সাইফুল ইসলাম সুমন: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় আট মাস আগে। কিন্তু জমি নিয়ে আইনি জটিলতার কারণে হাসপাতালটি আজও চালু করা যায়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগ, ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয় ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২০০৭-০৮ অর্থবছরে জুড়ী-বড়লেখা সড়কের এক পাশে পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর এলাকায় পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৪ সালের আগস্টে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঢাকার এস আলী অ্যান্ড সন্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ পায়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণকাজ শুরুর পর অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের একজন আবদুল মান্নানের ছেলে শওকত আলী উচ্চ আদালতে মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, অধিগ্রহণের বাইরে থাকা বেশ কিছু জমিও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানার ভেতরে চলে গেছে। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলেও শওকত আলী আপিল করেন। সেটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যেই গত বছরের ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
মামলার বাদী শওকত আলী বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য তাঁদের কাছ থেকে ৩ একর ৩৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরুর সময় তাঁদের আরও প্রায় ১৮ শতক জমি দখল হয়। তখন আপত্তি দিলেও ঠিকাদারের লোকজন তা মানেননি। এ কারণে তাঁরা আদালতের শরণাপন্ন হন।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সব কাজ শেষ হয়েছে। সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছে হাসপাতালটি। তবে সীমানাপ্রাচীরের ভেতরেই টিন-বাঁশের তৈরি একটি পুরোনো বসতঘর রয়েছে। বাড়িতেই ছিলেন শওকত আলী, তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যরা। কমপ্লেক্সটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকেও ভেতরে পাওয়া গেল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক তাহের আলী বলেন, তাঁরা কেবল নির্মাণকাজ করেছেন। সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি প্রশাসনের কাজ। তারা যে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সে অনুযায়ীই ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ করা হয়েছে। এদিকে সমস্যাটি স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য জাতীয় সংসদের হুইপ ও মৌলভীবাজার-১ আসনের সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি গত জুন মাসের প্রথম দিকে শওকতকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এ সময় হুইপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ১৮ শতকের একটি খাসজমি দেওয়ার কথা বলে শওকতকে ওই বসতভিটা ছাড়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু জমিটি নিচু ও জলমগ্ন হওয়ায় শওকত সেই প্রস্তাব মানেননি।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তাঁরা জেলা প্রশাসনকে বেশ আগে একটি চিঠি দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, শওকত আলীর পরিবারের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে আপসের চেষ্টা চলছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।