বিদেশি হত্যায় দেড়শ’ গোয়েন্দা মাঠে

বিদেশি হত্যায় দেড়শ’ গোয়েন্দা মাঠে
বিদেশি হত্যায় দেড়শ’ গোয়েন্দা মাঠে
নিউজ ডেস্কঃ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২ বিদেশি নাগরিককে হত্যার ঘটনায় খুনি ও মোটিভ শনাক্তে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার দেড় শতাধিক সদস্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এতে কেউ আঁকছেন সম্ভাব্য খুনিদের স্কেচ। কোনো দল আবার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছেন। অনেকে অন্যান্য প্রযুক্তিগত তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত। ঘটনার আগে-পরের গুলশান এলাকার অন্তত ৫ হাজার মোবাইল ফোনের রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে।পাশাপাশি অপরাধী গ্রেফতারে প্রথাসিদ্ধ তদন্তও চলছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে মরিয়া পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, এনএসআই, এসবিসহ সরকারের আরও অনেক প্রভাবশালী সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ২ বিদেশির খুনিদের শনাক্ত করার বিষয়টি তাদের সক্ষমতার কঠিন পরীক্ষা বলে মনে করছে। এহেন পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে ডিএমপি সদর দপ্তরে ২ ঘণ্টাব্যাপী জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার থেকে তদূর্ধ্ব সব শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিদেশিদের হত্যার ব্যাপারে জড়িতদের খুঁজে বের করতে বেশকিছু জরুরি দিকনির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানা গেছে।র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২টি হত্যার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। হত্যার মোটিভ একই। দুটি জায়গায় মোটরসাইকেলে খুন করে ৩ দুর্বৃত্ত পালিয়ে যায়। অতীতে যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিল তারাই নতুন কৌশলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে।তাভেলা হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির এডিসি (উত্তর) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, গুলশান ও রংপুরে একই ধরনের ৭.৬৫ বোরের গুলি ব্যবহার করেছে খুনিরা। ২ ঘটনার নেপথ্যে একই গ্রুপ হতে পারে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে বড় ধরনের ক্লুহীন হত্যারহস্য ডিবির তদন্তে আলোর মুখ দেখেছে। ২০১২ সালের ৫ মার্চ গুলশান এক নম্বরে গুলিতে নিহত সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলির খুনিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। এবার ২ বিদেশির খুনিদের শনাক্তের ব্যাপারেও তারা আশাবাদী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের শতাধিক নেতাকে। হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে ডিবির ১১ সদস্যের কমিটি ছাড়াও পুলিশ সদর দপ্তর যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে আরেকটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাপানের নাগরিক হোশি কোনিওকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রংপুরের ডিআইজিকে প্রধান করে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছে। তাভেলা হত্যার ঘটনায় র‌্যাব-১-এর ৫টি টিমে ৫০ জন গোয়েন্দা সদস্য মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরাও ২ খুনের ঘটনায় মাঠে কাজ করছেন। ডিবির উত্তর বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের চৌকস কর্মকর্তারা ছায়া তদন্তে নিয়োজিত। পুলিশের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তারাও মাঠে রয়েছেন। তদন্তে সহায়তা করছেন অন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।ডিএমপি কমিশনারের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে যারা দুই বিদেশিকে হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতার করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। বৈঠকে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া বক্তব্য আরও বিচার-বিশ্লেষণ করতে বলা হয়। দুই বিদেশিকে হত্যার পর গণমাধ্যমের ভূমিকারও প্রশংসা করেন ডিএমপি কমিশনার। এদিকে সারাদেশে বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া মোটরসাইকেলে একজনের বেশি চলাচলের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতেও বলা হয়েছে। গুলশান, বনানী ও বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এডিসি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের টহল সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছেন। ডিসি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা গোটা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কূটনৈতিক এলাকার সব প্রবেশ ও বহির্মুখে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে গুলশানে কয়েকটি প্রবেশমুখ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যদের কূটনৈতিক এলাকায় টহলে নিয়োজিত করা হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post