চুড়ুই পাখি ও তার ছানার গল্প

ডা. মো. সাঈদ এনামঃ এক ছিলো চুড়ুইছানা। তার কোন কাজ ছিলোনা, কেবল দিনে দুই ঘন্টা স্কুলে গিয়ে খেলাধুলা করা আর সারাদিন মায়ের সাথে রান্না ঘরে টুং টাং করা। একদিন সকালে অসময়ে টক টক করে কে যেনো তাদের ঘরের দরজা নাড়লো। চুড়ুইছানার মা ঘরের দরজা খুলে দেখলেন এক ভিখারিনী  চুড়ুই এসেছে সাহায্যের জন্যে। সে ছিলো খুবই বৃদ্ধ। এ দুনিয়ায় তার কেউ নেই। চুড়ুইছানার মা তাকে সাহায্য দিলো। যাবার সময় সেই বৃদ্ধ ভিখারিনী বললো, আমি খুব ক্ষুধার্ত সকাল থেকে কিছু খাইনি"। 

চুড়ুই পাখি তখন কেবল রান্না চুলায় বসিয়েছে। তার দয়া হলো। কিছু বিস্কিট নিয়ে এসে সে দরজা খুলে দেখলো ভিখারিনী চুড়ুই পাখিটি চলে গেছে। তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

চুড়ুইছানা কিছুক্ষণ পর হঠাৎ এসে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ দেখে জিগ্যেস করলো, মা তোমার মন খারাপ? তিনি তাকে বললেন ঘটনাটা। ভিখিরিনী চুড়ুই বিস্কিট না খেয়েই চলে গেছে।

চুপে চুপে কাউকে কিছু না বলে চুড়ুইছানা উড়াল দিয়ে গিয়ে সেই বৃদ্ধা ভিখিরিনী চুড়ুই কে খুজতে লাগলো। সে কেবল মাত্র উড়াল দেয়া শিখছে। কিছুদূর গিয়েই সে ভিখারিনী চুড়ুই কে পেয়ে গেলো এবং বললো, "আমার আম্মু বিস্কিট নিয়ে এসে দেখে তুমি নেই। আমি এসেছি তোমাকে নিয়ে যেতে"। চুড়ুইছানা ভিখারিনী  চুড়ুইকে রাস্তা থেকে ধরে ধরে নিয়ে আসলো। 

চুড়ুইছানার এমন কান্ড দেখে মা চুড়ুই পাখি খুশি হলেন আবার ভয়ও পেলেন। কারন সবে সে উড়াল দিতে শিখেছে। এভাবে কাউকে না তার বাইরে যাওয়া ঠিক হয়নি। কিন্তু তিনি তাকে কিছু বললেন না। 

চুড়ুইছানা বৃদ্ধ ভিখারিনী চুড়ুই কে একটি টুল দিয়ে বসিয়ে বিস্কিট দিলো তারপর পানির গ্লাস তুলে  দিলো। ভিখারি খুব খুশি হয়ে বিস্কিট ও পানি খেলো তারপর বললো, "অনেকদিন পর বিস্কিট খেলাম। খুব ভালো লাগলো। ইস যদি এক কাপ চা দিয়ে বিস্কিট টা খেতে পার‍তাম, তবে কিনা মজা লাগতো। অনেক দিন চা ও খাইনা"। 
যাবার সময় সে ছুড়ুইছানার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "তুমি খুব ভালো"।
চুড়ুইছানা বললো, "তুমি দাঁড়াও, যেওনা, আমি তোমায় চা দিবো"। ভিখারিনী বললো, "তাহলে দাও"।

রান্না ঘরে ফিরে গিয়ে চুড়ুইছানা তার মাকে বললো, "আম্মু এক কাপ চা দিতে পারবেন"। চুড়ুইছানার মা বললেন, "কেনো"?
ছানা বললো, "ভিখারিনী চুড়ুই বলেছে সে অনেকদিন চা খায়নি। আজ বিস্কিট খেয়ে তার খুব চা খাবার ইচ্ছা করছে। চা দিয়ে বিস্কিট নাকি সে কখনো খায়নি"। 

