অনলাইন ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যযুদ্ধ প্রায় বেঁধেই গেল। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রতিশোধ নিতে কয়েক হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে আমদানি শুল্ক বসানোর জন্য যে ঘোষণা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দিয়েছিল, গতকাল শুক্রবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে হুইস্কি থেকে শুরু করে আছে মোটরসাইকেল ও কমলার জুসও।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লদ জাংকার বলেছেন, অন্যান্য দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ‘যুক্তি ও ইতিহাসের পরিপন্থী’। আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে তিনি আরো বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বার্থ সুরক্ষায় যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব।’ ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লা মায়ার বলেছেন, ‘মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ ছিল ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের অবধারিত পরিণতি।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, কানাডাসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ বাণিজ্য বিরোধের সূত্রপাত গত মার্চে। ওই সময় ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানীকৃত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যথাক্রমে ২৫ ও ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেয়। জবাবে মার্কিন পণ্যেও পাল্টা শুল্ক বসানোর হুমকি দেয় আক্রান্ত দেশগুলো।
ভারত এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানীকৃত কৃষি যন্ত্রপাতি, ইস্পাত, লোহাসহ ২৯টি পণ্যে অতিরিক্তি শুল্ক আরোপ করবে। ভারতের এ সিদ্ধান্ত ৪ আগস্ট কার্যকর হওয়ার কথা। দক্ষিণ কোরিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলও একমত হয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে এখন থেকে সীমিত পরিমাণে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি করবে।
কানাডা ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে তারা আগামী ১ জুলাই থেকে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। মেক্সিকো অবশ্য সপ্তাহ দুয়েক আগেই ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসিয়েছে।
সপ্তাহখানেক আগে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বাণিজ্য নিয়ে অন্যায্য কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। চীন ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি প্রতিশোধ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে। ট্রাম্পের বিশ্বাস হলো, কোনো দেশের বাণিজ্য ঘাটতি থাকলে, কিংবা রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হলে সে দেশ পরাজিত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার। মূলত এ ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যেই ট্রাম্প নতুন শুল্কনীতি গ্রহণ করেছেন।
গতকাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেসব মার্কিন পণ্যে আমদানি শুল্ক বসিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে তামাকজাত পণ্য, হার্লি ডেভিডসন মোটরসাইকেল, ক্র্যানবেরি, চীনাবাদাম থেকে তৈরি খাদ্য। এসব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। জুতা, বেশ কিছু কাপড় ও হুইস্কির মতো কয়েকটি পণ্যে শুল্ক বসানো হয়েছে ৫০ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৩৩০ কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে এ শুল্ক বসবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেছে বেছে এমন সব পণ্যে শুল্ক বসিয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ রয়েছে। যেমন—যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি হুইস্কি তৈরি হয় কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে। ওই অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বলা হচ্ছে, সেখানে এখন রিপাবলিকানরা হুইস্কি উৎপাদনকারীদের তোপের মুখে পড়বে। আবার মার্কিন নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের। সেখানকার মূল রপ্তানি পণ্য হলো কমলার জুস। এই জুসের ওপরও শুল্ক বসিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সূত্র : বিবিসি।