কাঁচামালের অভাবে বন্ধের পথে সরকারি পাটকল


অনলাইন ডেস্কঃ পাটের অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে সরকারি পাটকলগুলো। আর অর্থের অভাবে পাট কিনতে পারছে না রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)।

তাদের মতে, চলতি মৌসুমে পাট কিনতে না পারলে শিগগির মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়বে। ফলে নতুন করে সৃষ্টি হবে শ্রমিক অসন্তোষ। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পাট কেনার জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। তবে অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম যুগান্তরকে বলেন, ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়াসহ কতিপয় নির্দেশনা দেন।

সেই নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশা করি তারা ইতিবাচক সাড়া দেবেন।

জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি ২২টি মিল চালু আছে। অধিকাংশ মিলে পাটের মজুদ শূন্যের কোঠায়। তাই পাট কেনা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে না পারলে শিগগির উৎপাদন বন্ধ হবে বলে আশঙ্কা করছে খোদ বিজেএমসি।

এ জন্য দেনা পরিশোধ করে নতুন করে পাট কিনতে আবর্তক তহবিল হিসেবে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে তারা। ১১ অক্টোবর লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়- মিলগুলোতে গত ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বকেয়াসহ বর্তমানে মোট ৪৯৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা পাট কেনা বাবদ বকেয়া রয়েছে। বর্তমানে পাটের ভরা মৌসুম চলছে। নতুন বছরে পাট কিনতে মিলঘাটসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাট ক্রয় কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

কিন্তু বিপুল পরিমাণ দেনা নিয়ে মিলগুলোর পক্ষে নতুন করে পাট কেনা দুরূহ হয়ে পড়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিলগুলোতে পাটের মজুদ ছিল ৯৪ হাজার ৪৪১ কুইন্টাল। যা দিয়ে মিলগুলো অল্পকিছু দিন চালু রাখা সম্ভব। তবে বেশিরভাগ মিলে মজুদ শূন্যের কোঠায় এবং কিছু কিছু মিলে মান ও গ্রেড অনুযায়ী পাট মজুদ না থাকায় উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

পাটের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতিদিন গড় উৎপাদন ছিল ৪৭১ দশমিক ২৪ টন। কিন্তু ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে গড় উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে ২৪৭ দশমিক ৭২ টন।

পাট কলগুলোর গড় উৎপাদনক্ষমতা রয়েছে ৬২৩ দশমিক ২২ টন। মিলগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী পাটের মজুদ না থাকায় শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। একই সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধও দুরূহ হয়ে পড়েছে। এতে মিলে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান রোববার বলেন, পাটের অভাবে সরকারি ২২টি পাটকলের উৎপাদন কমে গেছে। চলতি মৌসুমে পাট কিনতে না পারলে এসব মিল বন্ধ হয়ে যাবে। পাটকলগুলোর ব্যাংক দেনা রয়েছে ৮৩২ কোটি টাকা। পাট কেনার বকেয়া রয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন রয়েছে কয়েক’শ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ দেনা নিয়ে নতুন করে পাট কেনা সম্ভব নয়। তাই পাট কেনার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগের কাছে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি।

আশা করছি তারা সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অর্থ বরাদ্দ দেবে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া মজুরিসহ বিজেএমসির বর্তমান দায়দেনার পরিমাণ এক হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সরকারি ২৬টি পাটকল বিজেএমসির অধীনে পরিচালিত হয়।

এগুলোর মধ্যে ঢাকায় আছে সাতটি, চট্টগ্রামে ১০টি এবং খুলনায় ৯টি। এর মধ্যে বর্তমানে ২২টি মিল চালু রয়েছে। এসব পাটকলে মোট কর্মচারীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৬৫ জন। - যুগান্তর

Post a Comment

Previous Post Next Post