বড়লেখায় সাপের কামড়ে মৃত ছাত্রীকে বাঁচাতে চলছে ঝাড়ফুঁক


অনলাইন ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় সাপের কামড়ে শিবানী রানী দাস (২৫) নামের এক কলেজছাত্রীকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করলেও সোমবার রাত থেকে তাকে জীবিত করতে চলছে ওঝাদের ঝাড়ফুঁক।

এ ঘটনায় শিবানীর বাড়িতে হাজার হাজার উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছেন।

রোববার রাতে নিজ বাড়িতে সাপের কামড়ে আহত হন শিবানী দাস। ওই রাতেই আহত অবস্থায় শিবানীকে সিলেট ওসামনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন সোমবার সকাল ৮টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শিবানী উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের মনোরঞ্জন দাসের মেয়ে। তিনি সিলেট এমসি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী এবং স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতাও করতেন।

সোমবার বিকালে শিবানীর লাশ বাড়িতে নেয়া হয়। সাপের কামড়ে কলেজছাত্রীর মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। খবর পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ওঝারা জড়ো হন ওই বাড়িতে। রাতেই ওঝারা শুরু করে ঝাড়ফুঁক।

এ খবর পেয়ে লোকজন ভিড় করেন ওই বাড়িতে। ভিড় সামলাতে শেষ পর্যন্ত পুলিশে খবর দেয়া হয়। বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিড় সামাল দেন।

নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাতে ঘরের বাইরে বের হন শিবানী দাস ও তার ছোট বোন। অন্ধকারের মাঝে হঠাৎ কিছু একটা শিবানীর পায়ে কামড় দেয়। এরপর তার ছোট বোন ঘরে গিয়ে লাইট জ্বালায়। তখন একটি সাপ তাদের ঘরে প্রবেশ করতে দেখেন। তাৎক্ষণিক সাপে কামড় দিয়েছে বুঝতে পেরে চিৎকার দেন দুই বোন।

তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে প্রথমে শিবানী দাসকে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সরেজমিনে মঙ্গলবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৃত শিবানীকে সুস্থ করার আশ্বাসে সোফায় বসিয়ে তন্ত্রমন্ত্র পড়ছেন ওঝা। আর দূর-দূরান্ত থেকে এ দৃশ্য দেখার জন্য গাড়ি করে লোকজন আসছেন শিবানীদের বাড়িতে।

লোকজনের ভিড় সামাল দিতে সেখানে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন ও ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বাহার গ্রামপুলিশ নিয়ে লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই লোকজনের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

নিহত শিবানীর দাদা প্রনথ চন্দ্র দাস বলেন, ‘ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেছে। কিন্তু স্বজনদের মন। ঝাড়ফুঁকেও যদি মেয়েটা আবার দেহে প্রাণ ফিরে পায়। লোকজন বলছে ওঝা ঝাড়ফুঁক দিলে নাকি সুস্থ হতে পারে। বালাগঞ্জ ও বিশ্বম্ভবরপুর থেকে ওঝারা এসেছেন। তাই চেষ্টা করা হচ্ছে।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন জানান, ‘সোমবার রাতেই খবর পেয়ে ওই বাড়িতে যান। হাজার হাজার লোকজন আসতেছে। আমি রাতে পুলিশকে জানাই। পুলিশও আসে। মঙ্গলবার নিজে গ্রামপুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে রয়েছি। যাতে লোকজনের ভিড়ে কোনো ঝামেলা না ঘটে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post