মা চুড়ুই বললেন, "আমিতো কাজ করছি সোনা, তাছাড়া চুলোতো রান্না বসানো মা। তাকে যেয়ে বলো আরেকদিন আমরা তাকে চা খাওয়াবো"। 
ছানা বায়না ধরলো, "আম্মু ওর খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে, আমি না হয়  বানিয়ে খাওয়াবো, আমাকে দেখিয়ে দাও"। 
মা বললেন, "ঠিক আছে ঠিক আছে থাক, তুমি পারবেনা সোনা। আমিই বানিয়ে দিচ্ছি"।

চা নিয়ে এসে চুড়ুইছানা বৃদ্ধ ভিখারিনী কে দিলো। ভিখারিনী খুব খুশি হলো। এমন খুশি যে তার দু চোখ বেয়ে জল তর তর করে ঝরতে লাগলো। সে চোখের জল মুছে মজা করে চা খেতে লাগলো। যাবার সময় চুড়ুইছানার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "আল্লাহ তোমায় অনেক বড় করুক মা, অনেক বড়"।

রাতে চুড়ুইছানার মা সেই ঘটনাটি তার চুড়ুইছানার বাবাকে বললেন। চুড়ুইছানা খুব ভয় পেলো। বাবা কি জানি কি বলেন। বাবা সেটা শুনে চুড়ুইছানাকে ডেকে কাছে বসালেন। তারপর বললেন, 

"মা আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, তোমার মতো উড়াল দেয়া শিখিনি, তখন একদিন উড়তে যেয়ে দেখি রাস্তার পানিতে কাদার মধ্যে কয়েকটি বিড়ালছানা পড়ে আছে আর খালি তাদের মা কে ডাকছে। কেউ তাদের খেয়াল করছেনা। আমি তখন ঐ  বিড়াল ছানা কে বাসায় নিয়ে আসলাম। কিন্তু ভয়ে কাউকে কিছু বললাম না। 

একটু পর আমার আম্মুকে গিয়ে বললাম, "আম্মু এক গ্লাস দুধ খাবো। খিদে পেয়েছে"। আম্মু বললেন, তুমিতো সোনাবাবু দুধ খাওনা। আজ কেমন লক্ষী হলে"। তারপর আমাকে তিনি দুধ দিলেন। 

আমি লুকিয়ে সেই দুধ বিড়ালছানা গুলো কে খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম। পরদিন সকালে আবার আম্মুকে বললাম, "আম্মু দুধ খাবো, এক গ্লাস দুধ দাও"। 

আমি আবার লুকিয়ে লুকিয়ে সেই দুধ বিড়াল ছানাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম।

বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখি আম্মু আমার জন্যে এক বোতল দুধ তুলে রেখেছেন। সেই বোতলের মাথায় আবার ছোট একটা ফিডার লাগানো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। 

আম্মু হেসে বললেন, "যাও খাইয়ে আসো। ওরাতো ছোট ছানা। ফিডার ছাড়া খেতে পারবেনা"।

রাত্রে তিনি ঘটনাটা আব্বু কে বললেন। আমি ভয় পেলাম একটু। আব্বু কিনা কি বলেন। 
আব্বু আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, "খুবই ভালো কাজ করেছো বাবা। তুমি অনেক বড় হবে। জীবে দয়া করতে হয়"।

তিনি আরো বললেন, "শোন বাবা পৃথিবীর মানবজাতির পথ প্রদর্শন এর জন্যে আমাদের সবার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়লা তাদের নিকট একজন নবী পাঠিয়েছিলেন। সেই নবী খুব দয়ালু ছিলেন। একদিন সেই নবী তার ঘরে খাটে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকালে তার ঘুম ভাঙলে দেখলেন একটি বিড়াল ছানা তার গায়ের চাদরের একপাশে শুয়ে আছে। তিনি সেই বিড়াল ছানাকে জাগালেন না। চাদরটা রেখেই আলতো করে উঠলেন যাতে ছানাটির ঘুম ভেংগে না যায়। তিনি ছিলেন মানব জাতির সকল নবীদের শ্রেষ্ঠ"।

লেখকঃ ডা. মো. সাঈদ এনাম, সাইকিয়াট্রিস্ট

Post a Comment

Previous Post Next Post