কর্মস্থলে ফেরার পথে রেলওয়ে প্রকৌশলীর প্রাণ গেল সড়ক পথে: নির্ঘুম পরিশ্রমে এমনটা বলছেন সহকর্মীরা
এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া, সিলেট ব্যাুরোঃ রেলওয়ে কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের লাশ ময়মনসিংহের জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় যমুনা নদীর তীরবর্তী শানাপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে ৮ অক্টোবর বুধবার গভীর রাতে। লাশবাহী গাড়ির বহর পৌছামাত্র সহপাঠী, স্বজন- প্রিয় জন, এলাকাবাসী, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী আর মোজাম্মেল হকের দুই শিশু সন্তানদের অশ্রু ভেজা চোখে আর্তনাদ, আত্মচিৎকার, কান্না জড়িত কন্ঠে শোকের ছায়া নেমে আসে যমুনার তীরের শানাপুর গ্রামে। আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে প্রিয়জন হারানোর শোকে।
আজ ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের বাড়ি শানাপুরে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) কুলাউড়া সেকশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোজাম্মেল হক কে।
নামাজের জানাজায় অংশ নেন এলাকাবাসী, আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী ছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, টঙ্গী, জামালপুর ও সরিষাবাড়ীর প্রায় তিন শতাধিক রেলওয়ে কর্মকর্তা - কর্মচারী ।
তবে ৮ অক্টোবর লাশের গাড়িটি ভৈরব জ্যামে দীর্ঘ সময় আটকা থাকায় রাতে নির্ধারিত সময়ে জানাযা পড়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার সকালে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের টঙ্গী সেকশনের এইএন আতিকুল ইসলাম।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের শোকঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (এস এস আই) কুলাউড়া মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে শোক শোকবার্তা দিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সচিব মো: ফাহিমুল ইসলাম। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালে সড়কপথে মোজাম্মেলকের মৃত্যুতে বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। সরকারি দায়িত্ব পালনকালে মোজাম্মেল হকের এমন মৃত্যুতে রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী শোকাহত বলে শোক বার্তায় উল্লেখ করেন। মোজাম্মেল হক মৃত্যুকালে দুই সন্তান আরাফ, মুয়াজ ও স্ত্রী সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৬ বছর বলেও রেলমন্ত্রণালয়ের শোক বার্তায় উল্লেখ করা হয়। মোজাম্মেল হকের বড় ছেলে নবম শ্রেণী ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
রেলওয়ে কর্মকর্তাদের শোক: এদিকে রেলওয়ের ঊর্ধতন উপসহকারে প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলের বিভাগীয় প্রকৌশলী_২/ঢাকা _মোঃ আহসান হাবিব, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী /সিলেট _শোয়েব আহমেদ, ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) শ্রীমঙ্গল _সাইফুল্লা রিয়াদ ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) শ্রীমঙ্গল _সাইফুল্লা রিয়াদ ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী( কার্য) _সিলেট _জাকির হোসেন খান।
মোজাম্মেল হকের প্রথম জানাযা ৮ অক্টোবর বুধবার ১১ টায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে হয়েছে বলে বলে নিশ্চিত করেন রেলওয়ে সিলেট এর এ ই এন সোয়েব আহমদ।
তিনি বলেন, মোগলা বাজার ৭ অক্টোবর গভীর রাত পর্যন্ত উদয়ন ট্রেনের দুর্ঘটনা কনলিত বগি উদ্ধার কাজ শেষে কর্মস্থল কুলাউড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মোজাম্মেল হক ( প্রকৌশলী)। টলি ম্যন মুহিত এর মোটরসাইকেল যোগে তিনি যাত্রা করেন পথিমধ্যে ব্রাহ্মণবাজার এলাকার শ্রীপুর এর কোন এক জায়গায় ইটের রাস্তা ব্যবহার করেন তারা । দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ায় ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেলকের মাথায় ইটের আঘাত লাগে ( head and Jerry) হয়। ঊনার কাল হয়ে দাঁড়ালো এ দুর্ঘটনা। শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারালেন এ কারণে। প্রিয় সহকর্মীকে হারিয়ে আমরা আজ শোকাহত। এক একটা দুর্ঘটনায় রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী যে যে সেকশনে দায়িত্বে আছে সে ওই লাইন ক্লিয়ার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নির্ঘুম কাজ করতে হয় দিনের পর দিন ।
নির্ঘুম আর পরিশ্রমে এমনটা হয়েছে বলে দাবি করে উদয়ন ট্রেনের বগি উদ্দ্বারে যে রেলওয়ে স্টেশনে তিনি কর্মব্যস্ত ছিলেন সেই মোগলা বাজার রেলওয়ে স্টেশনের বড় মাস্টার শফিকুর রহমান বলেন,আমার স্টেশনে বগি উদ্ধার কাজ শেষে ৮ অক্টোবর বুধবার ভোরবেলা টলি ম্যান মুহিত এর মোটর সাইকেলে কুলাউড়া ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান । এ কারণে আমি নিজে অপরাধী বলে মনে হবে সারা জীবন।
কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের বড় মাস্টার রোমান আহমদ ও কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আতিকুর রহমান আখই জাানান, প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক কে হারিয়ে তারা শোকে কাতর।কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জামে মসজিদ কমিটির তিনি ছিলেন সভাপতি। তার কর্মস্থল কুলাউড়ায় সর্বস্তরের মানুষের সাথে তার সম্পর্কে আজ শোকের ছায়া সর্বত্র। তারা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। সমবেদনা জানান শোকাহত পরিবারের প্রতি।
সিলেটে ট্রেন দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজ শেষে ফেরার পথে শ্রীপুর সড়কে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক মারা যান।
তিনি মোগলা বাজার রেলওয়ে স্টেশনে গভীর রাত পর্যন্ত উদয়ন ট্রেনের বগি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ছিলেন বলে জানান, মোগলা বাজার রেলওয়ে স্টেশনের ঐদিন রাতের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার এএসএম কঙ্কন পুরকায়েস্থ।
মোগলা বাজাররেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার জসিম উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনার পর থেকেই মোজাম্মেল হক স্যার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী কুলাউড়া ঘটনাস্থলে কাজে ছিলেন। কর্মদক্ষতা দিয়ে সিলেট এর সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দুই ঘণ্টার মধ্যে সচল করে দেন।।এবং দিনরাত পরিশ্রম করে বগিগুলো উদ্ধার করেন। পরিশেষে ভাগ্য এমন কে জানতো।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত লাইনচ্যুত হওয়া উদয়ন ট্রেনের বগিগুলো উদ্ধার করেছেন প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক। ইঞ্জিল ও বগি সিলেটে নিয়ে আসার জন্য সকালে মোগলা বাজার আমরা ইঞ্জিন পাঠিয়েছি। ইঞ্জিল সারটিং চলছে। এ। এরই মধ্যে মোজাম্মেল হকের মৃত্যু খঔখবর আমাদেরকে কর্মস্থলে পীড়া দিয়েছে। আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতবাসী করেন।
মোজাম্মেল হক জীবনের শেষ খাবার খেলেন মোগল বাজারে: ৮ বুধবার মধ্যরাতে মোগলা বাজার লাইনচ্যুত হওয়া উদয়ন ট্রেনের ইনজিল ও বগি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকা ঢাকা ও আখাউড়া থেকে আসা রেলের বিভিন্ন সেকশনে কর্মকর্তা-কর্মচারী কে নিয়ে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা রেলওয়ে মিস্ত্রি বেলাল আহমদ এর বাড়িতে। সেটি অবস্থিত মোগলবাজারের জাহানপুরে স্টেশন সংলগ্ন। সেই বাড়িতে ও চলছে এখন মোজাম্মেল হকের জন্য আহাজারি।
এদিকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলা বাজার থানার মোগলাবাজার রেলওয়ে স্টেশনে উদয়ন ট্রেনের লাইনচ্যুত বগি উদ্ধার কাজ শেষে ফেরার পথে প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি চঞ্চল মাহমুদ ফুলর, তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হকের পরিবার ও দুই শিশু পুত্রের দায়িত্ব নিতে সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতি দাবি জানান। যেহেতু তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনা নিহত হয়েছেন। এতিম দু বাচ্চাদের পাশে যেন আমরা সকল থাকি এমনটা কামনা করেন সকলের প্রতি।
এদিকে প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে পৃথক পৃথকশোক বার্তা দিয়েছেন কুলাউড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাকির হোসেন, কুলাউড়া সার্কেলের অ্যাডিশনাল এসপি আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ওমর ফারুক
আবেদ রাজার শোক ও দুর্ঘটনায় কারণ সঠিক তদন্তের দাবিঃ এদিকে কুলাউড়া রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে। মোগলা বাজার ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল সঠিকভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতা মৌলভীবাজার ২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিশিষ্ট আইনজীবী সিলেট বিভাগ আন্দোলনের রূপকার এডভোকেট আবেদ রাজা। তিনি বলেন একটি দুর্ঘটনার সারা জীবনের কান্না। নিঃস্ব হয়ে গেছে রেল ওয়েরর প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের পরিবার। আমি রেলপথের একজন ট্রেন যাত্রী। রাজনীতিবিদ হিসেবে ও ট্রেন যাত্রী হিসেবে যাতায়াতের সুবাদে আমি ওনাকে চিনি। আল্লাহর কাছে ওনার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
এদিকে মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান, মোগলা বাজার থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোগলা বাজার থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ফয়সাল আহমেদ।