বরমচালে গ্যাস সংযোগের দাবি আজো উপেক্ষিত !


লুৎফুর রহমান রাজু: কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে অবস্থিত ফেঞ্চুগঞ্জ নাম সম্বলিত গ্যাসক্ষেত্রের ৫নং কূপ খনন কাজ ১০ সেপ্টম্বর ২০১৩ সালের মঙ্গলবার সকালে রিগ ‘বিজয়’ এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এই গ্যাসক্ষেত্রের খনন কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রমতে গ্যাসক্ষেত্রের ফিল্ড ইনচার্জ মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান সে দিন জানান, ৩নং কূপ থেকে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট ও ৪নং কূপ থেকে প্রতিদিন ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট, মোট ৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়ে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। তবে ১ ও ২নং কূপ থেকে আপাতত কোন উৎপাদন হচ্ছে না।


১১ মার্চ কুলাউড়া উপজেলার বরমচালের এ গ্যাস কুপটি খননের জন্য নতুন রিগ ‘বিজয় ২০১০’ এর উদ্বোধন এবং ত্রিমাত্রিক জরিপ দলের সম্মাননা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এমপি।
জানা যায়, গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়ে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এই গ্যাস উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়ে দেশে চাহিদা পূরণ করছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, নতুন এ কূপটি খননের কাজ শেষ হলে জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সময় তাদের এলাকাকে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনার দাবী ।

এদিকে সে সময় বরমচাল ফেঞ্চুগঞ্চ গ্যাস কূপে নিয়োজিত প্রজেক্টের পিডি মোঃ শাহাবুদ্দিন ও ইনচার্জ মোঃ হাসানুজ্জামান জানান, ইতিমধ্যে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ফেঞ্চুগঞ্জ একটি সমৃদ্ধ গ্যাসক্ষেত্র বলেই মনে হচ্ছে। তিনি জানান, ৪ নম্বর কূপটি খননের সময় গত জুন মাসে এটির তিনটি আলাদা স্তরে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনটি স্তরই সমৃদ্ধ। এর মধ্যে দুই হাজার ২০৮ থেকে দুই হাজার ২৪৯ মিটার গভীরের স্তরটি থেকে উত্তোলন শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২ কোটি ঘনফুট (২০ মিলিয়ন) ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে।


ভবিষ্যতে এখান থেকে দৈনিক সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্র ২ ও ৩ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক প্রায় আড়াই কোটি ঘনফুট করে গ্যাস উত্তোলন অব্যাহত আছে। যে স্তর থেকে ওই দুটি কূপের গ্যাস আসছে, নতুন কূপটি খননের সময় সেই স্তর ছাড়াও তিন-চারটি নতুন স্তরে গ্যাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪৩২ থেকে এক হাজার ৪৫০ মিটার গভীরতায় ১৮ মিটার পুরু একটি গ্যাস স্তর রয়েছে। আরও দুটি স্তর রয়েছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৮০ মিটার গভীরতার মধ্যে। আর যে স্তরটি থেকে উত্তোলন শুরু করা হয়েছে, সেটি দুই হাজার ২০৮ থেকে দুই হাজার ২৪৮ মিটার গভীরতায়।
দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসক্ষেত্রটির নামকরন নিয়ে চলতে তাকে নানা বিতর্ক। গ্যাসক্ষেত্রর অবস্থান বরমচালের উত্তর পশ্চিম সিমানায়।তার উপর নিজেদের এলাকায় নামকরণ ফেঞ্চুগঞ্জ এ বিষয়টি বরমচালবাসী মেনে নিতে পারেন নি।অনেকেই জানান
ঘরের পাশ দিয়ে গ্যাস যাচ্ছে সারা দেশে কিন্তু গ্যাসক্ষেত্রের কাছের মানুষ গ্যাস পাচ্ছেন না। এটা মানতে পারছেন না তাঁরা। তাই আন্দোলনেও নেমেছিলেন অনেকবার। বরমচালবাসীর সাথে একাত্বতা পোষণ করে এগিয়ে এসেছিলেন পার্শ্ববর্তী ভাটেরা ও ব্রাম্মনবাজার ইউনিয়নের সচেতন মানুষ। দাবি মানা না হলে পাইপলাইন স্থাপনে বাধা দেওয়াসহ কঠোর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তাঁরা।
এলাকার অনেকেই সে সময় জানান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল গ্যাসক্ষেত্র (ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র) থেকে উত্তোলিত গ্যাস প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সেই গ্যাস উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অনেক দিন ধরেই ব্রাহ্মণবাজার, বরমচাল ও ভাটেরা ইউনিয়নে গ্যাস সরবরাহের দাবি করে আসছেন এলাকাবাসী। বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, জনসভা, স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিন্তু আজ অবধি গ্যাস-সংযোগের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকার মানুষ।

গ্যাসের দাবিতে তখন ১০ মে ১৯৯৯ সালে প্রথম মানববন্ধনের আয়োজন করে বরমচাল আদর্শ ক্লাব নামের একটি সামাজিক সংগঠন।এতে এই আন্দোলন গতিশীল করতে এগিয়ে আসেন বরমচালের সচেতন সংগ্রামী মানুষ। এর পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে একেক করে করে এগিয়ে আসে অনেক সচেতন ও সামাজিক সংগঠন। গঠিত করা বরমচালে গ্যাস চাই সংগ্রাম কমিটি। কমিটির ব্যানারে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের ব্রাহ্মণবাজারে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করা হয়। পরে সেখানে তখনকার দায়িত্বে থাকা কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামছুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জানান, আন্দোলনকারীদের দাবিটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এরপর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। ততকালীন ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রফিক উদ্দিন দেশের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাশের ভাটেরা ও বরমচাল ইউনিয়ন এলাকা থেকে উত্তোলিত গ্যাস আমাদের (ইউনিয়নের) ওপর দিয়ে সারা দেশে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। এই দাবি আদায়ে সব দলের মানুষ আমরা একত্রিত।’
সেসময়ের কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামছুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসীর দেওয়া স্মারকলিপি যথাযথভাবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।’

দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আবার নতুন করে মাথা ঝাড়ি দিয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। উঠে এসেছে গ্যাসের সংযোগ ও নাম সংস্করণ করার জুরালো দাবি। অনেকেই দিয়েছেন সুচিন্তিত মতামত। নতুন করে আবার বিশাল আরেকটি আন্দোলনের জন্য অপেক্ষায় আছে পুরো বরমচালবাসী।আমরাও আশাবাদী অনতিবিলম্ব আমাদের বরমচালে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হোক ও নাম ফেঞ্চুগঞ্জ পরিবর্তন করে বরমচাল গ্যাস ক্ষেত্র করা হোক।
আমি আছি আমাদের নায্য দাবি আদায়ে স্বচ্ছার।আপনিও এগিয়ে আসুন।আওয়াজ তুলন।বরমচালে গ্যাস চাই।
তথ্যসূত্রঃবরমচালে গ্যাস উত্তলনের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু সংবাদের খন্ড খন্ড অংশ। 


লেখকঃ লুৎফুর রহমান রাজু
আন্তর্জাতিক সম্পাদক 
বরমচাল অনলাইন প্রবাসী গ্রুপ।
৭জুলাই, ২০২০ ইংরেজি।

Post a Comment

Previous Post Next Post