চিকিৎসকদের সুরক্ষায় কুলাউড়ায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ


বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলায় চিকিৎসকদের সুরক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা রয়েছে ৫ হাজার। অথচ সিভিল সার্জন মাত্র ১০০টি সরঞ্জাম পেয়েছেন। এ অবস্থায় কুলাউড়া উপজেলায় কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম আসেনি। অবস্থা বেগতিক দেখে কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন তড়িৎ গতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে পুর্ণব্যবহারযোগ্য চিকিৎসার সুরক্ষা পোশাকসহ সরঞ্জাম তৈরি করেছে, যা মৌলভীবাজার জেলায় প্রথম। এতে কুলাউড়ায় চিকিৎসকদের চিকিৎসা দেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে এবং চিকিৎসকরা দূর্যোগকালে নিজের সুরক্ষা রাখতে পেরে ও সেবা দিতে পেরে খুশি।

এর আগে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিতকরণে পিপিই-এর দাবি জানিয়েছিলেন জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিসৎকরা। চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজের সুরক্ষার বিষয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন তারা।

বুধবার (২৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলা পরিষদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্দের আওতায় শুধু চিকিৎসকদের ৩৫ পিস পিপিই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রদান করা হয়। তবে কুলাউড়া উপজেলায় চিকিৎসা সেবার যারা জড়িত রয়েছেন তাদের সবার জন্য পিপিই প্রস্তুত করছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। প্রত্যেক সেট পিপিই এর মূল্যে ধার্য করা হয় ১২০০ টাকা।

উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও স্টাফদের নিয়ে ৬৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তার ২৫ জন, সেকমো ১০ জন, সেবিকা ১০ জন, ওয়ার্ড বয়, আয়া ও সুইপারসহ ১০ জন। উক্ত টিমের সকল সদস্যের সুরক্ষায় ‘পিপিই’ (পারসোন্যাল প্রটেকট্রিভ ইকুপমেন্ট) সেট ক্রয়ের জন্য কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

চিকিৎসক টিমের প্রতি সদস্যের জন্য জার্মস স্যুট, গ্লাভস, মাস্ক, গোগলস, ক্যাপ ও বুটসহ পিপিই সেট সংগ্রহ করা হয়েছে। ৬৫ সদস্যের টিমের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রতি ৭ দিন করে ১০ জনের টিম দায়িত্ব পালন করবে। দায়িত্ব পালন শেষে অপর ১০ জনের টিম কাজ শুরু করবে এবং দায়িত্ব পালনকারী টিমের সকল সদস্যকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

এদিকে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কুলাউড়া পলি ক্লিনিককে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান। তিনি জানালেন, করোনা ভাইরাস যতদিন না পর্যন্ত প্রতিরোধ করা যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত পলি ক্লিনিকটি আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। করোনা আক্রান্ত মানুষ ছাড়া অন্য কোন রোগী এই সময়ে ক্লিনিকে ভর্তি করানো হবে না। ক্লিনিকটি সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায় করোনা আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাবে বিরামহীনভাবে।

এছাড়া কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. শফি আলম ইউনুছের সার্বিক সহযোগিতায় কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আইসোলেশন সেন্টারে ১০টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক জানান, করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বুধবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে ৩৫ পিস পিপিই এসেছে। চিকিৎসকদের মধ্যে পিপিইগুলো বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমানের পরিচালনাধীন শহরস্থ ‘কুলাউড়া পলি ক্লিনিক’কে মঙ্গলবার থেকে ‘আইসোলেশন সেন্টার’ হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। ২০ বেডের ক্লিনিকে ইতিমধ্যে আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কাজ সম্পন্ন করে ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, দূর্যোগকালীন মুহুর্তে আমরা চিকিৎসকদের রক্ষায় কোনরকম পিপিই পাইনি। কিন্তু এই মুহুর্তে চিকিৎসকদের সুরক্ষায় পিপিই খুবই প্রয়োজন। কারণ তারা সুরক্ষিত না থাকলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে। সেই চিন্তা থেকে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে আমরা পিপিই তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আজ বুধবার আমরা ইতোমধ্যে ৩৫জন চিকিৎসককে পিপিই প্রদান করেছি। বাকি সেবিকাদেরও পর্যায়ক্রমে প্রদান করা হবে এবং এই সংকটময় মুহুর্তেও যেন চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা ঠিকমত দিতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post