৭নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য লুৎফুর রহমান মেহের, সাবেক সদস্য দয়াময় বর্ধন ও ব্যবসায়ী আজমল আলী।
  • ৮নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য আব্দুস সহিদ, আব্দুল খালিক, আব্দুল লতিফ কলা, নুর উদ্দিন, জুনেদ মিয়া ও দিপক বৈদ্য।
  • ৯নং ওয়ার্ড- বর্তমান সদস্য মো. রমজান আলী, সাবেক সদস্য আউয়াল মিয়া ও টিপু মিয়া।
সংরক্ষিত আসন-
  • ১ নং আসন: (১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড) বর্তমান সদস্য আলতী রানী বিশ্বাস, কমলা বেগম, নাদেরা খানম।
  • ২ নং আসন: (৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড) বর্তমান সদস্য সাবিত্রী রাজভর, কবিতা বৈদ্য, গীতা কৈরী।
  • ৩ নং আসন: (৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড) বর্তমান সদস্য লায়লা বেগম, সাবেক সদস্যা কমলা বেগম, দিলারা বেগম।

Post a Comment

Previous Post Next Post