অনলাইন ডেক্সঃ দীর্ঘ দুই বছরেরও অধিক সময় কারাগারে বন্দি থাকার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মুক্তির পর তাকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ৭৭৫ দিন পর ফিরোজায় ফিরলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার
তার মুক্তির বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে
বুধবার বিকাল ৪টা ১২ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
(বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে বের হন খালেদা জিয়া। সেখান থেকে সরাসরি গুলশানে
নিজ বাসভবন ফিরোজায় যান তিনি।
খালেদা
জিয়াকে ঢাকা মেট্রো-ভ ১১-০৬৯২ নিশান পেট্রল গাড়িতে নিয়ে বিএনপির মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ পরিবার সদস্যরা বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে
গুলশানের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাঁচটি গাড়ি ও মাইক্রোবাসও ছিল। এ সময় দলীয়
নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে যেতে অনেক বেগ পেতে হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে।
এর
আগে তার সাজা স্থগিতের আবেদনের ফাইলে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। তার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে মুক্তির আদেশের নথি
প্রধানমন্ত্রীর দফতর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষের হাত ঘুরে
বুধবার বিকাল ৩টার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পৌঁছায়।
মুক্তির
শর্ত হিসেবে বাসায় অবস্থান করতে হবে খালেদা জিয়াকে। চিকিৎসা নিতে হবে
দেশেই। সাজা মওকুফকালীন ছয় মাস তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
মঙ্গলবার বিকালে হঠাৎ করেই ডাকা সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি
বলেন, মানবিক দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুই শর্তে তাকে মুক্তি
দেয়ার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং
বিদেশ যেতে পারবেন না- এমন শর্তে তাকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সরকারি
এ সিদ্ধান্ত জানার পর থেকে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী ও খালেদা জিয়ার
পরিবার তার মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটল।
বুধবার
সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছিল তিনি মুক্তি পাবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেয়ার
আদেশের নথি বুধবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়।
স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমকে
বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর আজ (বুধবার) দুপুর ১২টার দিকে ওই নথি
আমাদের কাছে এসেছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন তৈরি করে
কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠাবে। এর পরই ওই ফাইল কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। এ
পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
উল্লেখ্য,
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭
বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন
খালেদা জিয়া।
প্রথমে
পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে
তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
খালেদার
জামিনের জন্য আইনজীবীরা গত দুই বছরে বহুবার আদালতে গেছেন, কিন্তু জামিন
হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে মার্চের শুরুতে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তি চেয়ে
পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার খবর আসে। পাশাপাশি
প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। - যুগান্তর