কুলাউড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংরক্ষিত এলাকা থেকে মালামাল চুরি!


 

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সংরক্ষিত এলাকা থেকে আবারো রাতের আঁধারে ট্রান্সফরমার খুলে লক্ষাধিক টাকার তামার তার চুরি হয়েছে। শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঘটনাটি ঘটে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ৫জনকে আসামী করে রোববার রাতে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় প্রহরী, নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কন্ট্রোল ম্যান (এসবিএ) ও সিসি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বে বার বার চুরির ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়ে।

মামলার এজাহার ও পিডিবি সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সংরক্ষিত এলাকার দেয়ালের (সীমানা প্রাচীর) নিচের মাটি খুঁড়ে গত শুক্রবার রাতে ১০০ কেভিএ’র একটি ট্রান্সফরমার খুলে এর ভিতর থাকা তামার তার চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। যার আনুমানিক মূল্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ওই রাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কন্ট্রোল ম্যানের (এসবিএ) দায়িত্বে ছিলেন শহিদুল আনোয়ার ও ওই এলাকার প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন মো. রাসেল মিয়া। এছাড়াও বিদ্যুত অফিসের ওই এলাকা সিসি টিভি ক্যামেরার আওতাভূক্ত। ২০১৯ সালের শেষের দিকে ওই এলাকা থেকে এক মাসের ভিতর পাঁচবার চুরি সংঘটিত হয়। এতে কয়েক লক্ষাধিক টাকার বৈদ্যুতিক তারসহ মূল্যবান বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ চুরি যায়। এ ঘটনায়ও কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা দায়ের করলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুলিশ চুরিতে জড়িত থাকায় বিদ্যুত অফিসের স্টোর কিপার ও নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ পুরো এলাকা সংরক্ষিত থাকা সত্বেও ঘন ঘন চুরির ঘটনা এবং এই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুলাউড়া পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এসব চুরির ঘটনায় পিডিবির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে একটি চক্র বিদ্যুৎ অফিসের সংরক্ষিত এলাকা থেকে একাধিকবার চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। এই এলাকাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। কোটি কোটি টাকার মূল্যবান বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ রয়েছে এই এলাকায়। এই এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অপকর্ম ঢাকতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কঠের পুতুল বানিয়ে রাখা হয়েছে।

ওই রাতে প্রহরীর দায়িত্বে থাকা মো. রাসেল মিয়ার মোবাইলে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘ট্রান্সফরমারটি যেখানে ছিলো ওই জায়গাটি ঝোপঝাড় ছিলো এবং বাতি না থাকায় অন্ধকারে কিছু দেখা যায়না। ট্রান্সফরমারটি অকেজো ছিলো। দীর্ঘদিন থেকে ওই স্থানে বাতি স্থাপন ও ঝোপঝাড় পরিস্কারের জন্য দাবি জানিয়েছি কিন্তু কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দেন নি। এখন চুরির পর সবাই ঝোপঝাড় পরিস্কার করছেন।’

ওই রাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কন্ট্রোল ম্যানের দায়িত্বে থাকা শহিদুল আনোয়ার এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি ওই সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভিতর দায়িত্ব পালন করছিলাম। বাহিরে কি ঘটছে এটা আমার জানার বিষয় না। যে জায়গাটিতে ট্রান্সফরমার ছিলো সেটা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একশ গজ দূরে ও জায়গাটি জঙ্গল এবং কোন বৈদ্যুতিক বাতি ছিলোনা তাই অন্ধকার। চুরি পর জায়গাটি পরিষ্কার করা হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে বিদ্যুত অফিস থেকে এক মাসে ৫ বার চুরির ঘটনা ঘটেছিলো।’

কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের এলাকাটি সংরক্ষিত। এখানে তাঁদের নিজস্ব প্রহরী ও সিসি টিভি ক্যামেরাসহ নিরপত্তা ব্যবস্থা থাকা স্বত্ত্বেও বার বার চুরির ঘটনা ঘটছে। কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদেঁর দায়হীনতা এবং অপকর্ম ঢাকতে এসব চুরির ঘটনা ঘটিয়ে নাটক করছে।’
কুলাউড়া থানার এস আই ও ওই চুরির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সনক কান্তি দাশ বলেন, ‘এ ঘটনায় কুলাউড়া বিদ্যুত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ৫জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘এর আগেও বিদ্যুত অফিসে তার ও মূল্যবান বৈদুতিক য ন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় পিডিবির কর্মচারী দুজনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।’

বিষয়টি জানতে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই আরেফিনকে তাঁর মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।


Post a Comment

Previous Post Next Post