তাহিরপুরের হাওড়গুলোতে অতিথি পাখির মেলা

তাহিরপুরের হাওড়গুলোতে অতিথি পাখির মেলা
সুনামগঞ্জ: জেলার তাহিরপুর উপজেলার মাছ ও অতিথি পাখির অভয়াশ্রম এবং মাদার ফিসারিজ খ্যাত সীমান্ত ঘের্ষা টাংগুয়ার হাওড়সহ আশ-পাশের বিভিন্ন হাওড়গুলোতে শীত আসায় অতিথি পাখির মেলা বসেছে। এখন অল্প সংখ্যক আসা অতিথি পাখি শিকারে ও পাখি ধরার সরমঞ্জাম তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে স্থানীয় শিকারিরা। অতিথি পাখির নিরাপদ আবাসস্থল টাংগুয়ার হাওড়সহ বিভিন্ন হাওড়ে বিশ টোব, ফাঁদ ও জাল দিয়ে অতিথি পাখি নিধনের মহোৎসব চলে প্রতি বছরই। এর ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরও অতিথি পাখি কম আসবে ধারনা করছেন স্থানীয়রা। অতিথি পাখি শীত মৌসুমে শীতের তীব্রতা থেকে নিজের জীবন রক্ষা করার জন্য ও খাদ্যের সন্ধানে সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলীয়, নেপালসহ শীত প্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসে। মৌলভী হাঁস, লেঞ্জা, বালি হাঁস, সরালীসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখির কলধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে শীত মৌসুমে প্রতি বছর টাংগুয়ার হাওড়, শনির হাওড়, মাটিয়ান হাওড়সহ উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওড়। নিজ দেশ থেকে বাঁচার তাগিদে এ দেশে এসেও শিকারিদের কারণে নিজেদের জীবন রক্ষা করতে পারছে না অতিথি পাখিরা। শিকারিরা বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের শিকার করছে হাওড় থেকে আর সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করছে উপজেলার সীমান্তের বিভিন্ন হাট-বাজারে। হাওড় পাড়ের কৃষকগণ জানান, আগে রাত জেগে পাখিদের কবল থেকে হাওড়ের ফসল রক্ষা করার জন্য পাহারা দিতে হত। এখন রাত জেগে পাহারা দিতে হয় না। শিকারদের অত্যাচারে পাখিরা তাদের নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত থাকে। স্থানীয় হাওড় পাড়ের বাসিন্দারা জানান, অসাধু পাখি শিকারিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, আনসার ও অন্যান্যদের সাথে টাকার বিনিময়ে সারারাত জেগে ফাঁদ পেতে মাছ ও পাখি শিকার করে। আর সেই পাখি শিকার করে তারা বিক্রি করে উপজেলা সদর, সীমান্তের বিভিন্ন হাট বাজারে। তাহিরপুরের হাওড় পাড়ের রঙ্গছি, মন্দিয়াতা, গোলাবাড়ি, রামসিংহপুর, বাগলী, চারাগাঁও, রতনশ্রী, কলাগাঁও, শ্রীপুর, লামাগাঁও, পণ্ডুব, সোলায়মানপুরসহ হাওড় পাড়ের বাজারে প্রতিটি গ্রামের শিকারিরা গ্রামের চায়ের দোকানে ২ থেকে ৩টি পাখি রেখে দেয়। এগুলো দেখিয়ে দাম-দর ঠিক করে। অনেক সময় প্রকাশ্যেই বিক্রি করে শিকারিরা। বর্তমানে ১ হাজার ১শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা ধরে এক জোড়া (২টি) বালি হাঁস বিক্রি হচ্ছে। টাংগুয়ার হাওড়ে দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন দাস জানান, হাওড়ে কেউ কোনো ধরণের অতিথি পাখি শিকার করতে না পারে এবার সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। টেকেরঘাট থেকে টাংগুয়ার হাওড়ে যেতে ১ ঘন্টা সময় লাগে যার জন্য আমরা কোনো অভিযান পরিচালিত করার আগে শিকারিরা খবর পেয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা করব অতিথি পাখির নিরাপত্তার জন্য। আর কোনো আনসার সদস্য যদি শিকারিদের সহযোগিতা করে তার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, আগে হাওড়ে অতিথি পাখি নিধন কঠোর হস্তে দমন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা করা হবে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, অতিথি পাখি আমাদের সম্পদ। হাওড়ে অতিথি পাখি শিকারি ও সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post