সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য প্রধানমন্ত্রীরও পছন্দ নয়

সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য প্রধানমন্ত্রীরও পছন্দ নয়
অনলাইন ডেস্কঃ সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপন করা ভাস্কর্য তাঁর পছন্দ হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি সরাতে প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এই ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী ওলামাদের সাথে এক বৈঠকেই এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। হেফাজতে ইসলাম, চরমোনাই পীরের দল ও আওয়ামী ওলামা লীগ নামের ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন এ ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।

মঙ্গলবার রাতে গণভবনে কওমি মাদ্রাসার আলেমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এই বৈঠকে কওমি মাদ্রাসাগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধি ও হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীও ছিলেন। বৈঠকে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে-ই-হাদিসকে স্নাতকোত্তর স্তরের মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলে একটি ভাস্কর্য কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন তার বিরোধিতায় নামে। হেফাজত এই ভাস্কর্য সরানোর দাবি জানিয়ে সরকারকে ৫ মে মতিঝিলে ফের সমাবেশের হুমকি দিয়ে আসছে। ওলামা লীগও তা অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল।

ভাস্কর্যটির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। বলা হচ্ছে এটা নাকি গ্রিক মূর্তি… আমাদের এখানে গ্রিক মূর্তি আসবে কেন? আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিৎ না।

“গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম। এখানে আবার দেখি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। এটাও হাস্যকর হয়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রধান বিচারপতির সঙ্গে খুব শিগগিরই বসব। আপনারা ধৈর্য ধরেন, এটা নিয়ে হৈ চৈ করা নয়। আমার উপর আপনারা এটুকু ভরসা রাখবেন। এটায় যা যা করা দরকার আমরা তা তা করব।”

প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে একমত হলেও তার দলের কয়েকজন নেতা হেফাজতের দাবির সমালোচনা করে আসছিলেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, “হেফাজত আজকে যেভাবে বলছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নয়, মনে হচ্ছে এটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র।”

এর আগে একাধিকবার হেফাজত ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে তা না সরালে সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিল। এ ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে ধর্মভিত্তিক এ সংগঠনটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার বরাবরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি স্মারকলিপি দেয়। চরমোনাই পীরের ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও আওয়ামী ওলামা লীগ সরকারের কাছে একই দাবি জানায়।

হেফাজতে ইসলাম, চরমোনাই পীরের ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও আওয়ামী ওলামা লীগের এমন ধারাবাহিক দাবির প্রেক্ষিতে এ ধরনের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছিলেন, ভাস্কর্য এবং মূর্তির পার্থক্য না বুঝে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।

'ভাস্কর্যটিতে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করা হয়েছে ন্যায়বিচারের সূচক হিসেবে। দণ্ড বা শাস্তির সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তলোয়ার। আর চোখ বাঁধা রাখা হয়েছে, এর অর্থ হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে। রোমান আইন থেকেই আমাদের বিচারের বিষয়ের উৎপত্তি। সেজন্যই অন্যান্য দেশের মতো এই ভাস্কর্য করা হয়েছে', মন্তব্য অ্যার্টনি জেনারেলের।

সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের সামনে গত ডিসেম্বর মাসে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন ভাস্কর মৃণাল হক। ডান হাতে নিচের দিকে করা একটি তলোয়ার আর বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দাঁড়ানো নারী। এই ভাস্কর্য স্থাপনের পর থেকেই বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন তা অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post