অনলাইন ডেস্কঃ ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন সম্মেলনে অংশ নিতে ৫৮ দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ৩৮ দেশের মন্ত্রী, ৮ পররাষ্ট্র সচিবসহ কাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্বর নির্যাতনে বাস্তুচ্যুতদের অবস্থা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, সচিব ও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের একসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের এটাই হতে যাচ্ছে সবচেয়ে বড় আয়োজন। ওই দলে হোস্ট কান্ট্রিসহ ৫৭ মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসি’র প্রতিনিধিরা ছাড়াও নন-ওআইসি কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশের বিশেষ আমন্ত্রণে আসা কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রয়েছেন। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের বাসিন্দাদের অবস্থা সরজমিন দেখবেন। বর্মী বর্বরতার শিকার নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কথা বলবেন।
ভিকটিম এবং ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের মুখ থেকেই তারা শুনবেন বর্বরতার লোমহর্ষক কাহিনী।
মতবিনিময় হবে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উন্নয়ন কর্মীদের সঙ্গে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা ভিনদেশি অতিথিদের সঙ্গ দেবেন। যুগ যুগ ধরে রাখাইনে বর্বরতার শিকার রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল চেষ্টায় এবার নিরীহ নারী-পুরুষ ও নিষ্পাপ শিশুদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসররা যেভাবে বাছ-বিচারহীনভাবে গণহত্যা, গুলি ও গণধর্ষণের মতো আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে ৩-৪ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এখানে আশ্রয় নিলেও গত ২৫শে আগস্টের পর থেকে ৩ মাসে এসেছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। এখনো তাদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে। যদিও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় ফেরাতে গত ডিসেম্বরেই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করেছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ ধরে রাখতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গেও কাজ করছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, গেল সপ্তাহেই বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা। স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্যের দূতসহ ৪০ সদস্যের প্রতিনিধিদল কঙবাজার ঘুরেছেন। তারা ক্যাম্প এবং নো-ম্যান্সল্যান্ডে থাকা আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মুখে তাদের ওপর বয়ে যাওয়া বর্মী বর্বরতার ঘটনাগুলো শুনেছেন। নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিদলের নজিরবিহীন এ সফরকে ঢাকাইয়া কূটনীতির বড় অর্জন হিসেবে দেখা হলেও পূঞ্জীভূত রোহিঙ্গা সংকটের চটজলদি বা দ্রুত কোনো সমাধান যে আসছে না সেটি খোদ নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিরাই স্পষ্ট করে গেছেন। তাদের মতে, এ সংকটের ‘ম্যাজিক সলিউশন’ বা জাদুকরী কোনো সমাধান নেই। বহুপক্ষীয় উদ্যোগের চেয়ে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নেই জোর দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। বাংলাদেশ অবশ্য দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও জোরালো পদক্ষেপ চেয়েছে। তাতে পশ্চিমা দুনিয়া তো আছেই- চীন, রাশিয়া, ভারত ও জাপানের আরো ভূমিকা প্রত্যাশা করে ঢাকা।
ওআইসি’র ঢাকা সম্মেলনে রোহিঙ্গা বিষয়ই হবে মুখ্য আলোচ্য: এদিকে ঢাকায় আগামী শনিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন। দুইদিনের মেগা ওই ইভেন্টে রোহিঙ্গা সংকটই হবে মুখ্য আলোচ্য- এমনটাই নিশ্চিত করেছেন প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকরা। তারা বলছেন, মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় জোট ওআইসির ৫৭ সদস্য-রাষ্ট্রের প্রতিনিধিই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ আমন্ত্রণে ওআইসি সদস্য নয় অন্তত ৩টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, একটি দেশের উপ বা প্রতিমন্ত্রী এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ঢাকা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ওআইসি নন-ওআইসি মিলে ২৭ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, একজন বিচার বিভাগীয় মন্ত্রী এবং ১০ জন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধির (মোট ৩৮টি দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধির সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। সচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আসছে ২০টি দেশ থেকে। আমন্ত্রণ রয়েছে কিন্তু এখনো প্রতিনিধিদলের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি এমন দেশও রয়েছে। তবে তাদের পক্ষে কেউ না কেউ অংশ নেবে বলে আশা করছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সামপ্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় এ আয়োজনের প্রস্তুতির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করবেন। তিনি অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিসহ প্রস্তুতির সর্বশেষ আপডেট জানাবেন। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার ৫৬১ জনের ডেলিগেশন লিস্ট চূড়ান্ত (আমন্ত্রিত তবে বেশির ভাগের অংশগ্রহণ চূড়ান্ত) করা হয়েছে।
