![]() |
আজ পবিত্র লাইলাতুল বরাত |
আজ ২ জুন মঙ্গলবার পবিত্র শব-ই বরাত বা লাইলাতুল বরাত। আরবী হিজরী’র শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে লাইলাতুল বরাত বা শব-ই বরাত হিসেবে অভিহিত করা হয়। দিনের আলোক রেখা মিলিয়ে যাওয়ার পরই শুরু হবে পরম কাঙ্খিত মহিমান্বিত ভাগ্য রজনী। পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিষ্কৃতি লাভের পরম সৌভাগ্যের রাত। বিশ্বের মুসলমানরা আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য ও করুণা লাভের আশায় এ রাতে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকেন। পরম করুণাময় আল্লাহ রাববুল আলামীন এই রাতে নিকটতম আকাশের দিকে দৃষ্টিদেন। করুণা সিক্ত করেন তাঁর বান্দাদের। মুসলমানদের জীবনে যে তিনটি রাতকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, শব-ই বরাত তার মধ্যে অন্যতম। রমজানের সিয়াম সাধনা বা আত্মসংযমের মানসিক প্রস্ত্ততি এ রাতের ইবাদত বন্দেগি ও আল্লাহর দরবারে পানাহ চাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এ কারণে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে এ রাতটির গুরুত্বও তাৎপর্য অনেক। এরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, পরবর্তী বছরের হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত, আমল প্রভৃতি যাবতীয় আদেশ নির্দেশ এ রাতেই ফায়সালা করা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ এ রাতে বিশেষ বরকত হাসিলের মানসে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী, জিকির, আসকার, মিলাদ মাহফিল, নফল নামাজ আদায় কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকেন।
মহাসম্মানিত পবিত্র লাইলাতুল বরাত সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফ উঁনার মধ্যে বর্নিত আছেঃ নিস্চই মহান আল্লাহ পাঁক তিঁনি মধ্য শাবানের (পবিত্র শবেবরাত) রাতে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন (রহমতে খাস নাজিল করেন) এবং বনু ক্বলব গোত্রের মেষের পশমের চাইতে বেশী সংখ্যক লোককে ক্ষমা করেদেন।
পবিত্র হাদীস শরীফ উঁনার দলিল সুত্রঃ
# ১। তিরমিজি শরীফ ১/১৫৬. হাদীস শরীফ নং ৭৩৯।
# ২। মুসনাদে আহমদ শরীফ ৫/১৭৪ হাদীস শরীফ নং ২৫৮৯৬
# ৩। ইবনে আবি শায়বা শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৯৯৫৮।
# ৪। ইবনে মাজাহ শরীফ ১/৪৪৪ হাদীস শরীফ নং ১৩৮৯।
পবিত্র হাদীস শরীফ খানার অবস্থানঃ সহিহ।
ছিয়া ছিত্তার সহীহ হাদীস শরীফ উঁনার আলোকে পবিত্র শবে বরাত উঁনার দলীল স্পষ্ট ।
উপরে যে হাদীস শরীফ উঁনার বর্ননা করা হয়েছে ইহা সম্মানিত ছিয়া ছিত্তা উঁনাদের অন্যতম দুই সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম তিরমীযি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম ইবনে মাজাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা করেছেন। শুধু তাই নয়, হাদীস শরীফ খানা বর্ননা করেছেনঃ একজন মাজহাবের ইমাম এবং মুজতাহিদ এবং ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উঁনার উস্তাদ হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আমীরুল মু'মিনিন ফিল হাদীস শরীফ উঁনার ইমাম ইবনুল মুবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উঁনার বিশিষ্ট ছাত্র ও বিখ্যাত হাদীস শরীফ বিশারদ ইবনে আবী শায়বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, এছাড়া বিখ্যাত হাদীস শরীফ বিশারদ ইবনে হিব্বান রহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাদ্রাসায় যে মেশকাতুল মাছাবীহ পড়ানো হয় সেই মাছাবীহ কিতাবের মুছান্নিফ ইমাম বাগবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি , বিখ্যাত হাফিজে হাদীস ইমাম বায়হাক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহ শতশত বিখ্যাত ইমাম ও মুস্তাহিদ।
আর মহাসম্মানিত পবিত্র শবে বরাত উনাকে আরবীতে বলা হয় লাইলাতুল বরাআহ। অর্থ হচ্ছে গোনাহ থেকে মুক্তির রাত। সহীহ হাদীস শরীফ উঁনার থেকে প্রমানঃ হযরত মুয়ায বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উঁনার থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিঁনি বলেছেন, মহান আল্লাহ পাক তিঁনি পবিত্র মহাসম্মানিত এই মধ্য শাবান উঁনার রাতে তিঁনি উঁনার সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।
পবিত্র হাদীস শরীফ উঁনার দলিল সুত্রঃ
# শুহাবুল ঈমান - হাদীস শরীফ নং ৩৬৭৪।
# আল মুজামুল আওসাত-৬৯৬৭।
# মাসনাদুশ শামিয়্যীন-১৯৮,২০৩।
# মাসনাদুল বাযযার-পৃষ্ঠা ২৪৫।
# মাজমাউয যাওয়াইদ-৮/৬৫।
# মাসনাদুল ফিরদাউস-৮০১৭।
# মুসাননাফ আব্দির রাযযাক-৭৯২৩।
# মুসাননাফ ইবন আবী শাইবাহ - ৩০৪৭৯।
# আল মাতালিবুল আলিয়হ লি ইবনি হাজার আসকালানী-১১৩৩।
# লাতাইফুল মাআরিফ-১৪৩।
আহলে হাদীসদের শায়েখ আলবানীও বলেছে- হাদীস শরীফ খানা সহীহ তথা বিশুদ্ধ।
কারণ এ হাদীস শরীফ উঁনাকে ৮ জন সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উঁনারা বর্ণনা করেছেন। উঁনারা হলেন -
# আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম।
# আয়শা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম।
# আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
# মুয়ায বিন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। # আবু ছা লাবাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
# আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
# আবু মুসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
# আউফ বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
দলিল সুত্রঃ সিলসিলাতুল আহাদীস সাহীহাহ - ৩/১৩৫।
আহলে হাদীসদের আরেক শায়েখ মুবারকপুরী অনেকগুলো হাদীস আলোচনা করে অবশেষে বলেছে, যারা বলে শবে বরাতের কোন অস্তিত্ব নেই, তাদের বিরুদ্ধে এ হাদীস শরীফগুলো দলীল।
তুহফাতুল আহওয়াযী, বাবু মা জা আ ফী নিসফি মিন শাবান।