আর এই ভুল করবেন না স্মিথ

স্পোর্টস ডেস্কঃ আবেগ থাকবে না কেন তাঁদের? রয়েছে। তবে সেই আবেগ নিয়ন্ত্রণের সুনামও রয়েছে অস্ট্রেলিয়ানদের। স্টিভেন স্মিথ ওই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাই করেছিলেন। বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে নিষেধাজ্ঞার বোঝা নিয়ে দেশে ফেরার পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার পরও। কিন্তু কতক্ষণ আর! আবেগের অর্গল খুলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্মিথ।

বল টেম্পারিং বিতর্কে আইসিসি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ককে নিষিদ্ধ করেছিল এক ম্যাচ। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিষেধাজ্ঞা এক বছরের। প্রত্যাবর্তনের পরের এক বছরও বিবেচিত হবেন না অধিনায়কত্ব, সহ-অধিনায়কত্বের জন্য। কেলেঙ্কারির এই বোঝা মাথায় নিয়ে কাল সিডনিতে ফিরেছেন স্মিথ। ফিরে বিমানবন্দরেই গণমাধ্যমের সামনে দিয়েছেন বিবৃতি। এরপর দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর পর্ব। সেখানে কৃতকর্মের জন্য কান্নায় ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি বারবারই ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন স্মিথ।

‘সব সতীর্থ, বিশ্বজোড়া সব ক্রিকেটভক্ত এবং সব অস্ট্রেলিয়ান যারা হতাশ ও ক্রুদ্ধ, তাদের বলছি যে, আমি দুঃখিত। কেপ টাউনে যা হয়েছে, তা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে সবার সামনে তুলে ধরেছে। আজ রাতে আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে এই ঘটনার পুরো দায় আমি নিচ্ছি। আমি ভয়ংকর এক ভুল করেছি এবং এখন বুঝতে পারছি এর পরিণতি। এটি ছিল আমার নেতৃত্বের ব্যর্থতা। এই ভুল এবং তা থেকে যে ক্ষতি হয়েছে—তা সামলে উঠতে সম্ভাব্য সব কিছুই করব আমি’—বলেছেন স্বর্গ থেকে পতিত এই তারকা। সময়ের হাত ধরে ভবিষ্যতে সবার কাছ থেকে ক্ষমা পাবেন বলে আশাবাদী স্মিথ, ‘জানি যে, জীবনের বাকিটা সময় এই ভুলের জন্য আমি অনুতাপ করব। আমি চূড়ান্ত রকমের বিধ্বস্ত। আশা করব, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি হারানো সম্মান ফিরে পাব। পাব সবার ক্ষমা। নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা এবং অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হওয়াটা আমার জন্য ভীষণ সম্মানের। আর ক্রিকেট তো বিশ্বের সেরা খেলা। এটি আমার জীবন; আশা করব ভবিষ্যতে তা আবারও জীবন হয়ে উঠবে। আমি দুঃখিত। আমি চূড়ান্ত রকমের বিধ্বস্ত।’

আইসিসি, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার শাস্তির বাইরেও অনেক শাস্তি। আইপিএল থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন; অনেক ব্যক্তিগত স্পন্সরও চলে গেছে। তবে স্মিথকে সবচেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে হয়তো কিশোর-তরুণদের আদর্শ হয়েও এমন প্রতারণা করার ব্যাপারটি। যে শিশু-কিশোররা তাঁকে আদর্শ মানতেন, তাদের কী বলবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে পাওয়া যায় এর প্রতিফলন, ‘প্রথমত আমি গভীরভাবে দুঃখিত। ক্রিকেট খেলাকে আমি ভালোবাসি। ছোট ছোট বাচ্চাদের আনন্দ দিতে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার খেলাটি ওরা খেলুক, সেটিই চাই। যেকোনো প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ভাবা উচিত, এটি কাদের প্রভাবিত করতে পারে। মা-বাবার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আমার মা-বাবার কথা ভাবাটাও এখন বেদনাদায়ক। আমি শুধু বলতে চাই, অস্ট্রেলিয়া, এর সমর্থক এবং জনতার জন্য যে ব্যথা আমি দিয়েছি, সে জন্য দুঃখিত। এটি আমাকে ভেঙেচুরে দিচ্ছে এবং আমি সত্যিই দুঃখিত।’

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই কড়া অবস্থানের সূত্র ধরে উঠে আসছে আরো নানা প্রশ্ন। বল টেম্পারিং কি এবারই প্রথম হলো? স্মিথ অন্তত অন্য কিছু স্বীকার করেননি, ‘আমার জানামতে এমনটি আগে কখনো হয়নি। এই প্রথমবারের মতো হলো এবং আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না।’ ঘটনার মূল পরিকল্পনা যে ডেভিড ওয়ার্নারের এ নিয়েও তাঁকে দোষ দেননি। বরং পুরো দোষ নিয়েছেন নিজেই, ‘আমি কাউকে দোষ দেব না। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক আমি। কেপ টাউনে গত শনিবার যা হয়েছে, এর পুরো দায়দায়িত্বই আমার। আমার পক্ষ থেকে মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে। এবং সে জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এ বিষয়ে একই কথা ক্যামেরন ব্যানক্রফটেরও। পার্থ বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে স্মিথের মতো কান্নায় ভেঙে পড়েননি এই ব্যাটসম্যান। তবে কণ্ঠটি ছিল কাঁপা কাঁপা। ওয়ার্নারের প্রশ্নে অধিনায়কের মতোই অবস্থান তাঁর, ‘অন্যদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করার জন্য আমি আপনাদের মুখোমুখি হইনি। সবাইকে শুধু দেখাতে চাই, কতটা দুঃখিত আমি। শেষ পর্যন্ত তো কাজটি আমি করেছি এবং এর দায়ও আমাকে নিতে হবে। বল টেম্পারিংয়ের সঙ্গে আমি আগে কখনো যুক্ত ছিলাম না। একজন খেলোয়াড় ও ব্যক্তি হিসেবে এটি আমার নৈতিকতাপরিপন্থী।’ স্মিথের মতো ভবিষ্যতে ক্ষমা পাবেন বলে আশায় আছে ব্যানক্রফটও, ‘জীবনের বাকিটা সময় আমি এই ঘটনার জন্য অনুতাপ করব। সবার কাছে আমি ক্ষমা চাই। বুঝতে পারছি যে, সব অস্ট্রেলিয়ানের মাথা নিচু করে দিয়েছি। আর সে জন্য আমি মোটেও গর্বিত নই। এই ক্ষত শুকাতে এবং সবার ক্ষমা পেতে নিশ্চিতভাবেই সময় লাগবে।’

অস্ট্রেলিয়ায় ফেরা ওয়ার্নার এ দুজনের মতো সরাসরি কথা বলেননি গণমাধ্যমের সঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামের লেখায় অবশ্য নিজের দায় স্বীকার করেছেন তিনিও, ‘এমন এক ভুল হয়েছে যা ক্রিকেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ওখানে সম্পৃক্ততার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি আর ঘটনার দায়ও মেনে নিচ্ছি।’

দায় মেনে নিয়েছেন তিন অপরাধীই। কিন্তু এর জের যে আরো কত দিন টানতে হয় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে! এএফপি

Post a Comment

Previous Post Next Post