অতিবৃষ্টিতে সিলেটে চা উৎপাদন কমেছে ৩০ শতাংশ

অনলাইন ডেস্কঃ সচরাচর কম বৃষ্টি ও খরার কারণে সিলেটে চা উৎপাদন ব্যাহত হয়। এবার দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। পানীয় পণ্যটির উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে অতিবৃষ্টি। টানা বৃষ্টিতে সপ্তাহ ধরে এখানকার বাগানগুলোয় চা পাতা উত্তোলন বন্ধ। রোদের অভাবে বাড়ছে না কুঁড়ি। এসব কারণে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সিলেটে চা উৎপাদন কমেছে ৩০ শতাংশ।

চা বোর্ডের তথ্যমতে, দেশের ১৬২টি চা বাগানের মধ্যে সিলেটে রয়েছে ১৩১টি। বাগানের ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরের মধ্যে চা চাষ হয় ৫৪ হাজার হেক্টরে। মার্চ থেকে শুরু হয় উৎপাদন। গত বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়। তবে এবার মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন কমছে।

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান জিএম শিবলী বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে বাগানগুলোয় চা উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ১ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সিলেটে ৮০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ বলেন, সিলেটে জুনে ৮১৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক। তবে জুনের বাকী কয়েকদিনে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

গোয়াইনঘাট উপজেলার শ্রীপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনসুর আহমদ চৌধুরী জানান, এখন চায়ের ভরা মৌসুম। অন্যান্য বছর এ সময় প্রতিদিন তিনবার পাতা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু এবার এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির কারণে আমাদের বাগানে একদিনও পাতা তুলতে পারিনি। চলতি মাসের শুরু থেকে পাতা উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী লালাখাল চা বাগানেরও একই অবস্থা জানিয়ে মনসুর আহমদ বলেন, এসব বাগানে উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।

তিনি বলেন, বৃষ্টি ছাড়া চা উৎপাদন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি অতিবৃষ্টি ক্ষতিকর। অতিবৃষ্টিতে সেকশনের উপরের মাটি ধুয়ে যায়। সূর্যালোকের অভাবে চায়ের কুঁড়ির বিকাশ ঘটে না। এছাড়া অতিরিক্ত তাপমাত্রাও চায়ের জন্য ক্ষতিকর। এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে।

সিলেটের মালনীছড়া, খাদিম ও লাক্কাতুরা চা বাগান ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। ব্যাপক বৃষ্টির কারণে বন্ধ রয়েছে পাতা উত্তোলন। আলোর অভাবে নতুন কুঁড়িও গজাচ্ছে না।

বাগানসংশ্লিষ্টরা জানান, চা উৎপাদনের জন্য বৃষ্টি প্রয়োজনীয় উপাদান। বর্ষা মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয়। অন্যান্য বছর বৃষ্টির অভাবে বাগানে পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দেয়। এতে ব্যাহত হয় উৎপাদন। এবার সিলেট অঞ্চলে উল্টো চিত্র। অতিবৃষ্টির কারণেই উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সিলেটের কয়েকটি বাগানের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছর এ সময় একজন শ্রমিক দৈনিক ৬০-৮০ কেজি পাতা সংগ্রহ করেন। এবার কেউ ১৫-১৬ কেজির বেশি পাতা সংগ্রহ করতে পারছেন না। কোনো কোনো বাগানে সংগ্রহ কার্যক্রম শূন্যে ঠেকেছে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রত্যেক চা বাগানে নিয়মমাফিক পানি নিষ্কাশন ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, এ বছর চা মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি পাওয়া যায়নি। পরে যে বৃষ্টি পাওয়া গেছে তা মাত্রাতিরিক্ত, যা উপকারের চেয়ে ক্ষতি করেছে বেশি। অত্যধিক বৃষ্টির কারণে পানি জমে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এছাড়া সূর্যালোক যদি কমে যায়, অর্থাৎ দীর্ঘক্ষণ মেঘলা আবহাওয়া থাকলে মশার উপদ্রব বাড়ে। মশা চায়ের নতুন কুঁড়ির জন্য বেশ ক্ষতিকর। সুত্রঃ সিলেট টুডে

Post a Comment

Previous Post Next Post