গাছ রোপনের শর্তে দুই আসামীকে মুক্তি দিলেন চীফ জুডিসিয়াল আদালত



নিউজ ডেস্কঃ ২০১৫ সালে সীমান্তবর্তী জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে সংঘটিত মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় কবির আহমদ ও মুহিবুর রহমান নামে দুই আসামীকে ১শত গাছ রোপনের শর্তে মুক্তি দিয়েছেন মৌলভীবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান-এর আদালত।

সোমবার ৮ আগষ্ট দুপুর ২টার দিকে আসামী ও আদালত সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান এ দুই আসামীকে জীবনে প্রথমবারের মতো অপরাধ বিবেচনায় ও অভিযোগ গুরুতর না হওয়ায় “প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সের ১৯৬০” অধীনে ১শ টি গাছ রোপনসহ বেশ কিছু শর্তে মুক্তি দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক রায় দেন।

এসময় রায়ের শর্তগুলো প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়,২০১৫ সালের ১১ মার্চ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা সংঘটিত হয়। ওই ঘটনায় চন্দন কুমার দাস বাদী হয়ে কবির আহমদ ও মুহিবুর রহমান এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৭ থেকে ৮জন কে আসামী করে জি. আর ২৬/২০১৫(জুড়ী) মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৩২৩ ধারার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত। ওই রায়ের পর আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রায় সাত বছর নিয়মিত হাজিরা দেয়ার কারণে আদালত তাদেরকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ প্রদানকল্পে “প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সের ১৯৬০” অধীনে ১শত গাছ রোপন,নতুন করে কোনো অপরাধে জড়িত না হওয়া, মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা, শান্তি রক্ষা ও সদাচরণ করা, আদালতের নির্দেশমত হাজির হওয়াসহ বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে মুক্তি দেন।

রায় দেয়ার সময় আদালতে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে মৌলভীবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান বলেন, লঘুদন্ডে অনেকেই কারাগারে গিয়ে আসামীর সংস্পর্শে ভবিষ্যতে গুরুতর অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। প্রবেশনের ফলে নিজেকে সংশোধন ও অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে আসামীরা উৎসাহী হবে। দেশের কারাগারগুলোয় প্রায় প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আসামী রাখা হচ্ছে। প্রবেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত অপরাধীরা সমাজের মূল ¯্রােতধারায় ফিরে আসবে ও কারাগারগুলো মাত্রাতিরিক্ত কয়েদী হতে ভারমুক্ত হবে।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক পি,পি এ. এস. এম. আজাদুর রহমান বলেন দন্ডপ্রাপ্ত অপরাধী কারাগারে আবদ্ধ কক্ষে নয়, মুক্ত বাতাসে পরিবার পরিজনের সান্নিধ্য পাবেন যা অভিযুক্তদের সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পাবলিক প্রসিকিউটর রাধাপদ দেব সজল বলেন অধ্যাদেশটি অনেক পুরোনো হলেও প্রয়োগ ছিল না, অধ্যাদেশটি বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের নির্দেশনার আলোকে মৌলভীবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে এর দৃশ্যমান প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post