আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের নতুন ইসলামবিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার লোক বিক্ষোভে রাস্তায় নেমে এসেছেন। যারা এই প্রতিবাদ-নিন্দা জানাচ্ছেন, তারা কিন্তু সবাই মুসলমান না। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু, নিম্নবর্ণের দলিত, পার্সিরাও সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।
মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে অমুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে আইনটিতে। কেবল মুসলমানদের বাদ দেয়া হয়েছে।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় পড়েছে হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। বৈষম্যপূর্ণ এই আইন বাতিলের দাবিতে গত দুই সপ্তাহের প্রতিবাদে পুলিশের নৃশংসতায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
যাই হোক, নয়াদিল্লিতে পাঁচ বিক্ষোভকারীর সঙ্গে মঙ্গলবার সরাসরি কথা বলে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ
৩২ বছর বয়সী কেরসি একজন পার্সি। তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করেন। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন কেরসি। চলতি মাসের শুরুতে ওই বিক্ষোভে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ।
কেরসি বলেন, তিনি খুবই হতাশ। এর আগে কখনও দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি এতটা নড়বড়ে হয়নি। আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তির কথা রয়েছে। সেখানে বহুসংস্কৃতিবাদ, বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। এটিই আমাদের দেশের মূল্যবোধের মূল, যা অন্য দেশগুলো থেকে আমাদের আলাদা করে দিয়েছে।
এই ভারতীয় নাগরিকের ভাষায়, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এই আইন সবচেয়ে বেশি হুমকি। এটি অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। তারা বড় একটি পরিবর্তন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কাজেই তাদের এই চাপিয়ে দেয়া আইনের সঙ্গে আমরা একমত না। কাজেই আমাদের উচিত হবে এটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
কার্ডবোর্ড সংস্কারক
২৯ বছর বয়সী মানসি একজন উচ্চবর্ণের হিন্দু। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। কিন্তু ছুটিতে নয়াদিল্লিতে বেড়াতে এসেছেন। ৬৪ বছর বয়সী বাবার সঙ্গে তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তার বাবার হাতে ভারতীয় সংবিধানের স্থপতি ও সমাজ সংস্কারক ভিমরাও আমবেদকারের একটি ছবি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা মানসি নামের এ নারী বলেন, অতীতেও চরম বিতর্কিত আইন দেশে ছিল। কিন্তু এখন যেটি তারা করতে চাচ্ছেন, তা হচ্ছে ভারতীয় নাগরিকত্বের অধিকার বদলে দিতে চাচ্ছেন। অথচ এই সংবিধানেই আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তির কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো একটি একক সম্প্রদায়ের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে যে কোনো আইনের তুলনায় এটি সুদূরপ্রসারী। তারা দেশের পরিচয় বদলে দিচ্ছেন। দেশে আগামীতে কে ভোট দিতে পারবে, তা ঠিক করে দেয়া হচ্ছে।
সংখ্যালঘুদের যখন কোণঠাসা করে দেয়া হচ্ছে, তখন তার প্রতিবাদ করা সংখ্যাগরিষ্ঠদের দায়িত্ব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক নন্দিনি। ধর্মে হিন্দু। তিনি বলেন, জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি বর্বরতায় তিনি মর্মাহত। কাজেই তাদের প্রতি সংহতি জানাতে তিনিও প্রতিবাদ করেছেন তা দেখাতে চান এই অধ্যাপক।
নন্দিনি বলেন, আমি মনে করি, অনেক হয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। এটি কোনো রাষ্ট্রবিরোধী না। রাষ্ট্রকে আমরা এমন একটি আইন করতে অনুরোধ জানাচ্ছি, যা সবাইকে সমানাধিকার দেবে; যা বিভাজনকারী ও বৈষম্যমূলক হবে না।
হিটলারের মতোই
২০ বছর বয়সী প্রণব যাদব একজন শিক্ষার্থী। নিম্নবর্ণ থেকে তিনি এসেছেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনিও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে যখন ফ্যাসিবাদী শক্তি আঘাত হানছে, তখন আমি কেবল ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমার কিছু করা উচিত বলে মনে করছি।
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ভারতের মুসলমানদের ওপর হামলা চালাতে এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যখনই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসে, তখনই মুসলমানদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেন তারা।
‘মূলত এটি একজন নেতার মতো, যিনি একটি সম্প্রদায়কে নিশানা করছেন এবং তাতে জনসমর্থন পাচ্ছেন।’
মুসলমানদের প্রতি মোদির এই আচরণকে নাৎসি হিটলার ইহুদিদের প্রতি যে আচরণ করেছেন কিংবা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি যে নির্যাতন করা হচ্ছে, তার সঙ্গে তুলনা করেন প্রণব।
তিনি বলেন, মুসলমানদের পর তারা যে কোনো সম্প্রদায়কে হামলা চালাতে পারে। সবাইকে তারা বলির পাঁঠা বানাতে চায়। এখন মুসলমানরা হচ্ছেন– বলির পাঁঠা।
স্বাধীনতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ
প্রমীলা চতুর্ভেদী একজন উচ্চবর্ণের হিন্দু। ৭৯ বছর বয়সী এই নারী বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তার শরীরে সেই শক্তি এখন আর নেই।
এই বৃদ্ধা বলেন, আমাদের সংবিধানকে সুরক্ষা দিতে চাই। মুসলমানদের সঙ্গে আমি সংহতি প্রকাশ করতে চাই। তাদের বলতে চাই– আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত তোমাদের পাশে থাকব।
