মিসরে এবার পিরামিডে বিক্ষোভ


অনলাইন ডেস্কঃ মিসরের স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসিবিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর ফের রাজপথে নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। তবে এর আগেই কায়রোর তাহরির স্কয়ার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।

তাহরির চত্বরে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য। বিক্ষোভের বিকল্প স্থান হিসেবে কায়রো থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গিজার পিরামিডে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন চলমান সিসিবিরোধী আন্দোলনের নায়ক প্রবাসী মিসরীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলি। সিসি সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তার একের পর এক ভিডিও বার্তায় গত সপ্তাহে নতুন করে আন্দোলনের সূচনা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ফের এক ভিডিও বার্তায় মিসরীয়দের বিক্ষোভ যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আলি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু তাহরির স্কয়ারে থাকা নয়। আমাদের জন্য পুরো মিসরই তাহরির স্কয়ার।’ এদিকে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের দমনপীড়ন ও ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী রাজনীতিক ও নেতাকর্মীসহ গত ছয় দিনে প্রায় দুই হাজার জনকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার ফের বিক্ষোভ ঠেকাতে এসব গ্রেফতার অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। ইজিপসিয়ান সেন্টার ফর ইকোনমিক্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটস এ তথ্য জানিয়েছে। খবর মিডিল ইস্ট আই ও লস অ্যানজেলেস টাইমসের।

গত শুক্রবার রাতে কায়রোর বিখ্যাত তাহরির স্কয়ারে সিসির পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে শতশত মানুষ। আকারে ছোট ও বিচ্ছিন্ন থাকলেও কয়েক দশক ধরে সিসির একচ্ছত্র শাসনের বিরুদ্ধে এটাই ছিল উল্লেখযোগ্য প্রথম বিক্ষোভ।

আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে কার্যত বিক্ষোভ দমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন সিসি। তাই বিক্ষোভের পরপরই তার পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় সরকার।

বিক্ষোভ ঠেকাতে বেগ পাওয়ার আগেই তা রোধ করতে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪১ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে বিক্ষোভকারী, অধিকারকর্মী, মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবী, এমনকি গত বিক্ষোভের প্রত্যক্ষদর্শীরাও রয়েছেন।

২০১১ সালে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্র ছিল তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভ। গত শুক্রবারের বিক্ষোভও সেখানেই হয়। মোবারকের পতনের পর মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুরসি। তিনি দেশটিতে নিষিদ্ধ সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য ছিলেন।

তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন সিসি। কিন্তু ২০১৩ সালে সিসি নেতৃত্বাধীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসির পতন হয়। তার জায়গায় প্রেসিডেন্টের আসন গ্রহণ করেন সিসি। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সিসির বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। মোবারকের আমলের চেয়েও কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে ন্যূনতম বিরোধিতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনাকারী কোনো মন্তব্য করলেও তার পরিণতি হয় বিপজ্জনক।

গত সপ্তাহের বিক্ষোভ অনেককেই অবাক করে। সিসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রথম স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল ওই বিক্ষোভ। আর তাই এই পরবর্তী কোনো বিক্ষোভ দমনে সরকার সর্বোপরি চেষ্টা চালাচ্ছে।

স্থানীয় অনলাইন সেন্সরশিপ পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন নেটব্লকস জানিয়েছে, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম উপায় হচ্ছে ফেসবুক।

এছাড়া দেশের প্রায় ৫০০ ওয়েবসাইট আগ থেকেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। উপরন্তু, চলতি সপ্তাহে বিবিসি ও মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত টিভি চ্যানেল আলহুরা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

শিল্পী, গীতিকার ও অন্য তারকাদের ফেসবুক ও টুইটারে সিসির প্রতি আন্তরিক আনুগত্য প্রকাশের জন্য চাপ দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমে। বিদেশি সাংবাদিকদের ই-মেইলের মাধ্যমে বলা হয়েছে, তাদের ওপর নজর রাখছে সরকার।

Post a Comment

Previous Post Next Post