৭৬ দিন পর আবারও প্রাণচঞ্চল উহান


অনলাইন ডেস্কঃ এক-দু’দিন নয়, ৭৬ দিন পর খোলা আকাশ দেখলেন চীনের উহানের বাসিন্দারা। এতদিন অনেকটা গৃহবন্দি অবস্থায় কেটেছে তাদের। বুধবার করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল এই শহরটিতে লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। এতে আড়াই মাস পর আবারও প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে উহান। শহরটিতে যেসব অভিবাসী কর্মী ছিলেন তারাও এতদিন আটকে ছিলেন। অন্তত ৬৫ হাজার অভিবাসী এদিন থেকেই বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানেই প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করলে ২৩ জানুয়ারি সেখানে লকডাউন জারি করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। করোনার বিস্তার রোধ করতে উহান শহরকে চীনের অন্যান্য শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের অধিকাংশই এই শহরের। ক্রমাগত মৃত্যু শহরটিকে ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত করেছিল। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানকার মানুষ শহর ছেড়ে বের হতে পারছিলেন না। বুধবার লকডাউন তুলে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিন মধ্যরাত থেকেই সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

লকডাউন তুলে নেয়ায় লোকজন এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন। চীনের অন্যান্য প্রদেশের সঙ্গে গণপরিবহন ব্যবস্থাও শুরু হয়েছে। ট্রেন, বাস, উড়োজাহাজ ছেড়েছে শহর থেকে। শহরের সীমান্ত দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেরও অনুমতি মিলেছে। তবে নতুন করে যেন করোনা সংক্রমণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আবাসনে ঢোকা ও বেরোনোর পথে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রেস্তোরাঁ, হোটেল, দোকান, বাস ও সাবওয়ে স্টেশনের তরফ থেকে বাসিন্দাদের হেলথ কোড স্ক্যান ও রেজিস্টার করানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ফলে তাদের শারীরিক অবস্থা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্যে রাখতে পারে প্রশাসন। উহান শহরে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, শহরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ চীনে যত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ৮০ শতাংশই উহানের বাসিন্দা।

এদিকে লকডাউন তুলে নেয়ার খবরে স্বস্তি পেয়েছেন উহানে আটকা পড়া অভিবাসী কর্মীরাও। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৬৫ হাজার অভিবাসী লকডাউন তুলে নেয়ার পর থেকে নিজেদের বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে অন্তত ৫৫ হাজার মানুষ ট্রেনে করে উহান ছাড়তে পারবেন। বাকি ১০ হাজারের বেশি বিমানে করে উহান ত্যাগ করবেন।

এই মানুষগুলো আড়াই মাস ধরে উহানে আটকা পড়েছিলেন।

লিউ শিয়াওমিন নামে এক অভিবাসী শ্রমিক বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে, আমি আজ বাড়ি ফিরতে পারব। উহান থেকে প্রথমে বেইজিংয়ে যাব। সেখানে আমাদের দু’দফা পরীক্ষা করা হবে বলে জানতে পেরেছি। এরপর বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮০২ এবং মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৩৩। তবে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৭৭ হাজার ২৭৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post