বঙ্গবন্ধু কাপ; ১-০তে হেরে গেছে বাংলাদেশ


স্পোর্টস ডেস্কঃ শেষ পর্যন্ত স্কোরলাইনই সব। সে হিসেবে ১-০তে হেরে গেছে বাংলাদেশ। তবে ওই গোলের হিসেবটা বাদ দিলে পুরো ম্যাচেই আধিপত্য বজায় রেখে খেলেছে বাংলাদেশ। তৈরি করেছিলো বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ। কিন্তু সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। গোলের খেলা ফুটবলে গোলের দেখা পায়নি জামাল ভ’ইয়ার দল। ফলে ভালো খেলেও পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়।

তবে হারলেও সেমিফাইনালে যাওয়া আগেই নিশ্চিত করে রেখেছে বাংলাদেশ। গ্রুপের রানার আপ হিসেবে কক্সবাজাওে সেমিফাইনাল খেলবে তারা।

ফিলিপাইনের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতে যাবে, খেলার আগে এমন বাজি ধরার লোক অবশ্য তেমন খোঁজে পাওয়া যেতো না। বঙ্গবন্ধু কাপ খেলতে আসা দলটি ফিলিপাইনের মূল জাতীয় দল নয়; এই দলে জাতীয় দলের ৫-৬ জন খেলোয়াড় আছেন। তবু শক্তির বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ফিলিপাইন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংযে ফিলিপাইন ১১৪, বাংলাদেশ ১৯৩। মধ্যখানে ব্যবধান ৭৯! পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ হেরেছে। কিন্তু হারার আগে কাঁপিয়ে দিয়েছে শক্তিশালী ফিলিপাইনকে।

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ১-০ গোলে। ম্যাচের ২৪ মিনিটে মাইকেল ডেনিয়েলসের একমাত্র গোলই জয় থেকে বঞ্চিত করেছে বাংলাদেশকে।

২০১১ সালে মিয়ানমারে চ্যালেঞ্জ কাপে সর্বশেষ দেখায়ও বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ফিলিপাইন। তবে সেদিন ব্যবধান ছিল বড়, ৩-০। এরও আগে, ১৯৯১ সালে অলিম্পিকের প্রাকবাছাইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল ফিলিপাইন অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল। আর ১৯৮৪ সালে এশিয়ান ন্যাশনস কাপ বাছাইয়ে ফিলিপাইনকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

এমনিতেই সিলেটে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই দর্শকদের ঢল। তারউপর আজ শুক্রবার, ছুটির দিন। তাই অন্যদিনের চেয়ে দর্শকদের ঢলও ছিলো বেশি। ম্যাচ শুরুর আগেই পরিপূর্ণ হয়ে যায় জেলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। মাঠে বল গড়াতেই দর্শকদের গগনবিদারি চিৎকারে কেঁপে ওঠে স্টেডিয়ামপাড়া। বাংলাদেশ যখন আক্রমণে ওঠছিল, তখন দর্শকদের চিৎকারে কান পাতা দায় ছিল।

প্রায় ২৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়াম পুরোটাই কানায় কানায় পূর্ণ। তপু বর্মণ, ইমন মাহমুদরা পারেননি কাঙ্খিত জয় এনে দিতে। কিন্তু ফিলিপাইন ডিফেন্সে বাংলাদেশের আক্রমণের ঢেউ উত্তাল করে তুলেছিল দর্শক গ্যালারি। ম্যাচ শেষে দর্শকদের শর্তহীন ভালোবাসাকে পুরো মাঠ ঘুরে হাত তালি দিয়ে অভিনন্দিত করে বাংলাদেশ।

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ শাণাতে থাকে বাংলাদেশ। র‌্যাঙ্কিং বিবেচনায় ফিলিপাইনের কাছে যেখানে হাঁসফাঁস করার কথা বাংলাদেশের, সেখানে ফিলিপাইন ডিফেন্সকেই কাঁপিয়ে দেন তৌহিদুল ইসলাম সবুজ, রবিউল হাসানরা। ৪ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। থ্রো থেকে উড়ে আসা বলে বক্সে তপু বর্মণের হেড ফিস্ট করেন ফিলিপাইন গোলরক্ষক মাইকেল ক্যাসাস। জটলার মধ্যে এ পা-ও পা ছুঁয়ে বল শেষপর্যন্ত ক্লিয়ার করেন এক ডিফেন্ডার। মিনিট তিনেক পরে ডান প্রান্ত দিয়ে রবিউল হাসানের জোরালো শট সরাসরি যায় গোলরক্ষকের হাতে।

বাংলাদেশের আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত ফিলিপাইন পাল্টা আক্রমণে ওঠেই গোল পেয়ে যায়। ম্যাচের তখন ২৪ মিনিট। বাংলাদেশের ডিফেন্স আর গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে বাঁ পোস্টঘেষে বল জালে পাঠান মাইকেল ডেনিয়েলস। 

দ্বিতীয়ার্ধে, ম্যাচের ৬৯ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে সবুজের দারুণ ক্রসে নাবীব নেওয়াজ জীবন মাথা ছোঁয়াতে পারলেও মারেন বাইরে। ৮০ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ফের আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। বদলি হিসেবে নামা ইব্রাহিমের ক্রস ফিলিপাইনের এক ডিফেন্ডার মাথা ছুঁইয়ে বাইরে পাঠান। পরের মিনিটে ফের বাঁ প্রান্ত দিয়ে জীবনের কাছ থেকে বক্সে ক্রস পান বদলি হিসেবে নামা সিলেটের ছেলে মতিন মিয়া। দারুণ ক্রসও করেছিলেন তিনি, কিন্তু জায়গামতো বাংলাদেশের কেউ ছিল না।

ম্যাচের একেবারে শেষদিকে আক্রমণের স্রোতে ফিলিপাইনের ডিফেন্স নামক বাঁধকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন রবিউল হাসান, রহমত মিয়ারা। কিন্তু সর্বশক্তি দিয়ে সেই বাঁধকে রক্ষা করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফিলিপাইনরা।

এই জয়ে বঙ্গবন্ধু কাপের ‘বি’ গ্রুপের সেরা হয়েছে ফিলিপাইন। শনিবার ফিলিস্তিন-নেপাল ম্যাচে যারা জয়ী হবে, তাদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। শক্তির বিচারে ফিলিস্তিনেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে সেমির লড়াইয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে ১০০তম স্থানে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে লড়াইটা বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না মোটেও।

Post a Comment

Previous Post Next Post