"একজন মা আর দেশ যখন এক" - তপন চৌধুরী

একজন মা আর দেশ যখন এক" - তপন চৌধুরী
একজন মা আর দেশ যখন এক" - তপন চৌধুরী
তপন চৌধুরী: গত শুক্রবার রাতে একটু দেরী করে ঘুমানোর কারণে সকালে উঠতে দেরী হচ্ছিলো, আমার স্ত্রীর ডাকে ঘুম থেকে উঠে তাকাতেই তিনি বললেন এই দেখো তোমার ফেসবুকে কে একজন লিখেছে আরাফাত রহমান ইন্তেকাল করেছেন, আমি বললাম না নিশ্চয়ই কেউ এটা গুজব ছড়াচ্ছে বলে পাশ ফিরে শুতেই আমার মেয়ে এসে আবার কানের কাছে বললো বাবা উঠো টিভিতে ও দেখাচ্ছে "আরাফাত রহমান " আর নেই , আমি ইন্নাহ লিল্লাহ পড়ে লাফ দিয়ে উঠে কয়েক জায়গায় ফোনে যোগাযোগ করলাম দেখলাম ঘটনা সত্য,কয়েক মিনিট একটা ঘোরের মধ্যে কেঠে গেলো,

চিন্তা করলাম সবচেয়ে বেশী ম্যাডাম কে নিয়ে আজ প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ থাকার অসহনীয় কষ্টের পর এই ভয়াবহ দুর্যুগ কষ্টের সীমাহীন যন্ত্রনায় এক জন মা যখন সন্তান পরিবার সব কিছুই থেকে বিচ্ছিন্ন তখন এই কষ্টের সুনামীর আঘাত কিভাবে সামলাবেন একজন অসহায় মা,সন্তান এর লাশের ভার নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি যা বহন করা সবচেয়ে কষ্টকর,শুধু চোখের জলে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলাম আমার মেয়ে চুখের পানি মুছিয়ে দেয় কিন্তু আমি নিজেকে প্রবোধ দিতে পারছিলামনা,এবং পরক্ষনেই চিন্তা করলাম দেশনায়ক তারেক রহমান কে নিয়ে,যিনি আজ ৮ বছর ধরে পরিবার থেকে দুরে রয়েছেন এবং অসুস্ত অবস্তায় চিকিত্সাধীন আছেন ,কি করবো,কি করা উচিত,বুজতে পারছিলাম না,শহীদ জিয়া স্মৃতি কেন্দ্রের কাদির ভাই,জাবেদ,কামাল,এমাদ এর সঙ্গে আলাপ করে এক জায়গায় মিলিত হলাম এবং পবিত্র কোরআন খতম,মিলাদের আয়োজন হলো,এবংলন্ডনে গায়েবানা জানাজা সহ দোয়া দুরুদ যে যা পারেন সবাই তা করেছেন বাংলাদেশী কমুনিটির আমাদের পরিচিত অপরিচিত যার সঙ্গেই দেখা হয়েছে সবাই দুঃখ প্রকাশ করেছেন,

২০০৭ সালের ১/১১ পূর্ববর্তী সময়ে এই প্রানোচ্ছল তরুণ আরাফাত রহমান কোকো যিনি একটি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ছিলেন কখনোই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেননা ছিলেন একজন ক্রীড়ামোদী,অনেকদিন আগে আমাদের ছাত্রদলের সাবেক নেতা সুনামগঞ্জের নাদের আহমেদ আমাকে বলেছিলো যে অনেকেই আমরা জানি যে আরাফাত রহমান ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত তা নয় তিনি একজন সৌখিন ফুটবল খেলোয়াড় ও ছিলেন,সুনামগঞ্জ এর এক ফুট বল টুর্নামেন্টে একবার বরেন্যে ফুটবল তারকা কায়সার হামিদের ছোট ভাই ববি হামিদ এর সঙ্গে আরাফাত রহমান ফুট বল ম্যচে অংশ নেন,

