ডা. মোহাম্মদ সাঈদ এনামঃ এডিস মশা জমে থাকা অতি অল্প পানিতে বাসা বাঁধে ডিম পাড়ে বংশ বিস্তার করে। সে হিসেবে বলা যায়, ঘরের একুরিয়াম, ফুলের টব, ছাদে গাছের টব, এসি'র পানি, ফ্রীজের নীচে জমা পানি, ছোট পাত্রে জমা পানি খুবই উপযোগী এডিস মশার বংশ বিস্তারে। তাছাড়া ঘরের পাশের ছোট নালাতে সে বাস বাঁধে।
এডিস মশার ডিম ফুটে যে বাচ্চা এডিস বের হয় তার নাম লার্ভা। এসব লার্ভা পাত্রের পানিতে চ্যাংদোলা বা ল্যাজদোলা হয়ে ঝুলে থাকে। তাদের লেজ থাকে উপরে, মাথা থাকে নীচে। লেজের উপরে থাকে ছিদ্র এবং ছিদ্র দিয়ে পানির উপরিতল থেকে সে শ্বাস প্রশ্বাস নেয়। সুতরাং ভালো হলো এসব জমে থাকা পানি ফেলে দেয়া এবং পুনরায় এসব স্থানে জমতে না দেয়া।
আর যদি তা সম্ভব না হয় তবে ইনসেক্টিসাইড স্প্রে করা। তবে গৃহস্থালির কিছু উপায় আছে যার মাধ্যমে লার্ভা কে সাময়িক ধ্বংস করা যায়।
অয়েলঃ
তৈল পানির চেয়ে হালকা। তাই সামান্য তেল পানিতে ছেড়ে দিলে তা পানির উপর একটা পাতলা আবরণ তৈরি করে ফলে লার্ভা শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা পাড়ে। অলিভ ওয়েল, ভেজিটেবল ওয়েল, নিমের তৈল, ইউক্যালিপটাস তৈল এতে উপকারী।
ভিনেগারঃ
পরিমিত মাত্রার ভিনেগার সলিউশন এডিস মশার লার্ভাকে ধ্বংস করে। মাত্রা হবে ৮৫ ভাগ পানি ও ১৫ ভাগ ভিনেগার।
লিক্যুইড সোপঃ
বাসন ধোবার লিক্যুইড সোপ অল্প পরিমানে জমে থাকা পানিতে ছেড়ে দিলে লার্ভা মরে যায়।
ব্লিচিং পাউডারঃ
ব্লিচিং পাউডার যদিও স্বাস্থ্যের জন্যে ঝুঁকি পূর্ন তবে এক চামচ ব্লিচিং পাউডার এক গ্যালন পানিকে এডিস লার্ভা মুক্ত রাখতে পারে।
কেরোসিন তৈলঃ
পূর্বে সচেতন গ্রামের মানুষ বাসা বাড়ির আঙিনায় বা আশা পাশে নালা নর্দমার মশা মাছি, কিট পতংগ, সাপ বিচ্ছি তাড়াতে কেরোসিন ছিটিয়ে দিতেন। তবে সেটাও স্বাস্থ্য সম্মত নয়।
মাছের চাষঃ
কিছু মাছ আছে যাদের খাদ্য মশার লার্ভা। যেমন কই মাছ। সুতরাং আশে পাশে পুকুর ডোবা, নালার মশা মাছি ধ্বংস করতে কই মাছ ছেড়ে দেয়া যায়।
তবে প্রাকৃতিক এসব উপায় কয়েকটি পরিবেশ বান্ধব হলেও দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে খুব একটা কার্যকর নয়।
কিছু কিছু রোগ আছে যাদের বেলায় প্রতিকার এর চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। ডেংগু সেরকম একটি রোগ। অসচেতনতায় যেকোন রোগই ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। যেহেতু মশার মাধ্যমে ছড়াউ আর সে মশা সাধারণত ঘরেই থাকে, তাই নিজের ঘর দোয়ার নিজেকেই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ডেংগু ভাইরাস বাহক এডিস মশা দিনে কামড়ায়। তাই লম্বা ডিলে ঢালা পোশাক, মশারী ব্যবহার, স্বাস্থ্য সম্মত মশার কয়েল স্প্রে ব্যবহার করুন। ডেংগু জ্বর আক্রান্ত রোগী কে যাতে মশা কামড় দিতে না পারে সেজন্যে রোগী এবং নিজে উভয়েই মশারি ব্যবহার করা। কারন ডেংগু জ্বরের রোগীকে মশা কামড়িয়ে প্রথমে মশা ডেংগু আক্রান্ত হয়, পরে সে সুস্থ মানুষ কে কামড়িয়ে তার লালার মাধ্যমে ডেংগু ভাইরাস ছড়ায়।
ডা. মোহাম্মদ সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, দক্ষিন সুরমা।
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
মেম্বার, আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজি।

