কুলাউড়ায় কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা


নিউজ ডেস্কঃ একই এলাকার এক কিশোরের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সমবয়সী কিশোরীর সাথে। সেই সুবাদে প্রেমিকার বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে ওই কিশোরীর ভাই ও মা বাবা কর্তৃক খুঁটিতে হাত বেঁধে বেধড়ক মারধরে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় ইউপিসদস্যসহ ওই কিশোরে মা ও ভাই তাকে প্রেমিকার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। 

এমন ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলি গ্রামে। নিহত কিশোর সুলেমান মিয়া (১৪) ওই গ্রামের মৃত বাজিত মিয়ার পুত্র। এঘটনায় থানায় মামলা ও প্রেমিকাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি পূর্ব শত্রুতা থাকলেও প্রেমের কারণে সুলেমানকে শুক্রবার ৬ সেপ্টেম্বর ঘরের খুঁটিতে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করা হয় এবং চিকিৎসাধীনবস্থায় শনিবার ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। 

পুলিশ, স্থানীয় ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ৬ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় প্রেমিকার (কিশোরী ১৪) সাথে দেখা তার (কিশোরীর) বাড়িতে দেখা করতে যায় কিশোর সুলেমান। এসময় ওই কিশোরীর ভাই রেদোয়ান মিয়া (২৫) সুলেমানকে বোনের সাথে ঘরে দেখতে পেয়ে তাকে ঘরের খুটির সাথে হাত পা বেধে রাখে। এবং কিশোরীর ভাই ও মা বাবা একত্র হয়ে সুলেমানকে বেধড়ক মারধর করে ফেলে রাখেন। পরে কিশোরের মা ও বড় ভাই ইমান মিয়াকে মোবাইলে ফোন দিয়ে আটকে রাখার কথা জানায় রেদোয়ান। সুলেমানের মা ও বড় ভাই এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে (সুলেমানকে) উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই কিশোরীর ভাই সবাইকে দা দেখিয়ে হুমকি দেয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মাসুক মিয়াকে বিষয়টি জানানো হয়। মাসুক মিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারকে সাথে নিয়ে এসে ঘরের খুঁটিতে হাত পা বাধা ও গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। সুলেমানের মা ও ভাই আহতবস্থায় প্রথমে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা সুলেমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ৯টার দিকে সুলেমানের মৃত্যু হয়। রোববার সিলেট ওসমানী মেডিকেল মর্গে সুলেমানের লাশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুলাউড়া থানা পুলিশ সুলেমানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। 

এদিকে রোববার ৮ সেপ্টেম্বর সুলেমানের ভাই ইমান বাদি হয়ে প্রধান অভিযুক্ত রেদোওয়ান মিয়া (২৫) ও কিশোরী (প্রেমিকা) এবং তার মা বাবাসহ ৫জনকে অভিযুক্ত করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রোববার ওই কিশোরী ও তার মা বাবাকে আটক করলেও মূল অভিযুক্ত রেদওয়ানকে আটক করতে পারেনি। কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান এম এ আতিক মোবাইলে বলেন, একই এলাকার হওয়ায় ওই কিশোরীর বাড়িতে সুলেমানের যাতায়াত ছিলো। সেই সুবাদে সমবয়সী ওই কিশোরীর সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুক্রবার কিশোরীর সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায় সুলেমান। এসময় কিশোরীর ভাই তাদেরকে ঘরের ভিতর একসাথে দেখে সুলেমানকে আটকিয়ে হাত পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করে। পরে ইউপিসদস্য মাসুক মিয়া ওই বাড়িতে গিয়ে গুরুতর আহত সুলেমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। কিশোরীর মা বাবা প্রেম ও আটকে রেখে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে তিনি জানান। 

কুলাউড়া থানার ওসি তদন্ত সঞ্জয় চক্রবর্তী থানায় মামলা ও ৩জনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে এর আগে এই দুই পরিবারের মধ্যে সমস্য ছিলো। তবে ওই ঘটনার কারণ প্রেম ঘটিত। শুক্রবার কিশোরীর সাথে দেখা করতে তার (প্রেমিকার) বাড়িতে যায় সুলেমান। এসময় সুলেমানকে ঘরে আটকে রেখে মারধরের কারণে মারাত্মক আহত হয়। শনিবার রাতে সিলেটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এজাহারভুক্ত প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post