গল্প - রুবাইয়াত তন্ময়

গল্প - রুবাইয়াত তন্ময়
Story । গল্প - রুবাইয়াত তন্ময়

-কাল আসেননি যে?
-খেয়াল করেছো তুমি?
-অনেক দিন ধরে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া একটা ঘটনা হঠাৎ করে আড়াল হলে চোখে পড়ে বেশ।
-আমিও আসিনি এজন্য।ভাবলাম দেখি ব্যাপারটা তুমি খেয়াল করো নাকি।
-চোখ জোড়া এত লাল হয়ে আছে কেন আপনার?শরীর খারাপ?

-তেমন কিছু না।জ্বর জ্বর ভাব হচ্ছে কাল থেকে।কে জানে হয়ত আসবে।
-আসবেই তো।এত পাতলা একটা চাদর গায়ে এমন শীতের রাতে কেউ বের হয়?
-চাদর গায়ে হাঁটতে ভালো লাগে।
-হয়েছে আর মিথ্যে বলতে হবেনা।আপনার অন্য কিছু নেই বলে এই পাতলা চাদর জড়িয়ে ঘুরে বেড়ান।
-তাই বুঝি?তা কি করে বুঝলে?
-পছন্দের মানুষের সামনে কেউ এমন মলিন পুরনো চাদর গায়ে আসেনা।
-কি বলব বুঝতে পারছিনা।
-কিছু বলতে হবে না।আচ্ছা আমি চলে যাবার পর রাস্তার ওপাশের শিমুল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন রোজ?
-তুমি এটাও জানো?
-আমি জানি।এও জানি আমার ঘরের বাতি না নিভে যাওয়া পর্যন্ত আপনি দাঁড়িয়ে থাকেন।এতে কতটা ক্ষতি হয় আমার জানেন?রোজ আমার আগে শুয়ে পড়তে হয়।গত পরীক্ষায় রাত জেগে পড়তেও পারিনি।
-তোমার কথাগুলো এমন কেন?উত্তর দিতে পারিনা।
-উত্তর লাগবেনা।এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে একটা টিউশন ও তো করতে পারেন।তাহলেতো আর পুরনো চাদর পরতে হয়না।আচ্ছা,ভালোবাসায় কারণ থাকতে হয় জানেন?
-কেন?কারণ লাগবে কেন?
-কারণ ছাড়া ভালোবাসা কারণ ছাড়াই বাড়তে থাকে।অথচ আপনিই বলুন।শিমুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সংসার করা যায়?তখন এই বাড়ন্ত ভালোবাসাটা শুধু চোখের জলই দিবে।আর কিছুনা।
-একদিনে কি বেশি মুগ্ধ করা হয়ে যাচ্ছে না?
-হোক কিছুটা বেশি।রাত অনেকটা বেড়ে গেছে।আজ আর দেরী করবেননা।বাসায় চলে যাবেন।আর আগামী দুদিন আসার দরকার নেই।
-না এসে কি পারা যাবে?
-পারতে হবে।যদি জ্বর বেশি হয়ে যায়?কারো কারো অনুপস্থিতি দুদিনের জন্য সহ্য করা যায়।কিন্তু এর বেশি যায়না।আর আমার চাদরটা ধরুন।এটাকে ভেতরের দিকে দিয়ে উপরে আপনার চাদরটা পরে নিন।মানুষ যদি দেখে মেয়েদের চাদর পড়ে হাঁটছেন হাসাহাসি করবে।
কথাগুলো বলেই মেয়েটা হাঁটা শুরু করল। তন্ময় তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।বুঝা যাচ্ছে ওর বেশ ঠাণ্ডা লাগছে।তবু চাদরটা দিতে ইচ্ছে করছেনা।বাসায় যেতে ওর বেশি হলে আড়াই মিনিট সময় লাগবে।
কি আর হবে এতে।হয়ত দুটো হাঁচিই দিবে।হাত ধোয়ার জন্য তারপর ছুটে যাবে।ছেলেদের মত জামা প্যান্টে হাত মোছার ব্যাপারটা ওদের নেই।একটা এলোমেলো ছেলেকে গুছিয়ে তুলতে তাই হয়ত একটা মেয়ের দরকার।খুব দরকার।
তন্ময় ওর চাদরটা উপরে পরেই হাঁটছে। লোকে যা ভাবার ভাবুক।সবাই চাদরটা দেখবে।চাদরের মাঝে লুকিয়ে থাকা উষ্ণতাটা কেউ দেখবেনা।এতেই হবে।সব কি সবার দেখতে আছে?বুঝতে আছে?না।কিছু ব্যাপার একান্ত নিজের।নিজের অনুভূতি।ভালোবাসার চাদরে ঘেরা উষ্ণতার অনুভূতি।

Post a Comment

Previous Post Next Post