অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হাকালুকি হাওর


এ কে এম জাবেরঃ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির হাওর হাকালুকি এখন অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত। শীতের শুরুতেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখি। হাওড়ের বিভিন্ন বিলে বিচরণ করছে পৃথিবীর ঠাণ্ডা প্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসা হাঁস জাতীয় এসব পাখি। নানা রঙের আর বর্ণের দেশি-বিদেশি পাখির অবাধ বিচরণে মুখর হাওড়ের বিলগুলো। আর এসব অতিথি পাখি দেখতে পাখিপ্রেমীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাকালুকি হাওরে।

হাকালুকি হাওরের আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি। এ হাওরে সব মিলিয়ে ২৩৮টি বিল রয়েছে, যেগুলো বালিহাঁস, চিতিহাঁস, সরালি, চখাচকি, নীল শিরসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণক্ষেত্র। তবে হাওরের চকিয়া, হাওড়খাল, বালিজুরি, জলা, পোয়ালা, দুধাই, চাতলা, বাইয়া, গজুয়া, রঞ্চি ও কালাপানি জলাশয়েই বেশি দেখা মেলে এসব অতিথি পাখির।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা যায়, গত বছর হাকালুকির ৪০টি বিলে পাখিশুমারিতে ৫০ প্রজাতির ৫৮ হাজার ২৮৯টি পাখির দেখা মিলেছে। ৩৭ হাজার ৩৩৮টি বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস ও এক হাজার ৪৭৩টি সৈকত পাখি পাওয়া যায়।

অভিযোগ উঠেছে প্রতি বছর অতিথি পাখির আগমনে অসাধু শিকারিদের তৎপরতা দেখা যায়। পাখি নিধনকারীরা দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। বড় বড় বিলে বিষটোপে অনেক সময় পাখি নিধন করে। স্থানীয় কিছু শিকারিদের সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে এসব অতিথি পাখি শিকার করা হয়। 

অসাধু শিকারিদের প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে বিগত কয়েক বছরের রেকর্ডসংখ্যক অতিথি পাখির সমাগমের সম্ভাবনা দেখছেন পাখিপ্রেমি পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। হাওড়পাড়ের বাসিন্দা ও বিভিন্ন জলমহালের ইজারাদারের লোকজন জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অতিথি পাখির সমাগম বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখনো অসাধু কোনো শিকারির তৎপরতা দেখা যায়নি। যার কারণে অতিথি পাখিরা বিলের খুব কাছাকাছি প্রান্তে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিম বলেন, অতিথি বা পরিযায়ী পাখি শিকার বন্ধ না হওয়ায় আমাদের দেশে পাখির আগমন  অনেকটাই কমে গেছে।  শিকার বন্ধে প্রশাসনের শিথিলতা দায়ি। শুধু  অভিযান দিয়ে হাকালুকি হাওর সহ সিলেটের বিভিন্ন হাওরে পরিযায়ী পাখি রক্ষা করা যাবেনা। তাই কার্যকর কিছু করতে হলে মানুষের মধ্যে জাগরণ তৈরি করতে হবে। এই কাজের জন্য সরকারের উচিত প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় যারা কাজ করে তাদেরকে সাথে নিয়ে শক্তিশালী গণ সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ। 

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন বলেন, হাকালুকি হাওরে আগত অতিথি পাখিদের আবাসস্থল সুনিশ্চিত করতে এবং অভায়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি দিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রাম ও শহরের সব বয়সী মানুষজন মুগ্ধতার আবেশে দেখছে জলাশয় ও অতিথি পাখির যোগসূত্রের এই নৈসর্গিক দৃশ্য। তবে এত পথ পাড়ি দিয়ে এসেও এসব পাখিদের শেষ রক্ষা হয় না। শিকারের কারণে প্রাণ হারাতে হচ্ছে পাখিদের। তবে এসব শিকারীর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।  অতিথি পাখি এলাকায় এভাবে প্রতি বছর আসা আমাদের  জন্য সৌভাগ্য।

Post a Comment

Previous Post Next Post