আরাফত রহমান অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন,পারিবারিক ভাবেই তিনি ভদ্র ও শিষ্টাচার শিখে বড় হয়েছিলেন যা তার আচরণে প্রকাশ পেতো,তিনি অস্ট্রেলিয়ায় উচ্ছ শিক্ষা লাভ করেছেন,সেদিন তার মৃত্যুর পর তার এক পরিচিত মানুষের বর্ণনায় আমরা জানতে পারলাম যে তিনি শেয়ার করে রুমে থাকতেন,তার রুমমেটরা তাকে কখনোই দাম্ভিক মনে করতোনা এমনকি কখনো মেযেতে ঘোমানোর প্রয়োজন হলে আরাফাত রহমান সবার আগে মেযেতে ঘুমিয়ে পরতেন,কখনোই তিনি পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে দাম্ভিকতায় ভোগ তেননা,অত্যন্ত সাধা সিধে জীবন যাপন করতেন নিজের ব্যয় নির্বাহের জন্য পিজা হাঠে কাজ করতেন অতচ এই পরিবারের আনুকুল্য নিয়ে যারা আজ এমপি মন্ত্রী বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য করে শত কোটি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এদের ছেলে সন্তান কিম্বা আশ পাশের মানুষের চলাফেরা দেখলেও আমাদের চোখ কপালে উঠে,আমি নিজে দেখেছি,দেশ নেত্রী মোম বাতি জালিয়ে ধানমন্ডি অফিসে একা বসে আছেন,এমন দিনও গেছে ধানমন্ডি বিএনপি অফিসের ভাড়ার জন্য মালিক পক্ষ সরকারের ইন্ধনে মামলা পর্যন্ত করেছে,নেতা কর্মীদের জামিন নেয়ার জন্য জেলা পর্যায়ে একজন আইনজীবী নিযোগ দেয়া যায়নি,কিন্তু অসীম মনোবল একনিষ্ট কর্ম স্পৃহা আর জনগণ এর ভালোবাসা সমর্থন কে পুঁজি করে এক অসহায় রমনী অসম যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্ভভৌমত্তের সাহসী সিপাহসালার দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া,ব্যক্তিগত দুঃখবোধ চাওয়া পাওয়া কে যিনি ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি,আমরা যারা বিএনপির রাজনীতি করি আমরা প্রায়ই বলি আমাদের কে মূল্যায়ন করা হয়নি,দলের বিভিন্ন পর্যায়ে হারামখোর বেইমান আর আপসকামী রা জায়গা করে নিয়েছে,বিভিন্ন উদাহরণ ঠেনে না পাওয়ার কিম্বা পেয়ে হারানোর গল্প গাথা বলি,কিন্তু একটিবারও চিন্তা করিনা এই দলের প্রতিষ্টাতা শহীদ জিয়াউর রহমান কে কেনো প্রাণ দিতে হলো,বেগম খালেদা জিয়া কে কেনো বিধবা হতে হলো কেনো শহীদ জিয়ার দুই সন্তান কে এতিম হতে হলো তারপর শহীদ জিয়ার শাহাদাত এর পর যখন এরশাদের সামরিক শাসন আমলে বিএনপি ভাগ হয়ে গেলো তখন চাইলেই তো বেগম খালেদা জিয়া আরামে আয়েশে জীবন কাঠিয়ে দিতে পারতেন কিন্তু দেশ দল ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতিকে বেগবান করতে নিজের জীবনের সুদীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন বেগম খালেদা জিয়া,নিজের সুখ শান্তি কে বিসর্জন দিয়ে এক দুর্জয় দুর্গম পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন যার জন্য জীবনের শেষ বয়েসে এসেও আজ কখনো কারান্তরীণ কখনো বাড়ি থেকে বিতাড়িত পরিবার পরিজন থেকে দুরে নিসঙ্গ একাকী কতোটা দুঃখের কষ্টের সাগরে ভেসে ভেসে দেশ ও মানুষের কল্যান কামনায় স্বাধীনতা কে বাঁচিয়ে রাখতে একাকী লাল সবুজের পতাকা হাতে বেরিয়ে এসে দালাল পুলিশ প্রশাসনের মানুষকে মিডিয়ার সামনে দাড়িয়ে বলতে পারেন এটা সিকিম নয় লেন্দুপ দর্জির ইতিহাস পরে নেবেন,আর প্রস্তুত থাকবেন কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করার জন্য ,এটা তিনিই পারেন কারণ আমরা দেখেছি চরম বিপদের দিনেও বেগম খালেদা জিয়া তার কর্তব্য বোধ থেকে পিছপা হননি,যখন ১/১১ পরবর্তী সময়ে নিজের দলের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে থাকা দালালরা এই দল এই ধারার রাজনীতি কে কলুসিত করতে চেয়েছিলো তখনও বেগম খালেদা জিয়া পিছপা হননি,কুনো প্রকার প্রলোভনের কাছে মাথা নত করেননি হুমকি ধমকি এমনকি দেশ ছাড়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন যখনি শেখ হাসিনা কে গ্রেফতার করা হলো তার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ করেছেন বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করে