চলতি সপ্তাহেই রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র!



অনলাইন ডেস্কঃ সিলেটে পুলিশ হেফাজতে রাহয়ান আহমদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) চলতি সপ্তাহেই প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর এই মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদকে হত্যার প্রায় সাড়ে ৫ মাস পর এই মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুতের  কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চলতি সপ্তাহেই এ অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ জামান।

গত বছরের ১১ অক্টোবর রাতে নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ। পরদিন সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রায়হানের লাশ পাওয়া যায়। এই হত্যাকান্ডের পর রায়হানকে নির্যাতনের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবিতে সিলেটজুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। ১২ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্য (নিবারণ) আইনে সিলেটের কতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রায়হানের স্ত্রী।

পিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই মামলার তদন্তে রায়হানকে নির্যাতনের সাথে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, বরখাস্ত হওয়া টুআইসি এসআই হাসান আলীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে তাদের আসামি করা হবে।

তবে রায়হান হত্যার পর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে পালাতে সহায়তাকারী কথিত সাংবাদিক কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমানকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হবে কি-না  তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি।

এই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলের আগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পুরো তদন্ত কার্যক্রম ও আসামীদের ব্যাপারে অবগত করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান।

সূত্র জানায়, রায়হান আহমদ হত্যা মামলার তদন্তের সময় বর্ধিত করার জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মুমিনের আদালতে আবেদন করে পিবিআই। ১৪ ফেব্রুয়ারি আবেদনের শুনানীর পর আদালত ৩০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করেন। এরপর তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ পিবিআই কর্মকর্তারা রায়হান হত্যা মামলার আদ্যোপ্রান্ত পর্যালোচনা করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেন।

জানা যায়, ইতোমধ্যে অভিযোগপত্রটি চূড়ান্ত করা হয়ে গেছে। এখন আইনী কোন ফাঁকফোকড় রয়ে গেছে কি-না তা খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি সপ্তাহের মধ্যে আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই ৬ জন এখন কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস।

এ ব্যাপারে পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে এখনো কিছু বলা যাবে না। তবে তদন্তে যাদেরই সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে তাদেরকে আসামী করা হবে। অভিযোগপত্র প্রস্তুত জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আগামী বুধবারের মধ্যে চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, নগরীর আখালিয়ার নেহারীপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে গত বছরের ১১ অক্টোবর দিবাগত রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের একটি দল। এরপর টাকার দাবিতে তাকের রাতভর ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান হাসপাতালে মারা যায়। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করেন। - সিলেটটুডে 

Post a Comment

Previous Post Next Post