![]() |
তদন্ত প্রতিবেদন: ট্রেন দুর্ঘটনার কারন নাশকতা |
তদন্ত প্রতিবেদন: ট্রেন দুর্ঘটনার কারন নাশকতাঃ কুলাউড়ায় রেল দুর্ঘটনায় বেঁধে দেয়া ৭ কর্মদিবসের মধ্যেই দ্রুত তদন্ত
প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের দেয়া
প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাকে নাশকতা বলে উল্লেখ করেছেন। এমন খবর
জানতে পেরে মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন টিলাগাঁও ও হাজীপুর ইউনিয়নের
দশ গ্রামের মানুষ। কুলাউড়ায় ৮ই জানুয়ারির ট্রেন দুর্ঘটনাটি নাশকতার কারণেই
ঘটেছে। নাশকতার উদ্দেশ্যেই দুর্বৃত্তরা রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে রেললাইন
উপড়ে ফেলেছিল- প্রতিবেদনে এমনটিই জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। গত ৮ই জানুয়ারি
ভোররাতে উপজেলার টিলাগাঁও ও মনু রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী ইছবপুর চক শালন
এলাকায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি
দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ইঞ্জিনসহ ট্রেনের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ৩৫-৪০
যাত্রী আহত হন। ওই দিনই রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. নাজমুল
ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি
মঙ্গলবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় বলে রেলওয়ের একটি
সূত্র জানায়। তদন্ত কমিটির প্রধান মো. নাজমুল ইসলাম প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়টি
গতকাল দুপুরে মানবজমিনের কাছেও নিশ্চিত করেছেন। তবে ঘটনার দিন ট্রেনচালক,
প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তা ও ট্রেনযাত্রীদের দেয়া বক্তব্যের বরাতে
ট্রেনটির যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি প্রিন্ট, ইলেকট্রনিকস, অনলাইনসহ বিভিন্ন
গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকেও
এটাকে দুর্ঘটনা বলে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন অনেকেই। ফেসবুক ব্যবহারকারী
অনেকেই তাদের দেয়া স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে ১৯শে মার্চ ঢাকা থেকে
সিলেটগামী উপবন ট্রেনটি কুলাউড়ার চকাপন এলাকায় দুর্বৃত্তদের নাশকতায়
মারাত্মক দুর্ঘটনাকবলিত হয় এবং এটা নাশকতা হিসেবে তদন্ত রিপোর্টের আগেই
প্রত্যক্ষদর্শী ও ট্রেনটির যাত্রী সূত্রে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন এবং পরে
সবার এমন ধারণাকেই বাস্তবে রূপ দেন তদন্ত কর্মকর্তরা। এটাকে নাশকতা বলে
প্রতিবেদন জমা দেন তারা। ৮ই জানুয়ারি দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটির যাত্রীরা
জানিয়েছিলেন, সিলেট থেকে রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে
ট্রেনটি। মাইজগাঁও স্টেশনে আসার পর রেলের একটি বগিতে শব্দ হচ্ছে শোনে
যাত্রীরা ট্রেনের চালককে জানান। তখন ট্রেনটি মাইজগাঁও স্টেশন ছেড়েছে মাত্র।
সেখানেই চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু ত্রুটির
আলামত দেখে সিলেটে নির্ধারিত বিভাগের (যান্ত্রিক বিভাগ) প্রকৌশলীদের ব্রেক
গিয়ার সমস্যার কথা জানান। সেখান থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী শ্রীপদ দত্ত ও মো.
শামীম আহমদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকা
পরবর্তী বগির বাফার হেড ল্যুজ দেখে গ্যালভানাইজ তার দিয়ে বেঁধে নিরাপদ বলে
ঘোষণা দেন। চালক আবুল কালাম জানান, প্রকৌশলীদের কাছ থেকে মৌখিক ছাড়পত্র
পাওয়ার পর তিনি ১টা ৫৫ মিনিটে মাইজগাঁও স্টেশন ছাড়েন। মেরামতজনিত কারণে
মাইজগাঁও স্টেশনে প্রায় ৩ ঘণ্টা অবস্থান করে ট্রেনটি। ত্রুটি সারিয়ে
ট্রেনটি রাত আড়াইটার দিকে কুলাউড়া স্টেশনে পৌঁছায়। কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে
যাওয়ার পর রাত আনুমানিক ৩টায় টিলাগাঁও ও মনু রেলওয়ে স্টেশনের মাঝখানে
ইসবপুর চকশালনবাগের টিকি নামক স্থানে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ
৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। দু’টি বগি পার্শ্ববর্তী জমিতে ছিটকে পড়ে। এ
দুর্ঘটনায় সারা দেশের সঙ্গে প্রায় ২১ ঘণ্টা সিলেটের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ছিল। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতিয়ার উদ্দিন জানান,
ট্রেন নাশকতার ঘটনায় শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে
৮ই জানুয়ারি মামলা হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা চেযারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম
জানান, নাশকতা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে গত মঙ্গলবার ট্রেন দুর্ঘটনা
এলাকার পার্শ্ববর্তী মনুবাজারে সভা করেছেন। কোন নিরীহ গ্রামবাসী কৃষিজীবী
মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়টি তিনি উপজেলা ও জেলা আইনশৃঙ্খলা
সভায় উপস্থাপন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি অবগত আছেন।
সুত্রঃ মানব জমিন
![]() | ||||||
তদন্ত প্রতিবেদন: ট্রেন দুর্ঘটনার কারন নাশকতা - ২ |
ট্যাগ »
কুলাউড়া