বিশেষ প্রতিনিধিঃ তিন দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় গোগালিছড়া নদীর বাঁধ ভেঙে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব এলাকার তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং ১৫০ একর জমির আউশ ধান তলিয়ে গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তা চলে। এতে পাহাড়ি ঢলে গতকাল সকালে গোগালিছড়া নদীর বাঁধের জয়চণ্ডীর গাজীপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার কাছে একটি, কুলাউড়া রেঞ্জ কার্যালয়ের সামনে একটি এবং গাজীপুর জামে মসজিদের কাছে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ভাঙনকবলিত স্থান দিয়ে পানি ঢুকে গাজীপুরসহ আশপাশের রাজাপুর, পুরন্দরপুর, কুটাগাঁও ও মীরবক্সপুর এবং কুলাউড়া পৌর শহরের লস্করপুর গ্রামের কিছু জায়গা তলিয়ে যায়।
সরেজমিনে দুপুর ১২টার দিকে দেখা গেছে, ভাঙনকবলিত চারটি স্থান দিয়ে প্রবলবেগে পানি ঢুকছে। বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় লোকজন ঘরের নিচে থাকা মালপত্র খাটের ওপরে তুলে রেখেছেন।
গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মিয়া বলেন, ‘চাইর (চার) দিন আগে ১০ কিয়ার জমিনো হালিচারা লাগাইছিলাম। অখন সব জমি পানির নিচে।’
বকুল সূত্রধর বলেন, ‘ঘরো আটুপানি (হাঁটুপানি)। বিপদে আছি, কই যাইতাম।’
একই গ্রামের বাসিন্দা রাজীব হাসান চৌধুরী বলেন, হাসান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গাজীপুর মাদ্রাসার কাছে বাঁধের ওপর দিয়ে ৭৫০ মিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করার কাজ পায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই কাজ করাচ্ছে। বালু ফেলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চার মাস আগে রাস্তা কেটে গর্ত করে রাখে। তাঁর অভিযোগ, দ্রুত বালু না ফেলায় পাহাড়ি ঢলে বাঁধ দুর্বল হয়ে ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক মুহিবুর রহমান জয়নাল দাবি করেন, বালুর সংকটের কারণে তিনি রাস্তায় কাজ করাতে পারেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী মুহা. ইসতিয়াক হাসান বলেন, বালুর সংকটের বিষয়টি ঠিকাদারও তাঁকে জানিয়েছিলেন। তবুও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
জয়চণ্ডী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রমজান আলী বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাঁর এলাকার তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী মুঠোফোনে বলেন, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসনের কাছে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ চাওয়া হবে।