বিধিনিষেধ শিথিল করায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ


অনলাইন ডেস্কঃ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেয়া বিধিনিষেধ শিথিল করায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এমন ১০টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান। এই তালিকায় শীর্ষ পাঁচে রয়েছে বাংলাদেশ। জার্মানি, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের পরই উঠে আসে বাংলাদেশের নাম।

২৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে-এমন ৪৫টি দেশে আগের সপ্তাহের তুলনায় পরের সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়েছে- ৪৫টি দেশের মধ্যে অন্তত ২১টিতে লকডাউনে শিথিলতা আনার পর সংক্রমণ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ট্র্যাকিং অ্যাপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে করোনার মারাত্মক প্রাদুর্ভাবের ৪৫ দেশের মধ্যে ১০টি দেশকে শনাক্ত করা হয়েছে। মহামারী মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপে শিথিলতার ভিত্তিতে দেশগুলোর স্কোরও নির্ধারণ করা হয়েছে।

তালিকায় শীর্ষে থাকা ইউরোপের দেশ জার্মানিতে গত সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৯১ হাজার ৪৪৯ জন।

এরপরই ৩৯ হাজার ১৪ জন রোগী নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ইউক্রেন। দেশটিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ছাড়া করোনায় সবচেয়ে বিপর্যয়ের মুখে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তৃতীয়। গত সপ্তাহের তুলনায় দেশটিতে সংক্রমণ বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্বে সর্বাধিক ২৩ লাখ ৪৭ হাজার ২২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন রেকর্ড এক লাখ ২৪ হাজারের বেশি।

তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ সুইজারল্যান্ড। দেশটিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা রোগী বেড়েছে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। এরপরই পঞ্চম স্থানে আছে বাংলাদেশ; গত সপ্তাহের তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স, সুইডেন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরব। এসব দেশকেও লকডাউন শিথিল করার মাশুল দিতে হচ্ছে।

গার্ডিয়ান বলছে, এপ্রিল থেকেই করোনার ব্যাপক সংক্রমণ দেখেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ। ইরান, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে সুস্থ হওয়ার হার আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে। মহামারী মোকাবেলায় কম কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় এসব দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে এখনও কঠোর লকডাউনের মুখোমুখি হতে হবে।

অক্সফোর্ডের করোনাভাইরাস ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, কোনো দেশের মহামারী মোকাবেলায় কঠোর পদক্ষেপ শিথিল করা হলে সে দেশের স্কোর একশ’র মধ্যে ৭০-এর নিচে। করোনা মোকাবেলায় সরকারি তথ্য প্রচার, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং অবরুদ্ধ করে দেয়ার মতো ব্যবস্থাগুলোকে এই স্কোরের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়েছে।

জার্মানিতে ‘রিপ্রোডাকশন রেট’ (একজন কতজনকে সংক্রমিত করছে সে হার) গত সপ্তাহে যা ছিল এই সপ্তাহে তা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া দেশটির দুটি কাউন্টিতে ফের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে লকডাউন শিথিল করার পর সৌদি আরব ও ইরানে ভাইরাসটির দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হয়েছে। গত মে মাসজুড়ে লকডাউন শিথিল করার পর ইরানে দ্বিতীয়বারের মতো করোনার সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছেছে।

অক্সফোর্ড কোভিড-১৯ গভর্নমেন্ট রেসপন্স ট্র্যাকারের গবেষণা প্রধান থমাস হেল এর কারণ হিসেবে বলেছেন, শুরুতেই এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছিল এবং ভাইরাসটির সংক্রমণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ার পর দেশগুলো অতি দ্রুতই লকডাউন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

তিনি বলেন, আমরা আরও দেখেছি, ভারতের মতো কিছু দেশ অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে উঠতে খুব দ্রুতই লকডাউন শিথিল করেছে। আমাদের লকডাউন রোলব্যাক চেকলিস্ট দেখাচ্ছে, অনেক দেশই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই লকডাউন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post