রাজাপক্ষের প্রস্থানে শ্রীলঙ্কায় অচলাবস্থা অবসানের আশা


অনলাইন ডেস্কঃ ‘দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে’ অবশেষে পদত্যাগ করলেন শ্রীলঙ্কার বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। আর এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে মাস দেড়েক ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অচলাবস্থার ইতি ঘটল। শেষ হলো ক্ষমতার লড়াইও। যদিও এ লড়াইয়ের কারণে এরই মধ্যে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেছে দুই কোটি ১০ লাখ মানুষের এ দ্বীপরাষ্ট্র।

গতকাল শনিবার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন রাজাপক্ষে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি অবশ্য পদত্যাগের বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতি দেননি। তাঁর এক সহযোগী গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, রাজাপক্ষে এরই মধ্যে সরকারি গাড়িবহর ফিরিয়ে দিয়েছেন।

গত ২৬ অক্টোবর দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করেন প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সিরিসেনা। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে রাজাপক্ষেকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন তিনি। কিন্তু বিক্রমাসিংহে সেই বরখাস্তের আদেশ বেআইনি দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। ফলে ২৬ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মূলত দুজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর পার্লামেন্টের এক আস্থা ভোটে হেরে যান একসময়কার প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে। পরদিন স্পিকার কারু জয়াসুরিয়া ঘোষণা দেন, তিনি কাউকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন না। তাঁর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশটি কার্যত ‘সরকারশূন্য’ হয়ে পড়ে। বাজেট পাস না হওয়ায় পুরো সরকারব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়। মুখ ফেরাতে শুরু করে ঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া কয়েক দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট জানান, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত রাজাপক্ষে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চর্চা করতে পারবেন না।

এ অবস্থায় শুক্রবার রাজাপক্ষের ছেলে নামাল রাজাপক্ষে জানান, দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে শনিবার (গতকাল) তাঁর বাবা পদত্যাগ করে ক্ষমতার লড়াই থেকে সরে দাঁড়াবেন।

একই দিন (শুক্রবার) নিজের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা জানান, রনিল বিক্রমাসিংহের সরকারকে পুনর্বহাল করতে তিনি রাজি আছেন। যদিও এর আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বলে আসছিলেন যে তিনি কখনোই বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি দেবেন না।

গতকাল অবশ্য সিরিসেনা কিংবা তাঁর দপ্তরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য লক্ষ্মণ ইয়াপা আবেওয়ার্দানা শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের জানান, সরকারের অচলাবস্থা ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো মেনে নিতে সিরিসেনা রাজি আছেন। তিনি বলেন, ‘অচলাবস্থা চলতে থাকলে ২০১৯ সালের জন্য আমরা কোনো বাজেট পাব না। ফলে সরকার অচল হয়ে যাবে।’

কয়েক দিন আগে সিরিসেনা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তাঁকে হত্যার ছক কষা হয়েছিল। আর এ বিষয়টিতে গুরত্ব না দেওয়ার কারণেই তিনি বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হন।

গত বৃহস্পতিবার বামপন্থী দল ‘পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট’ (জেভিপি) দাবি তোলে, ‘গুপ্তহত্যার নাটক’ সাজানোর অভিযোগে সিরিসেনার বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত। প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। একই দিন সিরিসেনাকে আরেকটি দুঃসংবাদ শোনান সুপ্রিম কোর্ট। এক রায়ে আদালত বলেন, ‘গত ৯ নভেম্বর পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে এবং আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে সিরিসেনা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।’ সূত্র : এএফপি।

Post a Comment

Previous Post Next Post