ক্রিকেটার ইবাদত ও তার পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ



নিউজ ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইবাদত হোসেন চৌধুরী ও তার পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, হামলা ও অপপ্রচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের কাঠালতলী দক্ষিণ গ্রামের বাসিন্দা গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী দুবাই প্রবাসী আব্দুল জলিল ফুলু ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী রুয়েল কামালের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছেন ইবাদতের বাবা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি এই ঘটনার ন্যায় বিচার ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বড়লেখা পৌরসভার পানিধারস্থ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কাঠালতলী প্রাচীন জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ স¤পাদক মো. কামাল উদ্দিন, সদস্য তাজ উদ্দিন ও রহমান আলী, যুবলীগ নেতা নাজিম উদ্দিন, ইবাদতের চাচাতো ভাই দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী ইমন, ছাত্রলীগ নেতা কাওসার মির্জা রনি, ইবাদতের ছোট ভাই শাহাজান চৌধুরী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইবাদতের বাবা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার প্রতিবেশী কাঠালতলী দক্ষিণ গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে বহিস্কৃত দুবাই প্রবাসী আব্দুল জলিল ফুলু গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এরপর থেকেই তিনি এলাকার (কাঠালতলী প্রাচীন জামে) মসজিদের পঞ্চায়েত কমিটির লোকজন ও আমাকে দেখলে অত্যন্ত খারাপ ভাষায় গালাগালি করেন। তার সাথে আমার কোনো মনোমালিন্য নেই। তারপরও ফুলু বাজারে গিয়েও প্রতিনিয়ত মানুষের সামনে পঞ্চায়েতের লোকজন এবং আমার নাম ধরে গালাগালি করতে থাকেন। যা আমার ছেলেরা শুনে ফুলুর বিরুদ্ধে মসজিদের পঞ্চায়েত কমিটির কাছে বিচার দেয়। পঞ্চায়েতের লোকজন ফুলুকে ডাকলে তিনি ৩ সপ্তাহ পর গত ২৯ জুলাই মসজিদে হাজির হয়ে পঞ্চায়েতের সবার সামনে খারাপ আচরণ শুরু করেন। একপার্যায়ে তার সাথে পঞ্চায়েতের কয়েকজনের ঠেলাধাক্কা হয়। এ ঘটনার পরেই ফুলু তার আচরণে জন্য অনুতপ্ত হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চান। পরে পঞ্চায়েতের লোকজন বিষয়টি সমাধান করে দেন। কিন্তু পরে অজানা কারণে ফুলু হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন এবং থানায় আমার ছেলে-ভাতিজা ও পঞ্চায়েতের কয়েকজনের নামে মিথ্যা অভিযোগ করেন।

এই বিষয়টি সমাধানের জন্য বড়লেখা থানার ওসি ফুলুর সাথে আলাপ করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মোক্তাদির সওদাগর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলকে দায়িত্ব দেন। বিচারের শর্তমতে আমরা ২৫ হাজার টাকা প্রদান করলেও ফুলু বিচারে আসবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপরই ফুলু সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেন এবং এলাকাবাসীর সামনে প্রকাশ্যে বলেন আমার ছেলে ক্রিকেটার ইবাদতের সম্মানহানি করার জন্য প্রয়োজনে কোটি টাকা খরচ করবেন। পরবর্তীতে ফুলুর স্ত্রী আদালতে আমার ছেলে ইবাদতসহ আরও কয়েকজনের নামোল্লেখ করে মামলা করেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনার ২ মাস পর ফুলুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী রুয়েল কামাল আমার ছেলে ক্রিকেটার ইবাদতের ছবি ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে ও কিছু অনলাইন পোর্টালে মিথ্যা নিউজ শুরু করেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে সাংবাদিক রুয়েল কামাল আমাদের গ্রামের মসজিদে গিয়ে আমার সাথে ও পঞ্চায়েতের লোকজন এবং মসজিদের ইমামের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। সেদিন মাগরিবের আগে বিষয়টি নিয়ে আমার ছেলে জাহানের সাথে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তিনি আমার ছেলে জাহানকে মারধর করেন। মারধরের পর রুহেল কামাল উল্টো বড়লেখা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি আমাকে ও আমার ছেলে ক্রিকেটার ইবাদতের হোসেন চৌধুরীকে এবং আমার ছোট ছেলে জাহানকে আসামি করেছেন।

অথচ ঘটনার সময় ইবাদত ঢাকায় দুবাইতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই খবর শুনে লজ্জায় ইবাদত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এতে পরিবারের মানসম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমার পরিবার চরম আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহনীতায় ভুগছে। তাই আমি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবারের নিরাপত্তার পাশাপাশি এর সুষ্ঠু বিচার চাইছি।

অভিযোগের বিষয়ে দুবাই প্রবাসী আব্দুল জলিল ফুলু মুঠোফোনে বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। তারা সেদিন মসজিদে আমাকে মারধর করেছে। উল্টো আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে। এখন আমার বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

গণমাধ্যমকর্মী রুয়েল কামাল তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আব্দুল জলিল ফুলুকে তারা মসজিদে মারধর করেছে। সেটা নিয়ে আমি সঠিক সংবাদ তুলে ধরেছি। একারণে ইবাদতের স্বজনরা আমাকে মারধর করেছে। ক্রিকেটার ইবাদত হোসেন চৌধুরী বিরুদ্ধে মামলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইবাদতের পরিবার আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে। আমিও করেছি। আপনারা ঘটনার খোঁজ নেন তাহলে প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।

বড়লেখা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহেদ আহমদ রোববার দুপুরে বলেন, গণমাধ্যমকর্মী রুয়েল কামাল থানায় ক্রিকেটার ইবাদত ও তার বাবা-ভাইয়ের নামে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করেছি। ঘটনার দিন রুয়েলের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ইবাদতের ভাইয়ের ঠেলাধাক্কা হয়েছে। এসময় ইবাদত সেখানে ছিলেন না। আর তাদের বিরুদ্ধে প্রবাসী ফুলুর স্ত্রীর করা একটি মামলা আদালতে চলমান আছে বলে শুনেছি।

Post a Comment

Previous Post Next Post