প্রচার শেষ, ভোট উৎসবের অপেক্ষায় দেশ


অনলাইন ডেস্কঃ সংঘাত-সহিংসতা আর প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলার মধ্য দিয়ে শেষ হল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার। এক দশকেরও বেশি সময় পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের অপেক্ষায় দেশবাসী। তাই ভোটারদের চাওয়া প্রচার অসম হলেও ভোট যেন সুষ্ঠু হয়।

নির্বাচনের প্রতীক পাওয়ার পর থেকে টানা ১৮ দিন বিরামহীন প্রচার চালানোর পর আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া প্রচারের সময়সীমা শেষ হয়েছে। ‘বিরামহীন প্রচার’ কথাটি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে খাটলেও এবার বিরোধী দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এটি সম্ভবত যায় না।

কারণ বহু আসনে ধানের শীষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঠিকমতো প্রচার চালাতে পারেননি। কোনো কোনো আসনে তো খোদ প্রার্থীকেই হামলার শিকার হতে হয়েছে গণসংযোগ করতে গিয়ে। কোনো কোনো আসনে প্রার্থী প্রচারেই নামতে পারেননি মামলা ও হামলার আশঙ্কায়। আবার ধানের শীষের বেশ কজন প্রার্থী জেলে বসেই নির্বাচন দেখতে হচ্ছে।

এগুলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্যকে ম্লান করেছে নিঃসন্দেহে। তবু ভোটারদের আশা দিনশেষে ভোট যদি সুষ্ঠু হয়! বেশিরভাগ আসনেই এমন ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যে, অনেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। অনেক ভোটার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন ‘অযথাই’ ভোটকেন্দ্রে যাব কেন?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে রীতিমতো রক্তের হোলি খেলা হয়েছে এমন অভিযোগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের। প্রচারে গিয়ে অন্তত ৫০ প্রার্থী হামলার শিকার হয়েছেন। গুলিবিদ্ধও হয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ রক্তাক্ত জখম হয়েছেন।

এত বাধা এত বিপত্তি দেশের কোনো নির্বাচনে হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। গত ১০ বছর ধরে যারা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটের আশায় ছিলেন, অসম প্রচারে তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।

যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। তবে ভোটারদের মনে যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে, তা অস্বীকার করাটা কঠিন।

যাই হোক, আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পরই শুরু হয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত ভোটপর্ব। ভোটাররা সেই প্রতীক্ষায় আছেন। তারা ভোটের মাধ্যমে রায় দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য কোনো একটি দল/জোটকে ক্ষমতায় বসাবেন।

৩০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এর পরই ফল প্রকাশ করা হবে।

প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটগ্রহণ পিছিয়ে গেছে। এ নির্বাচনের ফলে নির্ধারিত হবে আগামী দিনে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট সরকার গঠন করবে। এদিন ভোট দেয়ার সুবিধার্থে সারা দেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নির্বাচনে নতুন প্রায় এক কোটি ২৩ লাখ ভোটার প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবেন। এ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন আসনে সহিংস ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে। হামলার শিকার হয়েছেন বড় দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।

এদিকে ১০ বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি হয়েছে। এবার নিবন্ধিত সব (৩৯টি) রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৮০০’র বেশি প্রার্থী। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রায় ১ হাজার ৭৫০ জন। বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী অংশ নেয়ায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল বর্জন করেছিল।

এবার সব দল অংশ নেয়ায় সারা দেশে নির্বাচনী আবহ বিরাজ করছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের বিস্তর অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসন ও পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির। একই অভিযোগ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, বাম রাজনৈতিক মোর্চাসহ আরও কয়েকটি দল। ফলে এবারের ভোট ঘিরে উৎসবের পাশাপাশি শঙ্কাও বিরাজ করছে। বিএনপি, ২০-দলীয় জোটের শরিক ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে নির্বাচন কমিশনে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার ৩০০ আসনে ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার। এতে ৪০ হাজার ১৮৩ ভোটকেন্দ্র ও ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৭ ভোটকক্ষ রয়েছে। এবারই প্রথম ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। যদিও এ মেশিন ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় সাত লাখ কর্মকর্তা। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছয় লাখের বেশি সদস্য।

এরই মধ্যে সেনা ও নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়া সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা মনিটরিংয়ে শুক্রবার ইসিতে ‘আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং’ কমিটি কার্যক্রম শুরু করবে।

২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সারা দেশে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ এবং ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সড়ক ও নৌপথের যানচলাচল বন্ধ থাকবে। #যুগান্তর

Post a Comment

Previous Post Next Post