কুলাউড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের উপর ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা



স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওয়াদুদ বক্সের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের আনিত মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এক বিশাল প্রতিবাদ সভা করেছে হাজীপুর ইউনিয়নের আপামর জনসাধারণ। 
মঙ্গলবার রাত ৯টায় হাজীপুর ইউনিয়নের পীরের বাজারে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সভায় হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুল কাদির সরু মিয়ার সভাপতিত্বে ও হাজীপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মুমিনের পরিচালনায় উপস্থিত থেকে বক্তব্যে রাখেন হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওয়াদুদ বক্স। 

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউপি সদস্য মো. রাজা মিয়া, বিধান দত্ত, গোলজার আহমদ, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মাধবী রাণী দে। এসময় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কয়েক শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা বলেন, হাজীপুর ইউনিয়নের বর্তমান সফল চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের কাছ থেকে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় পরিষদের ৭জন ইউপি সদস্য ও একটি কুচক্রী মহল তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে মেতেছেন। চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের নেতৃত্বে ইউনিয়নে এখন বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কয়েকজন ইউপি সদস্য মানববন্ধনসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগনের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যা আমরা তাদের কাছ থেকে কখনো প্রত্যাশা করিনি। এ ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র বন্ধ না করা হলে ভবিষ্যৎ এ ইউনিয়নের মানুষ উপযুক্ত জবাব দিবে বলেও হুশিয়ারি প্রদান করেন বক্তারা।

চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স তাঁর বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউপি সদস্য নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুলের সাথে আমার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে গত নির্বাচনে তাঁর পছন্দের প্রার্থী আমার সাথে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলে তিনি আমার বিরুদ্ধে এখন নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। এমনকি ওই ইউপি সদস্য জনপ্রতিনিধি ছাড়াও স্থানীয় কানিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে কয়েকবার আমার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন কিন্তু তিনি বিজয়ী হতে পারেননি। এছাড়া ১৯৯৬ সালের পর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে আমার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন কিন্তু সেখানেও তিনি আমার সাথে পরাজিত হন। এছাড়া উনার পরিবারের লোকজন এলাকায় বিভিন্ন অন্যায় কাজে লিপ্ত। সেই অন্যায় কাজে এলাকার লোকদের নিয়ে আমি প্রতিবাদ করলে ওই ইউপি সদস্য আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। সবমিলিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে ওই ইউপি সদস্যর পরাজয়তা এখন আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের কারণ। উনার নেতৃত্বে কয়েকজন ইউপি সদস্য যারা আমার কাছ থেকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পাননি তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মনগড়া অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এমনকি লোক দেখানো মানববন্ধন করেছেন। আমার কথা হলো, ইউপি সদস্যদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া থাকতে পারে। সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত কিন্তু তারা সেটি না করে একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে যদি আমি অপরাধী প্রমাণিত হই তাহলে কর্তৃপক্ষ যে শাস্তি দিবে আমি তা মাথা পেতে নিবো। কিন্তু তারা তদন্তের আগে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে সেটা দুঃখজনক।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা দিয়ে পাঠিয়েছেন এলাকার মানুষের সেবা করার জন্য, অনিয়ম ও দুর্নীতি করার জন্য নয়। কতিপয় ইউপি সদস্য আমার বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধন ও নাগরিক সনদে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন। আমি ইউনিয়নের ৭ হাজার মানুষের ভোটে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি এলাকার উন্নয়নের করার জন্য, গরীব মানুষের হক চাল-ডাল ও নাগরিক সেবা থেকে টাকা খাওয়ার জন্য নয়। আমার সময়কালে গরীবের হক আমি কোন ইউপি সদস্যকে খেতেও দিবনা নিজেও খাবনো। সরকার থেকে ইউনিয়নের সাধারণ নাগরিকের জন্য যে যে সাহায্য-সহযোগিতা আসবে তা সুষ্ঠুভাবে বন্টন করবো। এটা প্রতিশ্রুতি দিলাম।
 
ওয়াদুদ বক্স বলেন, ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধনে বাড়তি কোন টাকা নেয়া হয়না। সঠিকভাবে অনলাইনে আবেদন করে সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে জন্মসনদ ও নাগরিক সনদ নেয়ার জন্য ইউনিয়নের নাগরিকদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান। এই সেবা পেতে কোন দালালের আশ্রয় না নেয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন। বাড়তি টাকা দিয়ে কেউ দালালের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন নিতে চাইলে ওই দালাল ব্যক্তিকে যে ধরে দিতে পারবে তাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণাও দেন তিনি।

ইউনিয়নের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, গত ৭ মাসে ইউনিয়নের ৬টি রাস্তা পাকা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরমধ্যে ৩টি রাস্তার টেন্ডার শেষ হয়ে কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। বাকি ৩টি রাস্তার কাজ অক্টোবর মাসের মধ্যে টেন্ডার হয়ে যাবে। এছাড়া ৩টি রাস্তায় প্রায় ৫ হাজার ফুট রাস্তা ইটসলিং করেছি। বিশেষ করে এমপি, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, ঈদগাহ, মন্দিরে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকার বরাদ্দ হয়েছে। যার শতকরা ৮০ ভাগ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। এছাড়া ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনকে সংস্কার কাজ করানো হয়েছে। আমি দৃঢ় প্রত্যয়ে আশা করছি, আমার সময়কালে যা উন্নয়ন হবে সেটি হাজিপুরের ইতিহাসে কখনো হয়নি।

Post a Comment

Previous Post Next Post