সুলতান মনসুরে ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়া বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ছিল দুটি বলয়। কমিটিও আছে দুটি। দল এক হলেও দু’ধারায় ছিল উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে বয়ে চলা এই দ্বন্দ্ব নিরসন হয়েছে। দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও ভেদাভেদ ভুলে এখন ঐক্যের সুর কুলাউড়া বিএনপিতে। দু’গ্রুপের নেতাকর্মীরা এখন একসঙ্গে বসছেন। ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঘরোয়া বৈঠকও করছেন। তাদের মত দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

দীর্ঘদিন পর উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দৃশ্যে উজ্জীবিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। ধানের শীষকে বিজয়ী করতে ভোটের মাঠে একাত্ম হয়ে কাজ করবেন এমন প্রতিশ্রুতিও যেমন দিচ্ছেন তেমনি সবাই একসঙ্গে বসে নানা পরামর্শ, কৌশল ও পরিকল্পনা নির্ধারণও করছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ মনোনীত হওয়ার পর তিনি ঢাকা থেকে পারাবত ট্রেনযুগে কুলাউড়ায় জংশন স্টেশনে পৌঁছালে উপজেলা বিএনপির দু’গ্রুপই তাকে বরণ করেন। এরপর তার কুলাউড়াস্থ বাসায় উঠান বৈঠক ও ঘরোয়া বৈঠকে একসঙ্গে বিভদমান দু’গ্রুপের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। 

জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে উপজেলা বিএনপির দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ওই সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর ডা. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন তৎকালীন বিএনপি নেতা এমএম শাহীন। তখন একটি গ্রুপ চলে যায় এমএম শাহীনের সঙ্গে আর অন্যগ্রুপ নিজেদের মূলধারা দাবি করে থাকেন বিএনপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার সঙ্গে। তারা ওই নির্বাচনে জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজও করেন। ওই নির্বাচনের পর দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয় এমএম শাহীনকে। অবশ্য এ নির্বাচনে এমএম শাহীন নির্বাচিত হন। এরপর ওয়ান ইলেভেনে তিনি ফেরদৌস কোরেশীর দল পিডিবিতে যোগ দেয়া ও নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে আর দলে ফিরতে পারেননি। তারপরও তিনি নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে দলীয় ব্যানারে আন্দোল-সংগ্রামে সংযুক্ত হয়ে দলীয় কর্মী ও সমর্থককে নিজের পক্ষে ধরে রাখার চেষ্টা চালাতেন। এমএম শাহীন স্বতন্ত্র হওয়ায় এই দুটি নির্বাচনেই দলের নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হন এমনকি দল ও জোটের প্রার্থীরাও পরাজিত হন। আর এ থেকেই কার্যত দুটি ধারায় চলত কুলাউড়া উপজেলা বিএনপি। একটি গ্রুপের নেপথ্যে থাকতেন এমএম শাহীন। আর অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। দীর্ঘদিন থেকে কুলাউড়া বিএনপি চলছিল এভাবেই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমএম শাহীন বিকল্পধারায় যোগ দেয়ায় তার বলয়ের উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে তার সঙ্গ ত্যাগ করেন। এরপর থেকে উভয় গ্রুপ ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সঙ্গ নেন ও তাকে বিজয়ী করতে উভয় গ্রুপই মতানৈক্য ভুলে এখন মাঠে কাজ করছে।

 ৪ঠা ডিসেম্বর রাতে উপজেলা বিএনপির উভয় গ্রুপকে একত্রিত করে ধানের শীষ প্রতীকের ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের সমর্থনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা সাবেক তিনবারের জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খানকে প্রধান উপদেষ্টা এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি বিএনপি নেতা সাবেক ৪ দলীয় জোট মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আবেদ রাজাকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলহাজ এমএ মুকিত ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজান উপস্থিত থেকে এই কমিটি গঠন করেন। নেতাকর্মীরা জানান, এর মাধ্যমেই এই ঐক্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। 

উল্লেখ্য, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে কুলাউড়ায় দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন জানিয়ে আসছে। কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, নেত্রী জেলে আর দলের দুর্দিন। সামনে চ্যালেঞ্জের নির্বাচন। সব বিবেচনায় দ্বন্দ্ব ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করতে। জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিলগ্ন যাচ্ছে। দেশনেত্রী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে ও দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার কোনো বিকল্প নেই। আজ থেকে আর কোনো দ্বন্দ্ব বা ভেদাভেদ না রেখে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন এমনটিই প্রত্যাশা দেশের প্রতিটি জিয়া প্রেমিক সৈনিকদের। জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলহাজ এমএ মুকিত বলেন, সবাই ভেদাভেদ দূরে ঠেলে স্ব-উদ্যোগেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন। ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করতে হবে। সবাই একত্রিত হওয়ার এমন দৃশ্যে এখন নেতাকর্মীরা উদ্দীপ্ত ও আনন্দিত। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান মিজান এ বিষয়ে জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভেদাভেদ ভুলে মনেপ্রাণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমরা ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে নেমেছি, ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করবো। তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার উদাত্ত আহ্বান জানান।

Post a Comment

Previous Post Next Post