বাড়ছে তাপদাহ, অতিষ্ঠ জনজীবন



নিউজ ডেস্কঃ তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের ওপর দিয়ে। আরও দুই-তিনদিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বর্ষার সময়েও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন তাপদাহ অতিষ্ঠ করে তুলেছে জনজীবন। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের কৃষি ও দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব অসহনীয় হয়ে উঠছে।

বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। গত বুধবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঢাকা, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা ও সিলেট বিভাগেও তাপদাহ বইছে।

সারাদিন কড়া রোদের সঙ্গে প্রচণ্ড ভাপসা গরমে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বেশ কয়েক দিন ধরে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন রোগীরা। শিশু ও বৃদ্ধদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসকরা।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় তাপদাহে অনেকটা নাকাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সড়কে কমে এসেছে মানুষের চলাচল। বৃহস্পতিবার ৩৫ থেকে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে রংপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

স্থানীয়রা বলছেন, সারা দিন অনেক গরম থাকে। প্রচণ্ড রোদে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে। যারা গরিব মানুষ তাদের অবস্থা আরও খারাপ। প্রতিদিন কাজ করে খেতে হচ্ছে। গরমের ফলে বাজারে কেনা-বেচা অনেক কম।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, এক সপ্তাহ ধরে রংপুর অঞ্চলে অস্বাভাবিক আবহাওয়া ও দাবদাহ বিরাজ করছে। প্রচণ্ড দাবদাহ আর প্রচণ্ড গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেছেন, অনেকেই গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এ সময় সবাধানে চলাফেরা ও বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।

এদিকে গত দুইদিন ধরে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল সিলেটের তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার দিনভর তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। সকাল ১০টার পর থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রয়েছে তাপমাত্রা। সাধারণত সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে এই সময় ভারি থেকে অতি ভারি সৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু গত শনিবার থেকে দুয়েক জায়গায় ছিটেফোঁটা ছাড়া সিলেটে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি।

বন্যাপরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে অস্বাভাবিক তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে সিলেটের জীবনযাত্রা। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় হাসপাতালসহ ক্লিনিকগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এর প্রভাবে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। তবে এর প্রভাবে পরবর্তীতে এ সপ্তাহের শেষে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে উত্তরের জেলা দিনাজপুরেও গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত তাপদাহের কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বর্তমানে দিনাজপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে মৃদু তাপদাহ চলছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপদাহ আরও দুই-তিনদিন চলমান থাকতে পারে। বৃষ্টিপাত হলে তাপদাহ কিছুটা কমবে। ১৯ জুলাইয়ের পর জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা অব্যাহতভাবে কয়েকদিন চলবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post