হিফজুর রহমান তুহিনঃ গত শুক্রবার (৩ জুন) দিবাগত রাতের টানা ভারী বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে তিনটি স্থান ভাঙ্গনে উপজেলার একটি পৌরসভাও ৬টি ইউনিয়নের ৫০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। নতুন করে প্লাবনে একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নের রোপিত সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমির আউশ ফসল তলিয়ে গেছে। রোববার বেলা দুইটার পর থেকে কমলগঞ্জের উপরাংশের প্লাবনের পানি নামতে শুরু করায় চারটি ইউনিয়নের অবস্থা আরও অবনতি হয়েছে।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কমলগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আলেপুর গ্রামে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে পৌরসভার চারটি গ্রামসহ আরও চারটি ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও শুক্রবার সারা রাতের টানা ভারী বৃষ্টিতে আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, নাজাতকোণা, দক্ষিণ তিলকপুর গ্রাম এলাকায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কমলগঞ্জ পৌরসভার আলেপুর, শ্রীচন্দ্রপুর, গোবর্দ্ধনপুর, শ্রীনাথপুর, নছরতপুর, কুশালপুর, উত্তর আলেপুর, চন্ডিপুর গ্রামের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়। আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, হোমেরজান, নাজাতকোণা, দক্ষিণ তিলকপুর, মঙ্গলপুর, আলীনগর ইউনিয়নের কামুদপুর, আলীনগর বস্তি, জালালিয়া, শমশেরনগর ইউনিয়নের বড়চেগ, ঈদগাহ টিলা, শিংরাউলী, কৃষ্ণপুর, হাজীনগর, সতিঝির গাঁও, রাধানগর, মরাজানের পার ও পতনউষার ইউনিয়নের ধোপাটিলা, শ্রীসূর্য, হালাবদি, গোপীনগর, পতনউষার, চন্দ্রপুর, মহেশপুর, রসিদ পুর,বৈদ্যনাথপুর, রাধাগোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণউষার গ্রাম প্লাবিত হয়।
মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে ২৩ গ্রাম যথাক্রমে রুপশপুর, পরানধর, হরিশ্মরণ, পালগাঁও, মির্জানগর, ধীতেশ্বর ভূমিগ্রাম, বিক্রম কলস, সরিষকান্দি, রায়নগর, বনবিষ্ণুপুর, নারায়নক্ষেত্র, রামচ›ন্দ্রপুর, বাদে সোনাপুর, মইডাইল, সুরানন্দপুর, জালালপুর, বাসুদেবপুর, করিমপুর, উবাহাটা, কুশালপুর ও ধাতাইল গাঁও-এর বসতবাড়ি ফসলি জমি প্লাবিত হয়। এদিকে মাধবপুর ইউনিয়নের ছয়সিড়ি, বাঘাছড়া, ঝাপেরগাঁও, মাধবপুর বাজার প্লাবিত হয়।
ইসলাপুর ইউনিয়নের মকাবিলে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গার আশঙ্কা দেখা দিলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা কাজ করে বাঁধটিকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করেন। ধলাই নদী ও লাঘাটা ছড়া ছাড়াও শমশেরনগরে ধামালিছড়া, মাধবপুরে সুন্দরবন ছড়া, আদমপুরের লাউয়াছড়াসহ সবগুলি পাহাড়ি ছড়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলি জমি নিমজ্জিত করেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন আহমদ বলেন, এবার ধলাই প্রতিরক্ষার বাঁধের তিনটি নতুন ভাঙ্গনে উপজেলার সর্বত্রই রোপিত আউশ ফসল তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ফসল রোপন করা হয়েছিল। ২/১ দিনের মধ্যে প্লাবনের পানি না নামলে পুরো সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমির রোপিত আউশ ফসল বিন্ষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনও মাঠ পর্যায়ে পরিসংখ্যান চলছে। তারপর ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য দেওয়া যাবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন করে তিনটি ভাঙ্গনে একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার সারা রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নিম্নাঞ্চলে অবস্থার অবনতির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা প্রশাসন এ দিকে সার্বিক নজরদারী করেছে।