জুলাই থেকে ই-পাসপোর্ট চালু করতে যাচ্ছে সরকার


অনলাইন ডেস্কঃ আগামী জুলাই থেকেই দেশে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) চালু করতে যাচ্ছে সরকার। নাগরিক ভোগান্তি কমাতে এবং একজনের নামে একাধিক পাসপোর্ট করার প্রবণতা বন্ধ করতে এই ই-পাসপোর্ট চালু করতে যাচ্ছে সরকার। বিদেশগামী শ্রমিকদের সুবিধার কথা ভেবে পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হচ্ছে বলে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানানো হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের মধ্যেই ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট চালু হবে। আর আগামী জুলাই থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হবে।”

বাংলাদেশে হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বা এমআরপি প্রবর্তনের পর এক দশকও পার হয়নি। কিন্তু এমআরপির ডেটাবেইজে ১০ আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এক ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট করার ঘটনা দেখে সরকার ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নেয়।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে গত বছর জুলাইয়ে জার্মানির কোম্পানি ভেরিডোসের সঙ্গে চুক্তি করে পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদপ্তর। সোয়া তিন হাজার কোটি টাকায় বাংলাদেশকে ই-পাসপোর্ট ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করবে তারা।

ওই টাকায় প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে ২০ লাখ পাসপোর্ট বুকলেট, ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট তৈরির সরঞ্জাম, আনুষঙ্গিক হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং ১০ বছর রক্ষণাবেক্ষণ সেবা দেবে। গত বছর ২১ জুন প্রকল্পটি একনেকের সায় পায়।

প্রবাসী শ্রমিকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে গত কয়েক বছর ধরে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা চলেছিল সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করা হলে এতে পাতার সংখ্যাও বাড়বে। বর্তমানে ৪৮ পাতার পাসপোর্ট চলছে।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মজিদ খান, নাহিম রাজ্জাক এবং নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) অংশ নেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাহবুবুজ্জামান, মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খোরশেদ আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

যেমন হবে ই-পাসপোর্ট
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাঁকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।

বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে ‘পাবলিক কি ডাইরেকটরি’তে (পিকেডি)। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভান্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে।

ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে পিকেডিতে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে নেবে এবং আবেদন গ্রহণ করে বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার কিংবা বাতিল করে সিল দেবে। স্থল ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও একই পদ্ধতিতে পিকেডিতে ঢুকে ই-পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করবে।

ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য দেশের প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরে চাহিদামোতাবেক ই-গেট স্থাপন করে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হবে। যাদের হাতে ই-পাসপোর্ট থাকবে, তাদের এই গেট দিয়ে সীমান্ত পার হতে হবে। তবে যাদের হাতে এমআরপি পাসপোর্ট থাকবে, তাদের ইমিগ্রেশনের কাজ বিদ্যমান পদ্ধতিতে চলমান থাকবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post