কুলাউড়ায় আবারো পাহাড়ী এলাকায় উন্মত্ত হাতি আতঙ্কে চা শ্রমিকরা


বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুলাউড়া উপজেলার মেরিনা চা-বাগান এলাকায় ৪ দিন থেকে বাগানের এক টিলা থেকে আরেক টিলায় গিয়ে কর্মরত শ্রমিকদের ধাওয়া করছে উন্মত্ত একটি হাতি। হাতির আক্রমনের ভয়ে বাগানের শ্রমিকরা কাজে যেতে পারছে না। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঠিক একইভাবে একটি উন্মত্ত হাতির আক্রমনে ২ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে উন্মত্ত হাতি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও চা শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের মেরিনা চা-বাগানের ৯নং সেকশন এলাকায় গত মঙ্গলবার রাতে একটি হাতি অবস্থান নেয়। বুধবার সকালে শ্রমিকরা কাজে গেলে তাদেরকে ধাওয়া করে হাতিটি। ভয়ে শ্রমিকরা ওই টিলা থেকে নেমে অন্য টিলায় কাজ শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকালে বাগানের ১০, ১১ ও ১২ নং সেকশনে শ্রমিকরা কাজে গেলে একইভাবে উন্মত্ত হাতিটি তেড়ে আসে। ভয়ে শতাধিক চা শ্রমিক সেখান থেকে দৌড়ে এসে বাগান ব্যবস্থাপককে বিষয়টি জানান।

মেরিনা বাগানের চা শ্রমিক আগাতা গমেজ, রুচিয়া বেগম, আলিয়া সাংমা, জসিন্তা সাংমা, রিনা বুনার্জি ও পিয়ারা বেগম জানান, হাতি অবস্থানের কারণে আমরা ভয়ে কাজে যেতে পারছি না। এমনকি হাতি আক্রমনের ভয়ে আমরা নির্ঘুম রাত কাটাই। সেকশন পাহারাদার জানু মিয়া, সুমন ও হবিব মিয়া জানান, বিশাল আকৃতির হাতিটি দেখতেই ভয়ঙ্কর। মানুষের শব্দ পেলেই তেড়ে আসে।

বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি খোকা নায়েক জানান, চা-বাগান এলাকায় হাতি অবস্থান করায় বাগানসহ আশপাশের ৭-৮ টি গ্রামের শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেক দিনমজুর পাহাড়ে জ¦ালানি কাঠ সংগ্রহ করতে যায়। কিন্তু হাতির ভয়ে তারাও এখন আর যাচ্ছেনা।

মেরিনা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক রবিউল হাসান জানান, হাতি আক্রমনের ভয়ে ওই সেকশনগুলোতে বাগানের কোন শ্রমিক কাজে যাচ্ছেনা। ৪ দিন থেকে সেকশন থেকে পাতা উত্তোলন করতে না পারায় চা-পাতাগুলো বড় হয়ে উত্তোলনের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এছাড়াও হাতির তান্ডবে সেকশনের চা-গাছ, শেড-ট্রি এবং অনেক কাঠ গাছ তছনছ করে ফেলছে। সব মিলিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও থানা প্রশাসনকে অবহিত করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাতির মাহুত (হাতি দেখাশোনায় নিয়োজিত ব্যক্তি) জানান, বছরে এই সময় (আগস্ট-অক্টোবর) পুরুষ হাতিরা উন্মত্ত (স্থানীয় ভাষায় মোস্ত) হয়, তখন তারা স্ত্রী হাতির সঙ্গ পেতে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে।

কুলাউড়া বনবিট কর্মকর্তা রিয়াজ আহমদ জানান, উন্মত্ত হাতিটি বেশ বড়। বিষয়টি হাতির মালিক কর্মধা ইউনিয়নের মানিক মিয়াকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকজন মাহুত নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরপরও নিয়ন্ত্রণ না হলে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। হাতিটি নিয়ন্ত্রনে আনতে বন বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। আশা রাখি হাতিটি নিয়ন্ত্রনে আনা যাবে। এরপরও তিনি জনসাধারণকে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন।

উল্লেখ,২০১৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে পুটিছড়া বনবিটের এলাপুর নামক স্থানে পথচারিদের উপর হামলা চালায় একটি উন্মত্ত হাতি। এতে ঘটনাস্থলেই মঙ্গল খাড়িয়া (৪৫) নামক এক ব্যক্তি মারা যান। ওই ঘটনার ২০ দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর মেরিনা চা বাগানের ৮নং সেকশনে ওই হাতির আক্রমনে কর্মধা ইউনিয়নের মনছড়া গ্রামের গণি মিয়া (৫০) নামক একজন মাহুত মারা যান। পরে রসগোল্লা নামক ওই হাতিটিকে ঢাকা থেকে বন্যপ্রাণী বিভাগের বিশেষজ্ঞ টিম এসে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post