নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের বাসায় থাকতে
কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে
দিয়ে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।
একাদশ জাতীয় সংসদের দশম
অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
এর আগে সমাপনী বক্তব্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন
বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।
বিরোধীদলীয় উপনেতার বক্তব্যের জবাবে
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক দফায় স্কুল খোলা হয়েছিল,
কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরে আবার তারা স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
দেশে সংক্রমণ কমার পর সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা
করেছিল। কিন্তু ইউরোপে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। বাচ্চারা স্কুলে
গেলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন,
সংক্রামক এই ব্যাধির এখনো চিকিৎসা বের হয়নি। ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি
কেন নেবেন?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
ইউরোপ–আমেরিকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশেও সে ধাক্কা আসতে শুরু করেছে।
সরকার এখন থেকেই সচেতন। প্রথম দিকে হঠাৎ সংক্রমণ শুরু হওয়ায় অনেক কাজ করা
যায়নি। কিন্তু এবার বেশি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টিকার জন্যও আগাম বুকিং
দেওয়া হয়েছে। তিনি সবাইকে মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে
চলার আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘অটো পাস’
(পরীক্ষা ছাড়া পাস) দেওয়াতে খুব ক্ষতি হয়ে গেছে এমন নয়। ইংল্যান্ডও অটো পাস
দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও অর্থনীতি গতিশীল
রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপরও মানুষের কিছু কষ্ট আছে।
সংসদের
এই অধিবেশন ৮ নভেম্বর শুরু হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়।
মোট ১০ কার্য দিবসের এই অধিবেশনে পাঁচ কার্যদিবস ছিল বিশেষ। বঙ্গবন্ধুর
প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অধিবেশনে প্রস্তাব আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা প্রস্তাবের ওপর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক এবং কর্মময়
জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন। পরে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা
হয়।
সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা একটি
দেশ দিয়ে গেছেন। বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে
চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। জাতির পিতাকে
হত্যার পর ইতিহাস থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার
নিয়ে নানা মিথ্যা রটনা করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কখনো নিজের এবং
সন্তানদের আরাম–আয়েশের কথা চিন্তা করেননি। তিনি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য
পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু
বিকেন্দ্রীকরণ করে ক্ষমতা জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।
দলমত–নির্বিশেষে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের সমন্বয়ে ঐক্য সৃষ্টি করেছিলেন।
সেই জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য ছিল দেশকে সমৃদ্ধিশালী করা। ১৯৭৫ সালের ২৫
জানুয়ারি সংবিধান সংশোধনের দিন সংসদে বঙ্গবন্ধু যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতে
এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
পরে বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণের রেকর্ডটি জাতীয় সংসদে বাজানো হয়।
স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি জি এম কাদেরের
প্রধানমন্ত্রীর
আগে সংসদে বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম
কাদের। তিনি বলেন, অফিস–আদালত, হাটবাজার—কোনো কিছুই বন্ধ নেই। সব খোলা রেখে
শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নেই। পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ
রেখে ‘অটো পাস’ দিয়ে মেধাবীদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। যারা ক্লাস করতে
চায়, তাদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। আর যারা পরীক্ষা দিতে
চায়, তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।
জি এম কাদের আরও
বলেন, সামনে শীত আসছে। দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। সরকারের তরফে
বলা হচ্ছে, সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুতি আছে। কিন্তু বেশির ভাগ রোগী বাসায়
বা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে বিশেষত মফস্বলে
কোভিডের চিকিৎসা নেই বললেই চলে। এখনই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা–সুবিধা
বাড়ানো না হলে শীতে প্রাণহানি বেড়ে যাবে।
জি এম কাদের বলেন,
অননুমোদিতভাবে অনেক হাসপাতাল চলছে। মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। একজন পুলিশ
কর্মকর্তাকে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।