‘বিমান বাহিনী জাতির গর্বের প্রতীক’


অনলাইন ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাতির গর্বের প্রতীক। দেশের আকাশসীমার প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে দেশ ও জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন।

বুধবার দুপুরে যশোর বিমান বাহিনী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৭৫তম বাফা কোর্স ও ডিরেক্ট এন্ট্রি ২০১৮ কোর্সের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন। রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ এবং ফ্লাইট ক্যাডেটদের মধ্যে পদক, সনদপত্র এবং ফ্লাইং ব্যাজ বিতরণ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, সামরিক কৌশলগত দিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে একটি আধুনিক পেশাদার ও চৌকস বিমান বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা জাতির পিতা উপলব্ধি করেছিলেন। এ উপলব্ধি থেকেই তিনি বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র তিনটি পুরানো বিমান নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ অনেকদূর এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে আমাদের বিমান বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। এ সব যুদ্ধ উপকরণে বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অত্যাধুনিক এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস ফোর্সেস গোল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সকলের জন্য বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- জাতির পিতার অনুসৃত নীতির আলোকে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ যুদ্ধ নয়, শান্তি চায়। কিন্তু আমাদের বাহিনীসমূহ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এজন্য প্রয়োজন রয়েছে দক্ষতা, যুদ্ধ উপকরণ ও আত্মনির্ভরশীলতা। সেই লক্ষ্যে নিকট ভবিষ্যতে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাডার ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হবে। এর মাধ্যমে বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশ এভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন এবং লালমনিরহাটে বিমান বাহিনীর জন্য অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বিমান তৈরির মতো সক্ষমতা অর্জন করবে এবং বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

নবীন ক্যাডটদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে যে মৌলিক প্রশিক্ষণ তোমরা গ্রহণ করেছ, তার যথাযথ অনুশীলন ও প্রয়োগের মাধ্যমে পেশাগত মান উন্নয়নে সদা সচেষ্ট থাকতে হবে। সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বিমান বাহিনীর ভবিষ্যত নেতৃত্বের যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।

প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর ১০ জন মহিলা ক্যাডেটসহ ৬১ জন ফ্লাইট ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। কুচকাওয়াজ শেষে বিমান বাহিনী একাডেমির বিভিন্ন প্রকার বিমানের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট অনুষ্ঠিত হয়। ফোর্সে সেরা চৌকস কৃতিত্বের জন্য ফ্লাইট ক্যাডেট স্কোয়াড্রন জুনিয়র আন্ডার অফিসার রিয়ানা আজাদকে ‘সোর্ড অব অনার’ এবং ফ্লাইট ক্যাডেট বিএম তানভীর ইসলাম রাব্বী জেনারেল সার্ভিস প্রশিক্ষণ কৃতিত্বের জন্য ‘কমান্ডান্টস ট্রফি’ ট্রফি লাভ করেন। উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে সেরা কৃতিত্বের জন্য ফ্লাইট ক্যাডেট আর এইচ এম নাফী ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি’ এবং গ্রাউন্ড ব্রাঞ্চে সেরা কৃতিত্বের জন্য ফ্লাইট ক্যাডেট মো. নাফিজ-আল-মানারকে ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি’ প্রদান করা হয়। এদিকে এক নম্বর স্কোয়াড্রন চ্যাম্পিয়ন বিবেচিত হয়ে একাডেমি পতাকা লাভ করে। উল্লেখ্য, যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে ২০০০ সালে নারী কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্তির পর থেকে এবারই প্রথম কোনো নারী ফ্লাইট ক্যাডেট সেরা চৌকস কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করার কৃতিত্ব অর্জন করলেন।

বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বিমান বাহিনী একাডেমির কমান্ড্যান্ট এয়ার কমোডর মো. শাফকাত আলীসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post