শাহ সুমন: মালয়শিয়া প্রবাসী বড় ভাই রাজু দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরছেন সাদিয়া-সিহাবের। শুক্রবার ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে তাঁকে প্রবাসী বাড়িতে নিয়ে আসতে যান ছোট বোন সাদিয়া ও ছোট ভাই সিহাব। সাথে ছিলেন সাদিয়ার স্বামী সন্তান ও পিতাসহ আত্মীয়রা। ফেরার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবাসী ভাই ও পিতা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলেও মারা যান সাদিয়া-সিহাব সহ ৫ জন।
প্রবাসী ভাইকে নিয়ে জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফেরা হলোনা তাদের। ছোট ভাই, একমাত্র শিশু সন্তান ও স্বামীসহ প্রাণ হারাণ সাদিয়া। তাদের মৃত্যুতে ওই এলাকায় এখন শুধু শোকের ছায়া।
এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম মাদানগরে।
শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের শাহপুরে বালুবোঝাই ট্রাক, নোহা মাইক্রোবাস ও পিকআপভ্যানের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হোন। আহত হোন ৪ জন। আহতরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহতরা হলেন, কুলাউড়ার হাজীপুরের মাদানগর গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া সুলতানা কলি (২৬), জামাতা (সাদিয়ার স্বামী) আব্দুস সালাম (৩২), নাতনি হাবিবা সুলতানা (৪), ছোট ছেলে আতিকুর রহমান সিহাব (১৫) ও মাইক্রোবাস চালক উপজেলার পৃথিমপাশার আলীনগরের বাসিন্দা সাদির মিয়া (৩০)। আহতরা হলেন নুরুল ইসলাম (৫০), তাঁর বড় ছেলে প্রবাসী আখলিছুর রহমান রাজু, ভাতিজা নিশাত (১৮) ও তাদের স্বজন আনজব আলী (৫০)।
নিহতদের স্বজন এবং শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, মাদানগরে বাসিন্দা নুরুল ইসলামের বড় ছেলে রাজু মালয়শিয়া প্রবাসী। আরেক ছেলে ফয়জুর রহমান সাজু ইতালী প্রবাসী। শুক্রবার নুরুলের বড় ছেলে রাজু মালয়শিয়া থেকে দেশে এসেছেন। তাঁকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে নিয়ে আসতে নুরুলের মেয়ে সাদিয়া, জামাতা সালাম, নাতনি হাবিবা ও ছোট ছেলে সিহাবসহ আটজন একটি নোহা মাইক্রোবাসে রওয়ানা দেন। ফেরার পথে শাহপুরে তাদের বহনকারী গাড়ির সাথে ট্রাক ও পিকআপভ্যানের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে গাড়িতে থাকা সিহাব ও সালাম এবং চালক সাদির ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার এবং মাইক্রোবাসে থাকা ৬ জনকে গুরুতর আহতবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে নেওয়ার পথে সাদিয়া ও তাঁর শিশু সন্তান হাবিবা মারা যান।
নুরুল ইসলামের চাচা হাজী মো. রইছ আলী জানান, ভোর ৪টার দিকে গাড়িতে থাকা নিশাতের মোবাইলে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানায়। ঘটনাস্থলে চালকসহ আমার নাতি ও নাতিন জামাই মারা যান। দূর্ঘটনায় আহত আমার নাতিন সাদিয়া ও তার মেয়ে সিলেট নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। তাদের লাশ বাড়িতে আনা হয়েছে। বাকিদের লাশ শায়েস্তাগঞ্জ থেকে আনা হচ্ছে।
নুরুলের ভাগ্না আশরাফুল মামুন বলেন, আমার মামাতো ভাই রাজুর দেশে আসা নিয়ে পুরো বাড়িতে আনন্দ ছিলো। শুক্রবার বিকেলে একমাত্র মামাতো বোন সাদিয়া তাঁর স্বামী সন্তানকে নিয়ে বড় ভাইকে রিসিভ করতে ঢাকা বিমানবন্দরে রওয়ানা দেন। সাথে ছিলেন আমার মামা ও মামাত ভাই সিহাবসহ আত্মীয় স্বজন। ফেরার পথে মামাতো বোন, ভাই, বোন জামাই ও ভাগ্নি দুর্ঘটনায় মারা যায়।
শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন লিডার মুহিবুর রহমান মোবাইলে বলেন, ত্রিমুখী সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। আমরা ঘটনাস্থল গিয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করি।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাইনুল ইসলাম ভুঁইয়া শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে মোবাইলে বলেন, আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমাদের থানায় তিনজন পুরুষের মরদেহ রয়েছে। নিহতদের স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। আইনী প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।