মরহুম খন্দকার দেলওয়ার কে মহাসচিবের দায়ীত্ব দিয়েছিলেন তিনিও পরম বিশ্বাসে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনিও আপোষ করেননি বরং নেত্রীর পদাঙ্ক অনুসরন করেছেন তার ছেলে কে ধরে নিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে তিনি অবিচল ছিলেন আপোষ করেননি ,বেগম খালেদা জিয়া কে বলা হয়েছিলো বিদেশ চলে যেতে তিনি বলেছিলেন এ মাটি এ দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাবনা মরলে এখানেই মরবো,মইন ফখরের শাসন আমলে যখন বেগম খালেদা জিয়া কুনো প্রকার আপোষ সমযোতায় আসলেননা তখনি সাজানো মামলায় তার দুই প্রিয় সন্তান কে নির্যাতন করা হয় একজন কোমরে প্রচন্ড আঘাত প্রাপ্ত হয়ে অনেকটাই পঙ্গুত্ব নিয়ে ইউ কে তে চলে আসেন চিকিত্সার জন্য আরেকজন কে ইলেকট্রিক শক দিয়ে দুর্বল করে দেয়া হয় যিনি আবার কোনদিনই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিস্ট নন শুধুমাত্র দেশী বিদেশী চক্রান্তের বেড়াজালে পা না রাখার কারনে নেমে আসে নির্যাতন নিপীড়নের স্টিমরোলার যার করুন পরিনতি এক সাধাসিধা ভালো মানুষ প্রচন্ড রকম বন্ধুবত্সল প্রচারবিমুখ উচ্ছ শিক্ষিত খোদা ভীরু নামাজী সর্বোপরি এক ক্রীড়ামোদী ক্রীড়া সংগঠক যার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মীরপুরে ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রতিষ্টিত হয়েছিলো,বাংলাদেশ ক্রিকেটের থিম সং "বেশ বেশ বেশ এগিয়ে যাও আমার বাংলাদেশ"গানটির রচয়িতা ও ছিলেন শহীদ জিয়ার কনিস্ট সন্তান আরাফাত রহমান কোকো,যাকে এক এগারো পরবর্তী সময়ে সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে,চিকিত্সার্থে প্রথমে ব্যাংকক তারপর মালোএশিয়ায় নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে অনেকটাই দুশ্চিন্তা হতাশায় জীবনের শেষ দিনগুলি এক অনিস্চতায় কষ্টকর ভাবে কাটিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন,জাতির কাছে এক বিরাট প্রশ্ন রেখে নিজে রাজনীতিবিদ না হয়েও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হবার যন্ত্রনা ক্লিস্ট বেদনা বিধুর মুখছবি যখনি আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে তখন জানিনা মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে এর জন্য যারা দায়ী সেই ক্ষমতালিপ্সু অবৈধ ক্ষমতা প্রাপ্তরা কি জবাব দেবেন তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনের মনিকোটায় শহীদ জিয়া ও তার পরিবার কতোটা জনপ্রিয় তার প্রমান বাংলাদেশের মানুষ দিয়েছে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর ঐতিহাসিক জানাজায় সরব উপস্তিতি দিয়ে আর সারা বিশ্বে ও দেশের আনাচে কানাচে গায়েবানা জানাজার মাধ্যমে,লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আরাফাত রহমান তার বাবার মতই বিদায় নিয়েছেন,এতে কেউ ঈর্ষানিত হতে পারেন যাদের জানাজা পড়ার জন্য ২০ জন লোকও হয়নি আর ভবিষ্যতে এদের জানাজা পড়ার দরকার নাও হতে পারে কারণ এরা অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে যেভাবে আত্বীয়তা করে চলেছেন তাতে এরকম মনে করাটাই স্বাভাবিক ,কিন্তু এক জন মা তার সন্তান পরিবার সব কিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বাংলাদেশ গনতন্ত্র আইনের শাসন প্রতিষ্টার সংগ্রাম থেকে এক চুল পরিমান বিচ্যুত হন নি তিনি হলেন বাংলাদেশের আয়রন লেডি বেগম খালেদা জিয়া,আজ তিনি এসব কারণেই হয়ে উঠেছেন সমগ্র মুক্তিকামী গনতন্ত্র কামী মানুষের আস্থা ও ঐক্যের প্রতিক আজ যেন একজন মা খালেদা জিয়া শুধুমাত্র তারেক রহমান, আরাফাত রহমানের মা নন সমগ্র বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের মা হয়ে গিয়েছেন যার, সারমর্ম হলো এই মায়ের মুখই যেনো আজ সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ ,

Post a Comment

Previous Post Next Post