আবিদার স্মার্টফোন এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন তানভীর


নিউজ ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় খুন হওয়া নারী আইনজীবী আবিদা সুলতানার ব্যবহৃত আরও একটি মুঠোফোন উদ্ধার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। বুধবার (২৯ মে) বেলা দেড়টার দিকে মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বুধবার (২৯ মে) দুপুর দেড়টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা মাদ্রাসার মসজিদের ইমামের ছেলের গাড়ি চালকের কাছ থেকে আবিদার ব্যবহৃত স্মার্টফোন উদ্ধার করে পুলিশ। আবিদা হত্যা মামলার প্রধান আসামী তানভীর আলম স্মার্টফোনটি ওই গাড়ি চালকের কাছে বিক্রি করেছিলেন।

এর আগেরদিন মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওই মাদ্রাসা এলাকায় রাখা তানভীর আলমের ব্যাগ থেকে আবিদার আরকেটি মুঠোফোন উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। আর সোমবার বরুণা মাদ্রাসা এলাকা থেকেই তানভীরকে আটক করে পুলিশ। তানভীল বড়লেখায় আবিদায়র বাবার বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন।

শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস ছালেক বুধবার (২৯ মে) বলেন, ‘আমরা দুদিন ধরে যখন বরুণা এলাকায় অভিযান চালাচ্ছিলাম, তখন মাদ্রাসার মসজিদের ইমামের ছেলের গাড়ি চালক আমাদের কাছে মুঠোফোন কেনার বিষয়টি জানায়। তাঁর দেওয়া তথ্য আমরা যাচাই করে নিশ্চিত হই, এটা আইনজীবী আবিদার মুঠোফোন। তানভীর স্মার্টফোনটি এক হাজার টাকায় চালকের কাছে বিক্রি করেছিল। ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। এটি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

রোববার মধ্যরাতে বড়লেখায় ঘরের ভেতর থেকে আবিদা সুলতানার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সোমবার রাতে বড়লেখা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন আবিদার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন- আবিদা সুলতানার বাবার বাসার ভাড়াটিয়া তানভির আলম (৩৪), তানভিরের ছোট ভাই আফছার আলম (২২), স্ত্রী হালিমা সাদিয়া (২৮) এবং মা নেহার বেগম (৫৫)। তাদের স্থায়ী ঠিকানা সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ছিল্লারকান্দি।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে আদালতের মাদ্যমে আসামীূদের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তানভির আলমের ১০ দিন এবং তাঁর স্ত্রী সাদিয়া ও মা নেহার বেগমের আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

পুলিশ, নিহতের পরিবার, মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে। তাঁর স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি দ্বিতীয় মেয়ের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে থাকেন। মেয়েদের মধ্যে আবিদা সুলতানা (৩৫) সবার বড়। তিনি মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। আবিদার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরে বসবাস করতেন। ছুটির দিনে বাবার বাড়ি দেখাশোনা করতে সেখানে যেতেন। গত রোববার (২৬ মে) আবিদা সুলতানা বোনের বাড়ি বিয়ানীবাজার ছিলেন। ওইদিন (গত রোববার) সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় জরুরি প্রয়োজনে তিনি বাবার বাড়িতে আসেন। বাবার বাড়ি আসার পর বিকেল পাঁচটার দিক থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আবিদা সুলতানার স্বামী ও বোনরা তাঁকে খুঁজতে বাবার বাড়ি মাধবগুল গ্রামে আসেন। বাড়িতে এসে তারা ঘরের কক্ষ বন্ধ দেখতে পান। চার কক্ষবিশিষ্ট বাসার দুই কক্ষে আবিদা সুলতানা ও তাঁর বোনরা বেড়াতে আসলে থাকেন। বাকি দুটোতে ভাড়া থাকতেন তানভির আলমের পরিবার। তিনি তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম। এসময় তানভির আলমের পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তারা ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের এক আত্মীয় বাড়িতে ছিলেন। পরে ভাড়াটেরদের কাছ থেকে চাবি এনে ওইদিন (গত রোববার) রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘরের দরজা খুলে দেখে আবিদা সুলতানার মৃতদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। পুলিশ ওইদিনই তানভির আলমের স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তানভির আলমকে গত সোমবার (২৭ মে) দুপুরে শ্রীমঙ্গলের বরুণা এলাকা থেকে আটক করা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post