জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবীতে কুলাউড়ায় র‌্যালী ও সমাবেশ

স্টাফ রিপোটারঃ জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবীতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আইএলও র‌্যালী ও সমাবেশ করেছে । কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গনে ৩১ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১১টায় আদিবাসীদের আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন কুবরাজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রত্যুশ আশাক্রার সভাপতিত্বে এবং হিরামন হেলেনা তালাং ও জয়ন্ত লরেন্স রাকসাম এর যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে একাত্বতা ঘোষনা করে বক্তব্যে রাখছেন।জেলা কমিনিস্ট পার্টির সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্যবদ্ধ পরিষদ, উপজেলা শাখার শ্রী গৌরা দে, সাধারন সম্পাদক, কুলাউড়া প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক, খালেদ পারভেজ বখশ, সাপ্তাহিক সীমান্তের ডাক পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম টিপু, কুলাউড়ার সাপ্তাহিক সংলাপ পত্রিকা সম্পাদক ও প্রকাশক সিপার উদ্দিন আহমদ, কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন সাধারন সম্পাদক, ফ্লোরা বাবলী তালাং, একডো নিবার্হী পরিচালক, লক্ষীকান্ত  বাগাছাস কুলাউড়া শাখার সভাপতি তমাল আজিম, পাসকপ কল্যাণ পরিষদ নিবার্হী পরিচালক শ্রী গোরাঙ্গ পাত্র, আদিবাসী নেতা যতীন বাকতি, খাসি স্টুডেন্স ইউনিয়ন, সিলেট শাখা সেক্রেটারী লবিং , সিমসাকা মহিলা সংগঠন সভাপতি, হিমালী রিছিল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আগামী ৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ ঘোষিত ২১তম আদিবাসী দিবস উদযাপিত হবে। ১৯৯৩ সালকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আদিবাসী বর্ষ ঘোষণা করেছিল। এ বছর জাতিসংঘ সদর দফতরেও এই দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালিত হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন তার বানিতে বলেছেন, " "The interests of the indigenous peoples must be part of the new development agenda in order for it to succeed. Together, let us recognize and celebrate the valuable and distinctive identities of indigenous peoples around the world. Let us work even harder to empower them and support their aspirations. "

১৯৯৩ সালকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আদিবাসী বর্ষ ঘোষণা করেছিল। সে সময় আদিবাসী বর্ষের মূলসুর ছিল “আদিবাসী জাতি ঃ এক নতুন অংশীদারীত্ব” (Indigenous Peoples : A New Partnership)| । জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালে রেজুলেশন ৪৯/২১৪ গ্রহণ করে ৯ আগস্টকে আদিবাসী দিবস হিসেবে পালনের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানায়।
বক্তারা আরোও বলেন দুঃখের বিষয় অনেক প্রতিশ্রুতি সত্বেও আমাদের দেশে কখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবস উদযাপন করা হয়নি। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকে এই দিবসে বাণী দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের অনেকে অতীতে বলেছেন আদিবাসী দিবস যাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়, সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ বছর জাতিসংঘ আদিবাসী দিবসের মূলসুর নির্ধারণ করেছে,
“Post 2015 Agenda: Ensuring indigenous peoples’ health and well-being.” আমরা এর বাংলা অনুবাদ করেছি, “২০১৫-উত্তর এজেন্ডা ঃ আদিবাসী জাতিসমূহের জীবনধারা উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।” আদিবাসীদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অধিকার ও ভূমি অধিকারসহ জীবনধারণের মান উন্নয়নের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আদিবাসীদের অবহেলা ও উপেক্ষা করে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। সকলকে সঙ্গে নিয়েই রাষ্ট্রকে এগিয়ে যেতে হবে।
আমাদের দেশে কত কত দিবস জাতীয়ভাবে পালিত হয়। হাত ধোওয়া দিবস, ওজন দিবস ইত্যাদি জাতীয়ভাবে পালিত হয়। এসব যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আদিবাসী দিবস পালন করে সরকার অনায়াসে উদার, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে পারে।
আজ আমরা দাবি জানাচ্ছিঃ জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা হোক যেখানে সরকার, জাতিসংঘ, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনসহ ছাত্র-যুব সকলে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এভাবে আদিবাসীদের সঙ্গে বৃহত্তর সমাজের সেতু বন্ধন রচিত হতে পারে।
আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার আমাদের এই দাবিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে দেশে বহু ভাষা, জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির বৈচিত্রপূর্ণ সহাবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও সম্মানিত হবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post