'১০ সেপ্টেম্বর যার ছিলো শেষ দিন'



নিউজ ডেস্কঃ যার কথা বলছি তিনি বৃহত্তর সিলেটের গৌরব, কুলাউড়া কাদিপুর হোসেনপুর গ্রামের কৃতি সন্তান মোঃ আক্তার আলী চৌধুরী আত্তর। বাবা মরহুম ইদ্রিস আলী ও মাতা লতিফা বিবির চার ছেলের মাঝে ছোট সন্তান তিনি।

ছিলেন নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র, ৬০ দশক এবং ৭০ দশকের রাজনীতিতে এক তুখোড় ছাত্র নেতা,  ৬৬ এর দিকে তৎকালিন মন্ত্রী দেওয়ান বাছিত নিজ এলাকায় সফরে এলে তার সহযোগী বীরমুক্তিযোদ্ধা ওমর আতিক সহ পাক হায়েনাদের শাসন ব্যবস্থার প্রতিবাদ স্বরুপ কালো পতাকা প্রদর্শন করে কারাবরন করেন। কারাগারে থেকে পরবর্তীতে বের হয়ে এলে দেশের জন্য নিজেকে আরো সক্রিয় করে তোলেন।

১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধুর ভাষনে উদ্ভুদ্ধ হয়ে, সি আর দত্তের তত্তাবধানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। ৪ নং সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যারিস্টার মুন্তাকিম চৌধুরী উনার স্মৃতিচারনে মরহুম আব্দুল জব্বার, মরহুম লতিফ খান,মরহুম জুবেদ চৌধুরী,আব্দুল মুকিম,মরহুম জয়নাল  আবেদীন,আতাউর রহমান এর সাথে মরহুম আত্তর আলীকেও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে উল্লেখ করেন সেই সাথে যুদ্ধাকালিন সময়ে কৈলাশহরে ছিলেন এবং ধর্মনগরেও বিচরন ছিলো আত্তর আলীর।মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত সময়ে ভারতীয় বাহিনীর সাথে চাতলা পোস্ট দিয়ে বাংলাদেশের রনক্ষেত্রে যুদ্ধে অস্ত্র হাতে অসামান্য অবদান রাখেন তিনি।

তাইতো এই বীর কে স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ "বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি পুরষ্কার " ও " জালালাবাদ সম্মাননা পুরস্কার"(মরনোত্তর) প্রদান করা হয়।

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও সব সময় নিজের সহযোদ্ধা বীরমুক্তিযোদ্ধা সাবেক সাংসদ মরহুম আব্দুল জব্বার, বীরমুক্তিযোদ্ধা মোসাদুর রহমান, যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক,বীরমুক্তিযোদ্ধা লাল মিয়া,বীরমুক্তিযোদ্ধা আজির আলী,বীরমুক্তিযোদ্ধা আজহার আলী কমান্ডার,( সংসদ সদস্য,বীরমুক্তিযোদ্ধা  সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন এর স্বামী) বীরমুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন চৌধুরীর সাথে সুমধুর সম্পর্ক সব সময়ই ছিলো।

আত্তর আলীর মেজো ভাইর স্ত্রীর স্মৃতি চারনে জানা যায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফেনী পুলিশ কোয়ার্টার পরিদর্শনে গেলে,সেই কোয়ার্টারে অবস্থান করছিলেন আত্তর আলীর মেজো ভাই (পুলিশ) আজমল আলীর স্ত্রী। তখন বঙ্গবন্ধুর সাথেই গাড়ী থেকে বের হয়ে এসেছিলেন ওই সময়ের হালকা পাতলা গড়নের যুবক আত্তর আলী। যা দেখে মরহুমের ভাইর স্ত্রীও গৌরবীত হয়েছিলেন।

আরো একটি তথ্য থেকে জানা যায় ট্রেন যোগে আওয়ামিলীগ এর নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সহযোগী হলে সেই ট্রেনে মরহুম আক্তার আলী, মরহুম আলাউদ্দিন চৌধুরী সহ অনেকেই ছিলেন। অনেকেই ট্রেন বিরতি সুযোগে নীচে নামলেও বঙ্গবন্ধু সাথে; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বগীতেই থেকে যান মরহুম আক্তার আলী।

স্মৃতি ময় কিছু ছবিতে বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত ও মিষ্টি খাওয়াতেও  দেখা যায় বীরমুক্তিযোদ্ধা আত্তর আলী কে এবং বঙ্গবন্ধুও স্নেহ করে আত্তর আলীকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন যা মধুর এক স্মৃতি। 

তৎকালিক আওয়ামী লীগ এর প্রাণ পুরুষ, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ব্যারিস্টার মুন্তাকিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন কুলাউড়া'র রাজনীতিতে।যিনি নিজেও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহের একজন।

বৃহত্তর সিলেট আওয়ামী লীগ এর যাকে বটবৃক্ষ ভাবা হয় তিনি সাবেক মন্ত্রী,মুক্তিযুদ্ধে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রনাঙ্গনের  ৪ ও ৫ সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী সাহেবের খুব কাছের মানুষ। 

সিলেটের আরো এক  ইতিহাস, নওয়াব বাড়ী রেখে অসম্পূর্ণ আর সেই নওয়াব বাড়ীর আলী সরোয়ার খান চুন্নু নওয়াব দের সাথে রাজনীতিতে ছিলেন সরব আত্তর আলী। 

২০০২ ইং তে ব্রেইন ষ্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হলে তৎকালীন মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি, সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ সহ অনেকে দেখতে এসে অনেক স্মৃতি চারন করেন এই বীর কে নিয়ে।

সব কিছু যেনো অতীত হয়ে যেতেই ২০০৩ ইং ১০ সেপ্টেম্বর এ তিনি মৃত্যু বরন করেন। মৃত্যুর আগে অবধি আলহাজ্ব কমরউদ্দিন ওয়াকফ এষ্টেটের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ছিলেন।

ঢাকা'র রামপুরাস্থ বাসভবনের এলাকাবাসীর কাছে ও এক সময়ের নিজের অফিস ফকিরাপুল বাসীর কাছেও প্রিয় একজন মানুষ তিনি ছিলেন।নিজ গ্রাম হোসেনপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।তৎকালিন সাংসদ এম এম শাহীন শোক প্রকাশ করে বলেন একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা কে হারালাম আমরা।

রেলওয়ে সহ বিভিন্ন সেক্টরে বহু বেকার মানুষ কে তিনি কর্মক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছেন। যা এখনো অনেকের কাছে প্রশংসা হিসাবে শোনা যায়।অনেকেই দোয়া করেন এই সমাজ সেবক এর জন্য।

এই রকম মানুষ গুলো সমাজে আজ বড়ই অভাব।তারা কখনো ক্ষমতার আশা করতেন না,তারা শুধু দেশের কল্যাণ নিয়ে ভেবেছেন।তাদের গৌরবময় ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানার প্রয়োজন।

মরহুমের বড় ছেলে বীরমুক্তিযোদ্ধা আত্তর আলী স্মৃতি সংসদ চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান চৌধুরী লিটু,মরহুমের কণ্যা বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগ এর সভাপতি, ৯৮ নং ওয়াড ঢাকা মহানগর উত্তর এর আইরিন আক্তার চৌধুরী ও প্রবাসে অবস্থানরত সন্তান মোঃ আতিকুর রাহমান চৌধুরী রিন্টু সকলের কাছে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।

মহান আল্লাহ যেনো মরহুম কে বেহেস্ত নসীব করেন।আমিন। 

Post a Comment

Previous Post Next Post