সাদা চুলের খোঁপা বাঁধা এই নারী বলেন, এটি আমাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্রিটিশরা বাইরে থেকে এসেছিল। কিন্তু মোদিরা আমাদের নিজেদেরই লোক। তারা যদি এমন আচরণ করে, তবে আমাদের পক্ষে তা সহ্য করা সম্ভব নয়।
মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে অমুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে আইনটিতে। কেবল মুসলমানদের বাদ দেয়া হয়েছে।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় পড়েছে হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। বৈষম্যপূর্ণ এই আইন বাতিলের দাবিতে গত দুই সপ্তাহের প্রতিবাদে পুলিশের নৃশংসতায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
যাই হোক, নয়াদিল্লিতে পাঁচ বিক্ষোভকারীর সঙ্গে মঙ্গলবার সরাসরি কথা বলে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ
৩২ বছর বয়সী কেরসি একজন পার্সি। তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করেন। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন কেরসি। চলতি মাসের শুরুতে ওই বিক্ষোভে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ।
কেরসি বলেন, তিনি খুবই হতাশ। এর আগে কখনও দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি এতটা নড়বড়ে হয়নি। আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তির কথা রয়েছে। সেখানে বহুসংস্কৃতিবাদ, বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। এটিই আমাদের দেশের মূল্যবোধের মূল, যা অন্য দেশগুলো থেকে আমাদের আলাদা করে দিয়েছে।
এই ভারতীয় নাগরিকের ভাষায়, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এই আইন সবচেয়ে বেশি হুমকি। এটি অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। তারা বড় একটি পরিবর্তন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কাজেই তাদের এই চাপিয়ে দেয়া আইনের সঙ্গে আমরা একমত না। কাজেই আমাদের উচিত হবে এটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
কার্ডবোর্ড সংস্কারক
২৯ বছর বয়সী মানসি একজন উচ্চবর্ণের হিন্দু। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। কিন্তু ছুটিতে নয়াদিল্লিতে বেড়াতে এসেছেন। ৬৪ বছর বয়সী বাবার সঙ্গে তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তার বাবার হাতে ভারতীয় সংবিধানের স্থপতি ও সমাজ সংস্কারক ভিমরাও আমবেদকারের একটি ছবি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা মানসি নামের এ নারী বলেন, অতীতেও চরম বিতর্কিত আইন দেশে ছিল। কিন্তু এখন যেটি তারা করতে চাচ্ছেন, তা হচ্ছে ভারতীয় নাগরিকত্বের অধিকার বদলে দিতে চাচ্ছেন। অথচ এই সংবিধানেই আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তির কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো একটি একক সম্প্রদায়ের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে যে কোনো আইনের তুলনায় এটি সুদূরপ্রসারী। তারা দেশের পরিচয় বদলে দিচ্ছেন। দেশে আগামীতে কে ভোট দিতে পারবে, তা ঠিক করে দেয়া হচ্ছে।
সংখ্যালঘুদের যখন কোণঠাসা করে দেয়া হচ্ছে, তখন তার প্রতিবাদ করা সংখ্যাগরিষ্ঠদের দায়িত্ব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক নন্দিনি। ধর্মে হিন্দু। তিনি বলেন, জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি বর্বরতায় তিনি মর্মাহত। কাজেই তাদের প্রতি সংহতি জানাতে তিনিও প্রতিবাদ করেছেন তা দেখাতে চান এই অধ্যাপক।
নন্দিনি বলেন, আমি মনে করি, অনেক হয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। এটি কোনো রাষ্ট্রবিরোধী না। রাষ্ট্রকে আমরা এমন একটি আইন করতে অনুরোধ জানাচ্ছি, যা সবাইকে সমানাধিকার দেবে; যা বিভাজনকারী ও বৈষম্যমূলক হবে না।
হিটলারের মতোই
২০ বছর বয়সী প্রণব যাদব একজন শিক্ষার্থী। নিম্নবর্ণ থেকে তিনি এসেছেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনিও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে যখন ফ্যাসিবাদী শক্তি আঘাত হানছে, তখন আমি কেবল ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমার কিছু করা উচিত বলে মনে করছি।
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ভারতের মুসলমানদের ওপর হামলা চালাতে এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যখনই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসে, তখনই মুসলমানদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেন তারা।
‘মূলত এটি একজন নেতার মতো, যিনি একটি সম্প্রদায়কে নিশানা করছেন এবং তাতে জনসমর্থন পাচ্ছেন।’
মুসলমানদের প্রতি মোদির এই আচরণকে নাৎসি হিটলার ইহুদিদের প্রতি যে আচরণ করেছেন কিংবা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি যে নির্যাতন করা হচ্ছে, তার সঙ্গে তুলনা করেন প্রণব।
তিনি বলেন, মুসলমানদের পর তারা যে কোনো সম্প্রদায়কে হামলা চালাতে পারে। সবাইকে তারা বলির পাঁঠা বানাতে চায়। এখন মুসলমানরা হচ্ছেন– বলির পাঁঠা।
স্বাধীনতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ
প্রমীলা চতুর্ভেদী একজন উচ্চবর্ণের হিন্দু। ৭৯ বছর বয়সী এই নারী বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তার শরীরে সেই শক্তি এখন আর নেই।
এই বৃদ্ধা বলেন, আমাদের সংবিধানকে সুরক্ষা দিতে চাই। মুসলমানদের সঙ্গে আমি সংহতি প্রকাশ করতে চাই। তাদের বলতে চাই– আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত তোমাদের পাশে থাকব।
সাদা চুলের খোঁপা বাঁধা এই নারী বলেন, এটি আমাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্রিটিশরা বাইরে থেকে এসেছিল। কিন্তু মোদিরা আমাদের নিজেদেরই লোক। তারা যদি এমন আচরণ করে, তবে আমাদের পক্ষে তা সহ্য করা সম্ভব নয়।