বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন আজ


নিউজ ডেস্কঃ রুনা লায়লা একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশী কণ্ঠশিল্পী। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার সুনাম আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানী চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। রুনা লায়লা ছিলটি, বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, লাতিন ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। পাকিস্তানে তার গান দমাদম মাস্ত কালান্দার অত্যন্ত জনপ্রিয়।বাংলা সিনেমায় গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী বিভাগে সাত বার জিতেছেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ও পেয়েছেন। 

বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার রুনা লায়লার জন্মদিন আজ। ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। এই গুণি শিল্পীর জন্মদিনে রইলো শুভেচ্ছা।

রুনা লায়লার বাবার নাম এমদাদ আলী ও মায়ের নাম অনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা। সংগীতময় পরিবেশে বেড়ে ওঠেন রুনা। তার মা সংগীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। বিখ্যাত সংগীতশিল্পী সুবীর সেন রুনা লায়লার মামা।

রুনা লায়লার শৈশব কেটেছে পাকিস্তানের করাচিতে। ১৯৫৫ সালের মার্চে রুনার যখন আড়াই বছর বয়স, তখন তার বাবা রাজশাহীর এমদাদ আলী বদলি হন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে। সেখানেই বড় হয়ে ওঠা তার।

বড় বোন গান করতেন৷ রুনা করতেন নাচ। কিন্তু হঠাৎ বাঁকবদলে ছোট রুনাই হয়ে উঠলেন নন্দিত গায়িকা।

বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে গানের ভুবনে যাত্রা শুরু করেন রুনা লায়লা। পাঁচ দশকের সংগীতজীবনে লোকজ, পপ, রক, গজল, আধুনিক—সব ধাঁচেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রুনা। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচ, অ্যারাবিক, ফারসি, মালয়, নেপালিজ, জাপানিজ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। বলা হয়, প্রায় ১৮টি ভাষায় গাইতে জানেন গুণী এই সংগীত শিল্পী।

বাংলাদেশের সিনেমায় রুনা লায়লার গাওয়া প্রথম গান গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সুবল দাসের সুরে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’। লাহোরে থাকাকালেই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। সিনেমায় প্লেব্যাক করে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয়বার। সিনেমাগুলো হলো—‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘যাদুর বাঁশী’(১৯৭৭), ‘অ্যাকসিডেন্ট’(১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪), ‘তুমি আসবে বলে’ (২০১২) এবং ‘দেবদাস’ (২০১৩)।

বলিউডের বেশ কয়েকটি ছবিতে গান গেয়েছেন রুনা লায়লা। সর্বশেষ গেয়েছিলেন ১৯৯০ সালে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘অগ্নিপথ’ ছবির ‘আলিবাবা মিল গ্যায়া চল্লিশ চোর সে’ গানটি। বলিউডে তার গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘ও মেরা বাবু চেইল চেবিলা’। পাকিস্তানের ‘মান কি জিত’ (১৯৭২) ছবির এ গানটি ব্যবহার হয় বলিউডের ‘ঘর দুয়ার’ (১৯৮৫) ছবিতে।

রুনা লায়লা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি ‘শিল্পী’ নামক বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান তিনি। এখানে তার নায়ক ছিলেন তারই স্বামী অভিনেতা আলমগীর।

জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন রুনা লায়লা। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ পুরস্কারে ভূষিত করে। সংগীতের জন্য তিনি নিজের দেশের গণ্ডি বিদেশেও নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। রুনা লায়লা ভারতে ‘সায়গল পুরস্কার’ পেয়েছেন। পাকিস্তানে দুবার নিগার পুরস্কার, দুবার গ্র্যাজুয়েট পুরস্কার এবং ‘জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন।

এছাড়াও নব্বইয়ের দশকে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি সুরকার নিসার বাজমির সুরে একদিনে ১০টি করে তিন দিনে ৩০টি গানে কণ্ঠ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান রুনা।

সাধারণত তার জন্মদিন বিশেষ আয়োজনের মধ্য দিয়েই উদযাপিত হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে জন্মদিনটিকে ঘিরে কোন আয়োজনই থাকছে না। তবে ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ইউটিউব চ্যানেলে আজ সকালে প্রকাশিত হচ্ছে রুনা লায়লার সুর করা গান ‘এই দেখা শেষ দেখা’ গানটি। গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুর করেছেন রুনা লায়লা এবং সঙ্গীতায়োজন করেছেন রাজা ক্যাশেফ। গত ১২ ও ১৩ নবেম্বর গানটির মিউজিক ভিডিও নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছেন চন্দন রায় চৌধুরী। 

গানটি প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, ‘যেদিন প্রথম লুইপার কণ্ঠে শ্রদ্ধেয় বেগম আখতারের জোছনা করেছে আঁড়ি গানটি শুনি তখন মুগ্ধ হয়ে তাকে অভিনন্দন জানাই। পরবর্তীতে যখন এই দেখা শেষ দেখা গানটির সুর করি তখন তাকে গানটি গাইতে অনুরোধ করি এবং তার প্রতি আমার আস্থা ছিল। অনুরোধ করি এই অর্থে যে আমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থানে শিল্পী এবং প্রত্যেকেই যদি প্রত্যেককে সম্মান করি তাহলে সার্বিকভাবে আমাদের সঙ্গীতাঙ্গন আরো সুন্দর হবে। আমার প্রত্যাশার চেয়ে লুইপা অনেক ভাল গেয়েছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ধ্রুব গুহকে উদ্যোগী হয়ে গানগুলো করার জন্য।’ 

ধ্রুব মিউজিক স্টেশন সূত্রে জানা যায়- রুনা লায়লা’র জন্মদিন উপলক্ষে একে একে প্রকাশিত হবে আঁখি আলমগীরের কণ্ঠে ‘কোথায় রেখেছো আমায়’, তানি লায়লার কণ্ঠে ‘কেন হয়ে গেছি পর’ ও হৈমন্তী রক্ষিতের কণ্ঠে ‘আকাশে মেঘ জমেছে’ গান তিনটি। তানি লায়লা’র গানটির গীতিকবার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের। বাকি দুটো গান কবির বকুলের লেখা। গানগুলোর সঙ্গীতায়োজন করেছেন রাজা ক্যাশেফ। 

রুনা লায়লা প্রথম সুর করেন আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ সিনেমায়। ‘গল্প কথার ওই কল্পলোকে জানি’ গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং সঙ্গীতায়োজন করেছেন ইমন সাহা। রুনা লায়লার সুরে এই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আঁখি আলমগীর। এই গানেরই সুর করে প্রথম সুরকার হিসেবে রুনা লায়লা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। 


Post a Comment

Previous Post Next Post