কানাডায় একই পরিবারের ৪ জনের দাফন, স্বজনদের আহাজারি


অনলাইন ডেস্ক: স্বজন এবং পরিচিত শতশত প্রতিবেশীর অশ্রুসিক্ত আহাজারির মধ্যে জুমার নামাজের পর স্কারবরো সিটিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব টরন্টোতে জানাজ শেষে একই পরিবারের চার বাংলাদেশিকে কানাডার স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার দাফন করা হলো একই সিটির রিচমন্ড হিলে মুসলিম কবরস্থানে।

জানাজায় স্বজনেরা জড়ো হয়ে কেবল দোয়া করেছেন নিহতদের জন্যে। দাফনের সমস্ত অর্থ সংগ্রহ করতে ‘গো ফান্ড মি পেইজ’ খোলা হয়েছিল অনলাইনে। আফনান আলিবাকাস নামক এক ব্যক্তির খোলা এই পেইজে বিপুল পরিমাণ তহবিল এসেছে। কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কানাডা পুলিশ মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করতে চায়নি। তবে ধারালো ছুরি দিয়ে তাদের নৃশংসভাবে হত্যার তথ্য মেহনাজ নিজেই ওয়েবসাইটে দিয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরাও শোকাচ্ছন্ন। কারণ, মনিরুজ্জামান ছিলেন খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ। মাঝেমধ্যেই কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করতেন। কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের ২৫তম বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন ঘটা করে। সে সময় আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও প্রতিবেশীরা আমন্ত্রিত ছিলেন।

এর আগে, গত রবিবার বিকাল ৩টায় কানাডার পুলিশ টরন্টোর মারখাম উপশহরের ক্যাসেলমোর এভিনিউর বাসা থেকে মনিরুজ্জামান (৫৯) ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম (৫০), কন্যা মালিসা জামান (২১) এবং মমতাজের মা ফিরোজা বেগম (৭০) এর লাশ উদ্ধার করে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় মনিরুজ্জামানের একমাত্র পুত্র মেহনাজ জামান (২৩) কে। মেহনাজের বিরুদ্ধে মা, বাবা, বোন এবং নানিকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে কানাডা পুলিশ।

সে অভিযোগে গত ২৯ জুলাই তাকে টরন্টো সিটির নিউ মার্কেট আদালতে হাজির করার পর জামিনহীন গ্রেফতারি পরোয়ানা শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকেই গতকাল শুক্রবার তাকে আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজির করা হয়। এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ৮ আগস্ট।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলের মনিরুজ্জামান দম্পতি ১৯৯২ সাল থেকেই কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাদের পুত্র মেহনাজের জন্ম টরন্টোতেই এবং সে ৪ বছর আগে টরন্টোর একটি ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়। মা-বাবা, একমাত্র বোন এবং নানিকে হত্যার পর ‘পারফেক্ট ওয়ার্ল্ড ভয়েড’ নামক একটি ফ্যান্টাসি গেমের ওয়েবসাইটে হত্যার কারণ উল্লেখ করে সে পোস্ট দেয়। ঐ গেম যারা খেলে তাদের কাছেও সে তিনজনকে হত্যার পর ছবিসহ তা অবহিত করে। কিন্তু সকলেই সেটিকে ফাজলামি/কৌতুক ভেবেছিল। এক পর্যায়ে খেলার বন্ধুরা মেহনাজের আচরণে ভীত হন এবং মেহনাজের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর তার কানাডার অবস্থান নিশ্চিত হয়েই কানাডা পুলিশকে ঘটনা অবহিত করা হয়। কিন্তু পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাকশনে না যাওয়ায় ৩ জনকে হত্যার পর বাবা যখন বাসায় ফেরেন, তাকেও হত্যা করা হয়। এরপর আবারো যথারীতি সে তথ্য পোস্ট করে মেহনাজ। মেহনাজ  সেখানে আরো উল্লেখ করেছে, ভার্সিটিতে ভর্তির ৬ মাসের মধ্যেই সে ড্রপআউট হলেও বাসায় সে কথা গোপন করে। এভাবেই অতিবাহিত হয় সাড়ে ৩ বছর। সে তার অভিভাবককে জানিয়েছিল যে, ২৮ জুলাই তার গ্র্যাজুয়েশন হবে। সেজন্যে ঐদিনই সকলতে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, গ্র্যাজুয়েশনের কোনও নমুনা সে দেখাতে পারবে না। মিনহাজ আরও লিখেছে যে, সে ধীরে ধীরে নাস্তিকে পরিণত হয়েছে। এটি তার মা-বাবা সহ্য করতে পারবে না। সামাজিকভাবেও তারা লজ্জা পাবেন। এজন্যে তাদেরকে হত্যা করাই শ্রেয় বলে মিনহাজ লিখেছে। সে আরো লিখেছে, মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি চারজনকে হত্যা করেও বেঁচে থাকবো। কারণ, কানাডায় মৃত্যুদণ্ড নেই। - বিডি-প্রতিদিন

Post a Comment

Previous Post Next Post